হিন্দুদের কাছে রাস অন্যতম বড় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীর ভাবধারার এই উৎসব। কথিত আছে রাস কথাটি এসেছে ‘রস’ থেকে। ‘রস’ মানে আনন্দ, দিব্য অনুভূতি, দিব্য প্রেম বা সার, নির্যাস, আনন্দ, আহ্লাদ, অমৃত ও ব্রহ্ম। ‘তৈত্তিরীয়’ উপনিষদে (২/৭) ‘রস’ সম্পর্কে বলা হয়েছে “রসো বৈ সঃ। অর্থাৎ ‘রস’ ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তাত্ত্বিক রসে সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিকতার সুখানুভূতি এই উৎসবের বিষয়বস্তু। যা শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধা ও গোপিনীদের মধ্যেকার লীলা খেলা। পশ্চিমবঙ্গে নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলা এবং ওড়িশা, আসাম, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে অত্যন্ত বড় আকারে রাসপূর্ণিমা পালিত হয়। এবছর (ইংরেজির ২০২২ সাল, বাংলার ১৪২৯ সাল) রাসপূর্ণিমা পড়েছে ৮ নভেম্বর/২১ কার্তিক, মঙ্গলবার। ভারতীয় সময় সোমবার ৭ নভেম্বর বিকেল ৪টা ১৫-য় রাসপূর্ণিমার তিথি শুরু। শেষ পরদিন, ৮ নভেম্বর বেলা ৪টা ৩১ নাগাদ।
কথিত আছে, বস্ত্রহরণের দিন কৃষ্ণ গোপিনীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি তাঁদের সঙ্গে রাসলীলা করবেন। কৃষ্ণের মধুর বাঁশির শব্দ শুনে মুগ্ধ গোপিনীরা নিজেদের কর্তব্য বিসর্জন দিয়ে সংসারের মোহ ত্যাগ করে বৃন্দাবনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁরা নিজেদেরকে শ্রীকৃষ্ণের চরণে সমর্পণ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের গৃহে ফিরে যেতে বললেও তাঁরা ফিরে যাননি। তাঁদের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে এরপর শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের অন্তর পরিষ্কার করেন। যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ হয়ে গোপিনীদের ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন। যার মাধ্যমে গোপিনীরা জাগতিক ক্লেশমুক্ত হন। এভাবেই রাস উৎসব শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন- শনির প্রকোপ থেকে বাঁচতে রত্নধারণ না, সালাংপুরবাসী দ্বারস্থ হন কষ্টভঞ্জনের
পশ্চিমবঙ্গে রাস উৎসবগুলোর মধ্যে নবদ্বীপেরটাই শ্রেষ্ঠ। এখানকার রাসের বিশেষত্ব হল বিশাল আকারের মূর্তি। কথিত আছে, অদ্বৈতাচার্য শান্তিপুরে ও শ্রীচৈতন্যদেব নবদ্বীপে রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবত এবং বিষ্ণপুরাণে শারদ রাসের কথা আছে। তেমনই 'হরিবংশ' এবং ভাসের বালচরিত গ্রন্থেও গোপিনীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের হল্লীশ নৃত্যের কথা আছে। শাস্ত্রে ও পুরাণে পাঁচ রকম রাসনৃত্যের কথা রয়েছে। সেগুলো হল মহারাস, বসন্ত রাস, কুঞ্জ রাস, দিব্য রাস ও নিত্য রাস।