দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। নোনা ধরা দেওয়াল। দাঁত নখ বের করা বট অশ্বথের ঝুরি হিংস্রভাবে বেরিয়ে আছে চারপাশে। মরচে পড়া গ্রিল এমনভাবে ঝুলে আছে দেখলেই মনে হবে এই বুঝি ভেঙ্গে পড়লো। রাস্তা দিয়ে যে মানুষই যাচ্ছে ভয়ে একবার অন্তত বাড়িটির দিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখে নিচ্ছে।
বর্তমানে এই হেরিটেজ বাড়িটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
বংশ পরম্পরায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মী এখনও এই বাড়িতে বসবাস করেন। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
শুধুমাত্র পথচারী, নয় ক্রিক রো-র মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাড়ির যাত্রীরাও থাকেন আতঙ্কের মধ্যে। কে জানে, কখন মাথার উপরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে মান্ধাতার আমলের এই ভাঙাচোরা বাড়ি। মধ্য কলকাতার রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের (একসময়কার ওয়েলিংটন স্কোয়ার) লাগোয়া খোদ রাজা সুবোধ চন্দ্রের বাড়ির এখন এমনই দশা।
এই বাড়িটির অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে পুরসভা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে নোটিসও দিয়েছিল। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
বাড়িটি ভাঙ্গা নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলাও চলছে। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
এক ঝলক দেখলে মনে হবে এই বুঝি ভেঙ্গে পড়লো গোটা বাড়িটাই। কলকাতা পুরসভা অনেকদিন আগেই 'বিপজ্জনক বাড়ি' বলে বোর্ড ঝুলিয়েছে। এরপর বাড়িটির মামলা মোকদ্দমার চক্করেই কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর।
বর্তমানে এই ভগ্নপ্রায় বাড়িটির নিচে সন্তান-সন্ততি নিয়ে ঘর বেঁধেছেন এগারোটি পরিবার। সব মিলিয়ে ৮০-৯০ জন মানুষ তাঁদের জীবন ভাগ্য ছেড়ে দিয়েছেন ওপরওয়ালার হাতে।
এই বাড়ির ফুটপাথে ১১টি পরিবারের বাসস্থান রয়েছে। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
১৯০৭ সাল পর্যন্ত রাজা সুবোধ মল্লিকের এই বাড়িতে ঋষি অরবিন্দ অতিথি ছিলেন। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
১২ বছর ধরে বসবাসকারি মিনতি কথায়, বাড়িটা যে কোনও সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। বর্ষার সময় মাঝে মাঝে চাঙ্গড় ভেঙ্গে পড়লেও, উপায় কী? এই পরিস্থিতে ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
এখন এই বাড়ির দেওয়াল ফুঁড়ে বেড়িয়ে এসেছে অনেক গাছ। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
বাড়িটির এক পাশে সিনেমার পোস্টার ভাঙ্গা দেওয়ালের মুখ ঢাকছে। এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
মিনতি জানালেন, ‘‘অনেকে এসে দেখে গিয়েছে। প্রশাসন থেকে আমাদের বলা হয়েছিল, থাকার জন্যে ঘর দেওয়া হবে। কিন্তু তা এখনও হয়নি।’’
১৮৮৩ সালে এই জীর্ণ বাড়িতে এক সময় রবীন্দ্রনাথের যাতায়াত ছিল। এমনকি ঋষি অরবিন্দ বহুদিন যাবত এই বাড়িতে অতিথি ছিলেন। কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে এই ধরণের বাড়িগুলোকে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা করছে বহুদিন যাবৎ।