কালীপুজো বা দেওয়ালির পরই হিন্দুদের বড় উৎসব ভাইফোঁটা। কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকেই ফোঁটা শুরু হয়। তবে, সব পরিবারে প্রতিপদে ফোঁটা নেওয়ার রেওয়াজ নেই। বেশিরভাগ হিন্দুরই দ্বিতীয়ায় ফোঁটা নেওয়া বংশীয় রীতি। সেই কারণে ভাইফোঁটা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া নামেও পরিচিত।
তবে, এটাই একমাত্র নাম নয়। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম আছে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভাইফোঁটাকে ডাকা হয় 'ভাইদুজ' নামে। এই সব জায়গায় ভ্রাতৃদ্বিতীয় পাঁচ দিনের দীপাবলি উৎসবের শেষ দিন। আবার গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে 'ভাইবিজ'। নেপাল ও দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ভাইফোঁটাকে বলে 'ভাইটিকা'। যা আসলে বিজয়াদশমীর পর সবচেয়ে বড় উৎসব। আবার কোনও কোনও অঞ্চলে এর নাম 'যমদ্বিতীয়া'।
ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাঁদের কপালে কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে তিনবার চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেন। ধান, দুর্বা দিয়ে ভাইয়ের মাথায় আশীর্বাদ করেন, শঙ্খ বাজান, উলু দেন। যাঁরা প্রতিপদে ফোঁটা দেন (বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের একাংশ), তাঁরা ফোঁটা দেওয়ার সময় বলেন- 'প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে নীতা, আজ হতে আমার ভাই যম দুয়ারে তিতা।' যার অর্থ, ভাইকে প্রতিপদে ফোঁটা দিয়ে দ্বিতীয়াতে নীতা বা নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে দ্বিতীয়াতে আমন্ত্রণ পালনের সময় দুপুরে খাওয়ার শুরুতে ঘি আর গরম ভাত মেখে ভাইয়ের হাতে তুলে দেন বোন। সেই সময় বোনেরা বলেন, 'ভ্রাতস্তবানুজাতাহং ভুঙক্ষভক্তমিদং শুভম্। প্রীতয়ে যমরাজস্য যমুনায়া বিশেষতঃ।' আর দিদি হলে ভাইয়ের শুভকামনায় বলতে হয়, 'ভ্রাতস্তবাগ্রজাতাহং।'
আরও পড়ুন- কালীপুজোয় কেন মদ বা কারণবারির ব্যবহার হয়? কীভাবে চালু হল এই প্রথা?
আর ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা বলেন, 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা। যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেন যমকে ফোঁটা। আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা। যম যেমন হন চিরজীবি। আমার ভাইও যেন হয় তেমন চিরজীবি।' উত্তরবঙ্গের কিছু জায়গায় আবার ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ফোঁটা দেওয়ার সময় বোনেরা বলেন, 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা। যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। কাঁটা যেন নড়ে না। আমার ভাই যেন মরে না।' ফোঁটা দেওয়ার পর বোন ভাইকে মিষ্টি খেতে দেয়। ভাইও সাধ্যমতো বোনকে উপহার দেয়।
কথিত আছে, এই ভাইফোঁটার উৎপত্তি হয়েছে মৃত্যুর দেবতা যমের থেকে। যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন। আবার অন্যমতে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধের পর বোন সুভদ্রার কাছে এলে সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টি খেতে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই উৎপত্তি হয়েছে ভাইফোঁটা উৎসবের।
এবছর ২৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ২৮ থেকেই প্রতিপদ শুরু হয়ে গিয়েছে। বুধবার প্রতিপদ থাকছে দুপুর ৩টে ২৯ মিনিট পর্যন্ত। তারপর থেকেই দ্বিতীয় শুরু হয়ে যাচ্ছে। অন্যমতে আবার বুধবার দুপুর ২টো ৪২ থেকেই দ্বিতীয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে। ২৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো ৫ পর্যন্ত থাকছে দ্বিতীয়া। অন্যমতে আবার বৃহস্পতিবার ১২টা ৪৫ মিনিটেই দ্বিতীয় শেষ হচ্ছে। তাই দিন হিসেবে এবছর অন্যবারের চেয়ে ভাইফোঁটার জন্য বেশি সময় পাচ্ছেন ভাই ও বোনেরা। তবে, জ্যোতিষীদের একাংশের দাবি, বুধবার দুপুর ১টা ১২ মিনিট থেকে দুপুর ৩টে ২৭ মিনিট ভাইফোঁটার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।