Advertisment

সর্বধর্মের পুজো পান 'বামুন বুড়ি', সম্প্রীতির অনন্য নজির পশ্চিম মেদিনীপুরে

এই পুজোতে কোন পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না, কোন মন্ত্রও উচ্চারিত হয় না। নৈবেদ্য প্রদানে যাতে ভেদাভেদ বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য নৈবেদ্য সকলের জন্যই এক, প্রথম থেকেই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

মালসা করে নৈবেদ্য

লক্ষ্য,হাতি সহ বন্যপ্রাণীরা যেন সুরক্ষিত থাকে, বনজ সম্পদ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, গৃহপালিত জীবজন্তুও যেন ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। এই মনস্কামনা নিয়ে আজ থেকে বহু বছর আগে শুরু হয়েছিল শ্রীশ্রী সন্ন্যাসী মাতা ওরফে বামুন বুড়ির পুজো। এবং এই মনস্কামনা পূরণ করতেই হিন্দু ,মুসলিম, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ সহ সকল ধর্মের মানুষ এই পুজোয় সামিল হন। পশ্চিম মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত চাঁদড়ার পারু আয়মার মাঠে বসে পুজোর আসর।

Advertisment

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই পুজোতে কোন পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না, কোন মন্ত্রও উচ্চারিত হয় না। নৈবেদ্য প্রদানে যাতে ভেদাভেদ বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য নৈবেদ্য সকলের জন্যই এক, প্রথম থেকেই। মাটির মালসাতে ভেজা চিড়ে এবং বাতাসা পূজার একমাত্র নৈবেদ্য। শালগাছের নীচে প্রায় এক লক্ষ মাটির মালসাতে নৈবেদ্য প্রদান করেন ভক্তরা। সন্ধ্যের দিকে প্রত্যেককে এক একটি করে মালসা ফেরত দেওয়া হয়। শাল গাছের তলায় নৈবেদ্যর মালসাগুলি সাজানো থাকে। এছাড়াও কেউ কেউ মাটির হাতি ঘোড়া রেখেও প্রার্থনা জানান।

publive-image এখানেই ঘটে সর্বধর্মের সমন্বয়

সর্বধর্মের মিলনের এই পুজোকে ঘিরে তিনদিন ধরে চলে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্য ভোগ বিতরণ। পুজোর প্রচলন কবে থেকে হয়েছে, তা এলাকার অনেকেই বলতে পারলেন না। মেলা কমিটির সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ মাহাতো বললেন, "খুব পুরনো এই পুজো, এলাকায় হাতি সহ বন্যপ্রাণীরা যাতে তান্ডব না চালায়, এবং এইসব বন্য জীবজন্তু যাতে জঙ্গলে সুরক্ষিতভাবে থাকতে পারে, সেই প্রার্থনা জানিয়েই পুজো হয়ে আসছে। কেউ কেউ নিজেদের গৃহপালিত পশুর সুরক্ষার প্রার্থনা জানান, কেউ আবার বনজ সম্পদ ঠিকঠাকভাবে থাকার প্রার্থনাও করে থাকেন।"

পুজো কমিটিরই শেখ আনোয়ার বললেন, "বন্যপ্রাণী এবং বনজ সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের, তাই আমরা ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে একসাথে হয়েছি এবং পুজো করছি।" কমিটির আরেক সদস্য শেখ রৌশন বললেন, "পুজোটা উপলক্ষ্য মাত্র, এই পূজাকে সামনে রেখে আমরা আশেপাশের ১০-১২ টা গ্রামের মানুষজন একত্রিত হতে পারি এবং বনজ সম্পদ এবং বন্যপ্রাণী রক্ষা করার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।" আরেক কর্মকর্তা সৌমেন্দ্র নাথ মাহাতো বললেন, "পুজোর প্রচলন নিয়ে এক কাহিনী কথিত রয়েছে। প্রথম থেকেই এই পুজোর জনপ্রিয়তা সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছে, দূর দূরান্ত থেকে সর্বধর্মের মানুষজন এই পুজোতে সামিল হন।"

শুধুমাত্র মেলার তিনদিনই নয়, বছরের অন্যান্য দিনগুলিতেও এলাকার মানুষজন ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে একসাথে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেন। একসাথেই হয় রক্তদান শিবির, ফুটবল-ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, প্রভৃতি।

religion
Advertisment