হিন্দুদের, বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব গণেশ চতুর্থী। তবে, মহারাষ্ট্রে গণেশ চতুর্থী পালনে বেশি উৎসাহ থাকলেও গণেশ পুজো দেশ এবং বিদেশে দীর্ঘদিন ধরেই বহুল প্রচলিত। ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থীকেই গণেশ চতুর্থী বলে। হিন্দুদের বিশ্বাস, এই দিনেই শিব ও পার্বতীর সন্তান গণেশ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
এবছর, ২০২২-এ বুধবার ৩১ ডিসেম্বর পড়েছে গণেশ চতুর্থী। ২০২১ সালে ১০ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার পড়েছিল গণেশ চতুর্থী। আর, ২০২০ সালে ২২ আগস্ট, শুক্রবার ছিল গণেশ চতুর্থীর দিন। যার অর্থ, আগস্টের শেষের দিক থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকের (২০ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যেই আয়োজিত হয় গণেশ চতুর্থী উৎসব। ১০ দিন চলার পর যার শেষ হয় অনন্ত চতুর্দশীর দিন।
হিন্দু ধর্মমতে গণেশ বুদ্ধি, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবতা। তিনি বিঘ্ন নাশ করেন। গণেশ ছাড়াও তিনি গণপতি, সিদ্ধিদাতা, পিল্লাইয়ার বিঘ্নেশ্বর, যানইমুগতবন, বিনায়ক, গজপতি, একদন্ত, মহাকায়-সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। হিন্দুদের বিশ্বাস গণেশ চতুর্থীর দিন ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে গণেশ মর্ত্যে আসেন।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, গণেশ পাঁচ রাক্ষসকে হত্যা করেছিলেন। তাঁরা হলেন অহন্তাসুর (অহমিকার প্রতীক), মায়াসুর (মায়ার প্রতীক), লোভাসুর (লোভের প্রতীক), কামাসুর (কামের প্রতীক) ও ক্রোধাসুর (ক্রোধের প্রতীক)। তাঁকে দুর্গা (অম্বিকা) এবং চন্ডিকা পালন করেছিলেন বলে দ্বৈমাতুরও বলা হয়। আবার, গণেশের অভিশাপে গণেশ চতুর্থী থেকে অনন্ত চতুর্দশী পর্যন্ত কেউ চাঁদের দিকে তাঁকালে, সেই ব্যক্তির জীবনে সমস্যা নেমে আসে।
আরও পড়ুন- বিপদে-আপদে ভরসা দেবী ঘোমটাকালী, ভক্তদের বিশ্বাস তিনিই দেন পরিত্রাণের উপায়
মহারাষ্ট্রে গণেশ চতুর্থী সবচেয়ে বড় উৎসব হয়ে ওঠে শিবাজির আমলে। শিবাজি ১৬৩০ থেকে ১৬৮০ সালের মধ্যে মুঘলদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটাতে 'গণপতি উৎসব'-এর সূচনা করেন। পরবর্তী সময়ে পেশোয়াদের জমানাতেও পেশোয়ারা কুলদেবতা হিসেবে গণেশের পুজো করতেন।
১৮৯৩ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পুনের বাসুদেব লক্ষণ জাভালে ব্রিটিশদের বিরোধিতার প্রতীক হিসেবে সর্বজনীনভাবে গণেশ চতুর্থী পালন করেন। সেই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল বাল গঙ্গাধর তিলকের কেশরী পত্রিকায়। তিলকও হিন্দু জমায়েত বিরোধী ব্রিটিশ নির্দেশের বিরুদ্ধে সর্বজনীনভাবে গণেশ চতুর্থীকে জনপ্রিয় করে তোলার ডাক দিয়েছিলেন।