West Bengal Sabuj Kali: দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা হলেন দেবী কালী। বাংলা কালী সাধনার ক্ষেত্র। বাংলায় দেবী বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পূজিতা হন। কালী মানেই দেবীর গায়ের বর্ণ কালো। এমনটাই পৌরাণিক ভাবনা অনুযায়ী প্রচলিত। কোথাও অবশ্য নীল বর্ণের দেবীকেও দেখতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে অনেকটাই আলাদা নারকেলতলার অধিকারী বাড়ির গৃহমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবী কালী। তাঁর গায়ের রং সবুজ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল এই মন্দিরের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাদিবস। মূল মন্দিরটি আকারে ছোট। যা বর্তমানে দেখভাল করেন দেবজ্যোতি অধিকারী। মন্দিরের নাম- শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা মন্দির। দেবী এখানে চতুর্ভুজা। তাঁর একহাতে রয়েছে ত্রিশূল। একহাতে রয়েছে খড়্গ। এছাড়াও হাতে রয়েছে নরমুণ্ড।
- ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল এই মন্দিরের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাদিবস।
- পুজো দিতে গেলে যেতে হবে সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে।
- মন্দিরের নাম- শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা মন্দির।
পুজোর ইতিহাস
এই কালীপুজোর সূচনা হয়েছিল এক বৈষ্ণব পাড়ার বৈষ্ণব পরিবার থেকে। পরিবারের পূর্বপুরুষ বটকৃষ্ণ অধিকারী ৭৩ বছর আগে সূচনা করেছিলেন এই সবুজ কালীপুজোর। বটকৃষ্ণ অধিকারী লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে যোগ দিলেও তাতে মন বসাতে পারেননি। গ্রামে ফিরে মন দেন গোরু পালন, চাষবাসে। গ্রামের কাছেই ছিল শ্মশান। সেখানে গোরু বেঁধে শ্মশানের কাছেই মাঠে বসে বাঁশি বাজাতেন বটকৃষ্ণ। এই ঘটনা প্রায় ৮০ বছর আগের। ভারতের স্বাধীনতারও পূর্বের ঘটনা। সেই সময় শ্মশানেই সাধনা শুরু করেন বটকৃষ্ণ। এভাবেই একদিন শ্মশানের কাছে গোরুর খুঁটি বাঁধতে গিয়ে বটকৃষ্ণ অধিকারী শুনতে পান, কেউ যেন তাঁকে পিছন থেকে নাম ধরে ডাকছে। তাকিয়ে দেখেন এক সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তাঁকে দীক্ষা দেবেন বলে জানান। সেই সাধকের নির্দেশ মেনে বাড়ি ফিরে এসে নিজের মায়ের অনুমতি নেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। আর, সাধকের কাছে গিয়ে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর থেকে তিনি নিজের বাড়িতেই ঘটে দেবীর পুজো করতেন।
এরপরই পান স্বপ্নাদেশ
এরপর একদিন বটকৃষ্ণ অধিকারী স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশে দেবী তাঁকে মূর্তি এনে বাড়িতে পুজো করার নির্দেশ দেন। কিন্তু, বৈষ্ণব পরিবার ও প্রতিবেশীদের বাধার মুখে পড়ে বটকৃষ্ণ অধিকারী কালীমূর্তি পুজো করা থেকে পিছিয়ে যান। এরপর ফের শ্মশানে সাধনা করতে গিয়ে বটকৃষ্ণ অধিকারী এক অদ্ভূত দৃশ্য দেখেন। তিনি দেখতে পান কচি দুর্বা ঘাসের ওপর শ্যাম বা শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্যামা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা বটকৃষ্ণকে বলেন, শ্যাম এবং শ্যামা এক ও অভিন্ন। এই কথা বলার পর সেই শ্যামের মূর্তি ও শ্যামার মূর্তি পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায়। তৈরি হয় এক দেবীমূর্তি। যে মূর্তির বর্ণ সবুজ। ওই দেবীমূর্তি বটকৃষ্ণ অধিকারীকে বলেছিলেন, তাঁর বাঁশি শুনে শ্রীকৃষ্ণ তুষ্ট হয়েছেন। আর, শ্মশান সাধনা করে সিদ্ধিলাভের মাধ্যমে বটকৃষ্ণ অধিকারী দেবী কালীর কৃপা পেয়েছেন। সেই কারণে শ্রীকৃষ্ণ ও দেবী কালী বটকৃষ্ণ অধিকারীর কাছে সবুজ কালী রূপে পূজিতা হবেন। এরপরই রটন্তী কালীপুজোর দিন অধিকারী বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী সবুজ কালীর বিগ্রহ।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া-তারকেশ্বর লাইনের নালিকুল স্টেশনে নামতে হবে। হাওড়া থেকে আরামবাগ, গোঘাট এবং তারকেশ্বর লোকাল চেপে যাওয়া যায় নালিকুল। হাওড়া থেকে নালিকুল যেতে সময় লাগে ১ঘণ্টা ১০ মিনিট। ভাড়া ১০ টাকা। নালিকুল স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বের হয়ে পাওয়া যাবে শিয়াখালা যাওয়ার অটো। নামতে হবে নারকেলতলায়। নালিকুল স্টেশন থেকে নারকেলতলায় যেতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট। অটোভাড়া ২০ টাকা। নারকেলতলা স্টপেজের যেপাশে অটো নামাবে, তার উলটো দিকেই রয়েছে একটি গলি। সেটাই সবুজকালী মন্দিরে যাওয়ার পথ।
আরও পড়ুন- সরস্বতী পুজোয় যুগ যুগ ধরে হলুদ পোশাকের চল, কেন জানেন?
পুজো দেওয়ার সময়সূচি
পুজো দিতে গেলে যেতে হবে সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে। সকাল ১০টা থেকে মন্দির খোলা হয়। দর্শন, পুজোর সময়ের পরে গেলেও করা যায়। অমাবস্যাগুলোয় বিশেষ যজ্ঞ হয়। সেদিন ভোগেরও ব্যবস্থা থাকে। অমাবস্যায় এলে পাওয়া যায় ভোগপ্রসাদ।