বহু মানুষ আছেন, যাঁরা আড়ালে থাকলে ক্ষতিসাধন করেন। আর, সামনে এলেই মিষ্টি কথা বলেন। এই সব লোকেদের জন্য সমস্যায় পড়েন তাঁদের ঘনিষ্ঠরা। কারণ, তাঁরা এই সব লোকেদের বিশ্বাস করেন। কিন্তু, বুঝতে পারেন না যে তলে তলে তাঁদের অতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই ক্ষতি করে চলেছেন। এটা যখন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বুঝতে পারেন, তখন অবশ্য অনেক দেরি হয়ে যায়।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, কলসির ওপর থেকে দেখা যাচ্ছে তা দুধে ভরা। কিন্তু, সেই কলসির ভিতরে যে বিষ রয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। অথচ, সেই দুধই পান করলে মৃত্যু অবধারিত। এই সংসারে ছলরূপী বন্ধুরাও ঠিক তেমনই। তাঁদের মিষ্ট ব্যবহারে বোঝাই যায় না যে কতটা ক্ষতিসাধন তারা করতে পারে। তাই এই ধরনের বন্ধুদের নিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সব সময়ই চিন্তিত থাকেন।
মহামতি চাণক্য এই ধরনের বন্ধুদের ব্যাপারে তাঁর নীতিশাস্ত্রে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন। তিনি তাঁর শ্লোকে লিখেছেন, 'পরোক্ষে কার্যহন্তারং, প্রত্যক্ষে প্রিয়বাদিনম্। বর্জয়েৎ তাদৃশং মিত্রং বিষকুম্ভং পয়োমুখম্।।' যার বাংলা করতে হয়- ব্যক্তি গোপনে ঘনিষ্ঠেরই ক্ষতিসাধন করেন। আর, সামনে এলে আবার সেই ঘনিষ্ঠেরই সঙ্গে মিষ্ট কথা বলেন, এমন মানুষের মুখে মধু। কিন্তু, তাঁদের অন্তরে বিষ। তাই এমন ব্যক্তিদের বিষের মতই পরিত্যাগ করা উচিত।
আরও পডু়ন- উপকারও করে আবার ছুরিও মারে বন্ধু, হিতাকাঙ্ক্ষী কে, চিনিয়েছেন চাণক্য
কারণ, চাণক্য মনে করতেন যে সমাজে ভালো মানুষের সংখ্যা অল্প। কিন্তু, ভালো মানুষ যে নেই, তা নয়। তবে, ভালো মানুষের ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা সমাজের অসৎ মানুষের সংখ্যা বেশ বেশি। কিন্তু, তাঁদের চিনতে পারা বেশ কঠিন। কারণ, অসৎ ব্যক্তিরা হয় অত্যন্ত মিষ্টভাষী। তারা মিষ্টি কথায় অন্যের মন জিতে নেয়।
অথচ, বন্ধুত্বের আড়ালে এঁদের মনের মধ্যে বিষ থাকে। তারা ছলনা করে গোপনে। অথবা, কারও দুর্বল মুহূর্তে বন্ধুত্বের ছলেও গোপন কথা জেনে নেয়। পরে, সুযোগ মত তা অপব্যবহার করে। এই ছল বন্ধুকে চিনতে না-পেরে অনেকেই বন্ধু ভেবে মনের গোপন কথা বলে দেন। কিন্তু, ছল বন্ধুরা গোপনে সেই মানুষেরই ইপ্সিত কাজে বাধা দেয়।