শাস্ত্র অনুযায়ী, নবরাত্রির অষ্টম দিন বা ‘অষ্টমী’ হল দুর্গাপূজার পবিত্রতম দিন। আশ্বিন মাসের শুক্লাষ্টমী তিথির এই দিনটিকে আমরা ‘দুর্গাষ্টমী’, ‘মহাষ্টমী’, ‘বীরাষ্টমী’ বলে থাকি। আশ্বিন মাসের এই অষ্টমী তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভশক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রে এই দিনটির মাহাত্ম্য সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। এই অষ্টমীর দিন হিন্দু ধর্মবিশ্বাসীরা অস্ত্র পুজো করেন। আর, এক্ষেত্রেই প্রশ্ন জাগে, কেন অষ্টমী তিথিতে এই অস্ত্র পুজো করা হয়?
এই দিনে দেবী দুর্গার অস্ত্রকে দেবজ্ঞানে অর্ঘ্য প্রদানের মত করে পুজো করা হয়। কারণ দেবগণ নানা অস্ত্র প্রদানের মাধ্যমে এই দিনেই দেবীকে রণসাজে সাজিয়ে তুলেছিলেন, এই মহাষ্টমী তিথিতেই। তাই দিনটিকে বীরাষ্টমী বলা হয়। আবার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিনটিকে বলা হয় ‘অস্ত্র পূজা’র দিন। বীর সন্তান লাভের জন্য বীরাষ্টমী ব্রত পালন করেন মহিলারা!
বলা হয়, অষ্টমী তিথিতে অসুরবিনাশী শুদ্ধসত্তার আবির্ভাব তিথি। এদিন দেবী মহালক্ষ্মীরূপা বৈষ্ণবী শক্তি। দেবীর সেদিন রাজরাজেশ্বরী মূর্তি। দু’হাতে বর দেন ভক্তদের। তাই এদিনই বীর সন্তান লাভের জন্য বীরাষ্টমী ব্রত পালন করেন মহিলারা। আশ্বিন মাসের শুক্লা অষ্টমীতে বীরাষ্টমী ব্রত রাখা হয়। আট বছর এই ব্রত পালন করতে হয়।
আরও পড়ুন- দুর্গাপুজোর সন্ধিপুজো কেন এবং কখন হয়, এর গুরুত্বই বা কী?
ব্রিটিশ জমানায় দেবী দুর্গার পুজোকে আন্দোলনের হাতিয়ার করে তুলেছিলেন স্বাধানতী সংগ্রামীরা। সেইসময়ই বিভিন্ন কুস্তির ঠেকে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়। অষ্টমী তিথিতে কুস্তি প্রদর্শিত হত। একইসঙ্গে এই দিনে বীরদের সম্মান জানানোরও রেওয়াজ ছিল। কিন্তু যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে অষ্টমীর ব্যাখ্যা। অস্ত্র পুজোর রীতি হারিয়ে গেছেই বলা যায়।
বাঙ্গালী হিন্দু যে একসময় অস্ত্র ধরতে পারত, অস্ত্র নিয়ে প্রবল তেজে যুদ্ধ করতে পারত, সেকথা আজ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে থিম। বীরাষ্টমী সম্পর্কে তাই বর্তমান প্রজন্ম সঠিকভাবে জানে না। তারা জানবেও না যে বাঙ্গালী হিন্দুরা বীর যোদ্ধার মত অস্ত্র হাতে লড়তে পারত, পাল্লা দিয়ে লাঠি খেলত। প্রাচীন এই রীতি যারা বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের অন্যতম ভারত সেবাশ্রম সংঘ। এছাড়া উত্তর কলকাতার বাগবাজার সার্বজনীনেও পালিত হয় বীরাষ্টমী ব্রত।