Advertisment

জাদুঘরের রেলগাড়িটা, অস্তাচলে ঘড়ির কাঁটা...

ইতিহাস যদি ভালবাসেন, যদি ভালবাসেন ট্রেন সফর, হাওড়া স্টেশনের নতুন ভবনটির প্রায় লাগোয়া এই মিউজিয়ামে একবার ঢুঁ মারা প্রায় বাধ্যতামূলকই। আজ এই সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

'ইস্টিশন'-ও নয়। নয় ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া ছিটকে বেরোনো সচল রেলগাড়িও। নেহাতই মডেল, নেহাতই প্রতীকী সংস্করণ, কোথাও বা দীর্ঘকাল ধরে অবসরপ্রাপ্ত ধোঁয়া গাড়ি। তবু দেখতে দেখতে, ঘুরতে ঘুরতে, পড়তে পড়তে ঘড়ির কাঁটা যে কখন অস্তাচলে চলে যায় অনায়াসে, এখানে না এলে বুঝতে পারবেন না।

Advertisment

Rail museum kolkata হাওড়া স্টেশন যখন ছিল স্রেফ একটা মাটির ঘর, সেই সময় থেকে শুরু করে তার সফরের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত। ছবি: যাজ্ঞসেনী চক্রবর্তী

'এখানে' বলতে হাওড়ার রেল মিউজিয়াম, গঙ্গাপাড়ের যে সংগ্রহশালা নামেই 'মিউজিয়াম', আসলে যা ভারতীয় রেলের দীর্ঘ অভিযাত্রার বর্ণময় ইতিহাস। যেখানে 'কী আছে'-র থেকে 'কী নেই'-এর তালিকা করা বরং ঢের বেশি সহজ। ইতিহাস যদি ভালবাসেন, যদি ভালবাসেন ট্রেন সফর, হাওড়া স্টেশনের নতুন ভবনটির প্রায় লাগোয়া এই মিউজিয়ামে একবার ঢুঁ মারা আপনার প্রায় বাধ্যতামূলকই।

আরও পড়ুন: একসময় ভাওয়াল সন্ন্যাসীর আশ্রয়, আজ কলকাতা পুলিশের সংগ্রহশালা

পরিসর খুব বিস্তৃত নয়। দিল্লির চাণক্যপুরীর ভারতীয় রেল মিউজিয়ামের তুলনায় দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে অনেকটাই কম। তবু ওই স্বল্প পরিসরেই নিপাট যত্নে এবং পরিচ্ছন্নতায় বিধৃত রয়েছে রেল-ইতিহাসের নানা জানা-অজানা অধ্যায়। এবং 'শুষ্কং কাষ্ঠং’ দলিল-দস্তাবেজের মাধ্যমে নয়, মূলত ট্রেনের নানান প্রমাণ সাইজের সংরক্ষিত মডেলের মধ্য দিয়ে। ফলে মিউজিয়ামের ভিতরে পা রাখলে একঘেয়ে লাগে না এক মুহূর্তের জন্যও, সে দর্শনার্থীর বয়স আটই হোক বা আশি।

Rail museum kolkata এ জিনিস শুধু ছবিতেই দেখা যেত, এবার চাক্ষুষ করে আসুন। ছবি: যাজ্ঞসেনী চক্রবর্তী

নিজে গিয়ে সময় নিয়ে ঘুরে দেখার স্বাদই আলাদা। তবু, এই মিউজিয়ামে 'কী কী আছে'-র কৌতূহল নিরসনে দু'-চার কথা। প্রাক-স্বাধীনতা যুগ থেকে স্বাধীনোত্তর কালের হরেক রকম ইঞ্জিনের মডেল আপনাকে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করবেই। ইঞ্জিন থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ওঠার স্মৃতি উসকে দেবেই পুরোনো স্টিম ইঞ্জিনের মডেল, নিজের অজান্তে হাত চলেই যাবে মোবাইল-ক্যামেরায়। 'রেল কম ঝমাঝম' কড়া নাড়বেই অমোঘ ফ্ল্যাশব্যাকে।

ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়ের একটি ইঞ্জিন চোখ টেনে নেবেই আপনার, সে আপনি ইতিহাসের ভক্ত হোন আর না-ই হোন। ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধের সময় এই পাক ইঞ্জিনটি আটক করেছিল ভারতীয় সেনা। সেই থেকে রক্ষিত ছিল এটি, বর্তমান ঠিকানা এই সংগ্রহশালা। যেমন রয়েছে 'কবিগুরু এক্সপ্রেস' সহ বিভিন্ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মডেল-সংস্করণ। বা হিন্দি ছবি 'পরিনীতা' খ্যাত 'কস্ত মজা' গানের দৃশ্যায়নে ব্যবহৃত সেই স্টিম ইঞ্জিন।

Rail museum kolkata বলিউডে একরকম পার্শ্বচরিত্র এই স্টিম ইঞ্জিনের জন্য আলাদা ফলক তো চাই বটেই। ইঞ্জিনটি দেখুন গিয়ে নিজের চোখে। ছবি: যাজ্ঞসেনী চক্রবর্তী

যে বস্তুটির কথা উল্লেখ না করলে এই লেখা 'শিবহীন যজ্ঞ' হয়েই থেকে যাবে, সেই মিনিয়েচার টয় ট্রেন এই মিউজিয়ামের সেরা আকর্ষণ। চড়ে বসতে পারেন এই টয় ট্রেনে, ছোটবেলার নস্টালজিয়ার মৌতাতে দিব্যি একপাক ঘুরে আসতে পারেন মিউজিয়ামের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে। টয় ট্রেনের দায়িত্বে রয়েছেন হাসিখুশি শেখ রুহুল আমিন, যিনি এই মিউজিয়মের ইতিহাসের অনেকটাই গড়গড়িয়ে বলে দিতে পারবেন আপনাকে।

Rail museum kolkata ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে চুঁচুড়া ট্রেন সফরের বিস্তারিত বর্ণনা। ছবি: যাজ্ঞসেনী চক্রবর্তী

এছাড়াও মিউজিয়ামে ঢোকার সময় টিকিট কাউন্টারে মিলবে রঙিন ছোট্ট একটি বই, যাতে পাবেন মিউজিয়ামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, এবং বিশেষ দ্রষ্টব্যের তালিকা। মিউজিয়ামের এক কর্মী জানালেন, দিনে আন্দাজ ১০০ জন দর্শনার্থী আসেন, ছুটির দিনে সেই সংখ্যা বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এঁদের মধ্যে আছে প্রিন্সের মতো স্কুলের ছাত্রও, দুই বন্ধুর সঙ্গে যে প্রায়ই আসে সবুজে ঘেরা পরিবেশে শান্তিতে সময় কাটাতে।

Rail museum kolkata তাঁর টয় ট্রেনে অসীন শেখ রুহুল আমিন। ছবি: যাজ্ঞসেনী চক্রবর্তী

আরও আছে। সব লিখলাম না। দেখেই আসুন। বৃহস্পতিবার বাদ দিয়ে রোজ খোলা এই মিউজিয়াম, সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে পাঁচটা, প্রবেশ মূল্য মাথাপিছু দশ টাকা। আর হ্যাঁ, আয়তনে খুব বড় না হলেও একটু সময় নিয়েই যাওয়া ভাল। কারণটা তো শুরুতেই লিখেছি। দেখতে দেখতে, ঘুরতে ঘুরতে কখন যে 'অস্তাচলে ঘড়ির কাঁটা..'।

Howrah indian railway kolkata train
Advertisment