লকডাউনের মেয়াদ বাড়বে কিনা, কতো বাড়বে, তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই সোশ্যাল মিডিয়ায়। করোনা আতঙ্কে সারা দুনিয়াটাই কার্যত যেন থমকে গেছে। কলকাতা শহরের ছবিটাও একই। রাতারাতি কেমন যেন থেমে গেছে শহর। বিকেল না গড়াতেই সন্ধে নেমে জেঁকে বসেছে গাঢ় অন্ধকার। আলো কবে ফুটবে কারো জানা নেই। অবসন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। স্বান্তনা দেওয়ার, কাঁধে হাত রাখার মানুষের বড় অভাব। কম বেশি বিষণ্ণ সবাই, সব্বাই। এই সময়টার ছন্দ বদলে ফেলার ক্ষমতা শুধু একজনের। হ্যাঁ, সংগীতের। সুর দিয়ে আলো ফোটাবে বলে ভায়োলিন কাঁধে বেরিয়ে পড়ে এই শহরের এক তরুণ। কিন্তু এখন যে বাড়ির বাইরে পা রাখাও বারণ। অগত্যা ঘরে বসেই চলে সুর সাধনা। আর দিন কয়েক পর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতে থাকে সেই সুর।
সৌরজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। ২৩ ছুঁই ছুঁই তরুণ। গান ভালোবেসে, সুর ভালোবেসে দিব্যি চলছিল। ২০১৮ সাল থেকে মাথায় আসে বাস্কিং এর কথা। পশ্চিমি দেশে খুব জনপ্রিয় হলেও ভারতে তেমন প্রচলিত নয় বাস্কিং। তবে সে বছর অক্টোবর থেকেই এক সঙ্গীকে নিয়ে এ শহরে শুরু করলেন বাস্কিং। সদা ব্যাস্ত কলকাতার গোধূলি বেলায় ভায়োলিন নিয়ে এক এক দিন শহরের এক এক রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভায়োলিন বাজায় ওঁরা দুইজন। পথচলতি মানুষ কখনও থামে, আবার চলে যায়। কেউ কেউ সময় নিয়ে শোনে। কেউ আবার পাশ দিয়েই চলে যায় উদাসীন ভাবে। অনেক পরে কখনও সুরগুলো মনে মধ্যে ব্যঞ্জনা তৈরি করবে, করতে পারে, এই আশা নিয়ে মানুষের কাছে সুর পৌঁছে দেয় সৌরজ্যোতি। আবার উল্টোটাও। সুরের কাছে টেনে নিয়ে আসে মানুষকেও।
ছন্দে চলছিল সবকিছু। এমন সময় রাতারতি সব বদলে দিল করোনা। অন্ধকার নেমে এল সারা বিশ্বেই। ২২ বছরের সৌরজ্যোতি ভাবল, সংগীত পাশে থাকলে এই আঁধার পেরিয়ে ফেলা যাবে। আর সেই ভাবনা থেকেই বাস্কিং বন্ধ হতেই বাড়ি থেকে চলল সুর সাধনা। ভায়োলিনের করুণ সুর পৌঁছে গেল শহরবাসীর ফোনে ফোনে। সাহায্য করল সোশ্যাল মিডিয়া। এ যেন সুরের হোম ডেলিভারি। এই কঠিন সময়ে সুরই তো পারে আমাদের বেঁধে বেঁধে রাখতে।