কথায় বলে পৃথিবীর কোনও মানুষই নাকি পুরোপুরি সুস্থ নয়, তবেই তাকে মানুষ বলে অভিহিত করা যায়। তবে তার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই কিন্তু সবথেকে বেশি মুশকিল। আসলেই মানসিক চাপ কিংবা ডিপ্রেশন প্রতিটা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর। এর নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, চিকিৎসা রয়েছে তারপরেও অনেকেই আছেন যারা এই বিষয়ে মানতেই চাননা যে তাদের মানসিক কোনও সমস্যা হচ্ছে। তবে বিশ্ব জুড়ে মানসিক চাপ কিন্তু এক ঊর্ধ্বমুখী সমস্যার দিকে এগোচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই সমস্যা যেমন ক্রমশ বাড়ছে, তেমনই ভারত জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বোঝার নানান প্রয়াস করা হয়েছে। কম করে ১৯৭.৩ মিলিয়ন লোকের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের প্রয়োজন তার মধ্যে ৪৫.৭ মিলিয়ন মানুষ বিষণ্ণতার কারণে এবং ৪৪.৯ মিলিয়ন মানুষ উদ্বেগের কারণে ভুগছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচুর মানুষ হাসিঠাট্টা করেন, কেউ কেউ রেগেও যান। তবে এর প্রতিচ্ছবি ঠিক কেমন, সেই নিয়ে অনেকেই বুঝতেও পারেন না অথবা জানতে চাননা। ধারণা দিচ্ছেন বিরেন্দর সিং চৌহান এবং সুকৃতি চৌহান। তারা বলছেন, পরিসংখ্যান যাই হোক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে তার সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টিই কিন্তু গ্রহণীয়। অনেকেই এই বিষয়ে সাহায্য চাইতে পারেন না, যারা গভীর সমস্যার শিকার তারাও ধীরে ধীরে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। মানসিক স্বাস্থ্য মোকাবিলায় সচেতনতা থাকা খুবই দরকার। মানসিক অসুস্থতা নির্ধারণ শুধু স্ক্রিনিং এর মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে না। মানসিক স্বাস্থ্য মানেই যে একচেটিয়া অসুস্থতা এই ভাবনাতে বদল আনতে হবে। একে এমন ভাবে সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন যেখানে একজন ব্যাক্তি তাদের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে।
NIMHANS এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বুকে কম করে ৮০% মানুষ জ্ঞানের অভাব এবং উচ্চ খরচের কারণেই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করেন না। ফলেই সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে কিংবা তাকে গুরুত্ব দিয়েই ২৪×৭ টেলি কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য কে গুরুত্ব দিয়ে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করা উচিত, আজ অব্দি বরাদ্দ করা হয়েছে - ৯৩২.২৪ কোটি টাকা।
একে কীভাবে নির্ধারণ করা যায় চিকিৎসার ভাষায়?
মানসিক অসুস্থতা জৈবিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, তথা বংশগত এবং পরিবেশগত চাপের সংমিশ্রণ। অনেক সময় মানুষের শারীরিক অসুস্থতা কিন্তু মানসিক সমস্যাকে ট্রিগার করতে পারে। এগুলি মানসিক যন্ত্রণা দায়ক, সঙ্গেই অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। সমীক্ষায় জানা গেছে, বিষণ্ণতার উত্তরাধিকারী আনুমানিক ৪০%। দিনের পর দিন এই গুরুতর সমস্যা সংখ্যায় বাড়ছে। সামাজিক কারণও কিন্তু এর জন্য ভীষণভাবে দায়ী।
তারা আরও জানাচ্ছেন শুধুমাত্র সামাজিক পরিস্থিতি নয় পারিবারিক ক্ষমতা, আয় ব্যয় এসবের ওপরেও মানসিক ঝুঁকি নির্ভর করে। অনেকেই এমন আছেন যারা মানসিক রোগ নির্নয় করতে গিয়েই সময়কাল বোঝার চেষ্টা করেন। মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল থাকা বেশ কিছু ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক কিন্তু তার থেকে রেহাই পেতে একটি বিস্তৃত মানসিক পরিষেবা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নাহলে যারা তীব্র সমস্যায় ভুগছেন তাদের দৈনন্দিন কাজ প্রভাবিত হবে।
তবে এর থেকে পিছিয়ে গেলে চলবে না। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ধীরে ধীরে মূল ব্যবস্থায় পৌঁছাতে গেলে বিলম্বিত কথোপকথন প্রয়োজন। এই নিয়ে আরও গবেষণা দরকার, মানসম্পন্ন ডেটা থাকা প্রয়োজন। ব্যাপক পদ্ধতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।