সংস্কৃত শব্দ ছটের অর্থ হল ষষ্ঠ। দেবী ষষ্ঠীর আরাধানা। চার দিনের এই পুজো আসলে সূর্যষষ্ঠী পালন। অনেকে একে বলে প্রতিহারষষ্ঠী। সুদূর অতীত থেকে এই রীতি পালিত হয়। ঋগ্বেদেও সূর্য পুজো ও তাঁর স্ত্রী উষাদেবীর পুজোর প্রচলন ছিল। কথিত আছে, সূর্যদেব ও ছট দেবী ভাই ও বোন। সেই কারণে ছট পুজোয় সূর্যের আরাধনা অত্যন্ত গুরুত্ব পায়।
আবার পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী ব্রহ্মার মানসপুত্রী দেবসেনার উৎপত্তি হয়েছিল সৃষ্টির মূল প্রবৃত্তির ষষ্ঠ অংশ থেকে। তিনি দেবী ষষ্ঠী। আর, তাঁর স্বামী মহাদেবের পুত্র কার্তিকের ছয়টি মুখ ছিল। তাই তাঁকে বলা হয় ষড়ানন। কখনও আবার বলা হয় দেবসেনার পতি বা দেবসেনাপতি। আবার কার্তিক দেবতাদেরও সেনাপতি ছিলেন বলে কথিত আছে। তাই কার্তিক সবদিক থেকেই দেবসেনাপতি। ছট তাই শুধু অবাঙালিদের পুজো নয়। বাংলাতেও কার্তিক আরাধনার পাশাপাশি দেবী ষষ্ঠীর আরাধনাও প্রচলিত। বাংলায় সূর্যষষ্ঠীকে বা ছটপুজোর ষষ্ঠীকে বলা হয় নাড়ীষষ্ঠী। অবাঙালিরা দেবী ষষ্ঠীকে বলেন 'ছটি মাইয়া'।
ছটপুজো বা সূর্য আরাধনার রীতি ঋগ্বেদ পরবর্তী সময়েও ভারতে প্রচলিত ছিল। রামায়ণ অনুযায়ী, শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন সূর্যবংশীয়। তিনি অযোধ্যার সিংহাসনে বসার আগে ছটপুজোর তিথিতেই সরযূ নদীতে স্নান করে সূর্যের উদ্দেশ্যে অর্ঘ্যদান করেছিলেন। আবার মহাভারতের মতে, পাণ্ডবরা বনবাসে প্রবল অন্নকষ্টে কাটাচ্ছিলেন। সেই সময় রাজপুরোহিত ধৌম্যের পরামর্শে যুধিষ্ঠির চার দিনের সূর্য আরাধনা করেছিলেন। সূর্যদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের দিব্য পাত্র দিয়েছিলেন। দ্রৌপদীর খাওয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সেই পাত্রের খাবার ফুরিয়ে যেত না। এবছর বৃহস্পতিবার ২৭ অক্টোবর থেকেই ছটপুজোর উৎসব শুরু হয়েছে। উৎসব প্রতিবারের মত এবারও নিয়ম মেনে রবিবার ৩০ অক্টোবর সমাপ্ত হবে।
আরও পড়ুন- দেবী জগদ্ধাত্রী কে, কেন তাঁর পায়ের কাছে হাতির মাথা পড়ে থাকে?
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসবে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি থেকে ৩৬ ঘণ্টা নির্জলা উপবাস থাকেন ভক্তরা। ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয় ছট উৎসব। সন্তানের দীর্ঘায়ু, সুখ-সৌভাগ্য ও উন্নত জীবনের জন্য সূর্য ও জলকে সাক্ষী রেখে পুজো করা হয়। রামায়ণ অনুযায়ী মহর্ষি মুদগল সীতাকে ছটব্রত সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তারপর সীতা ছয় দিন পর্যন্ত করেছিলেন সূর্য আরাধনা। শুধু তাই নয়, মহাভারত অনুযায়ী পাশা খেলায় পাণ্ডবরা পরাজিত হওয়ার পর দ্রৌপদী ছট ব্রত পালন করেছিলেন। তারপরই পাণ্ডবরা রাজ্য ফিরে পেয়েছিল।