এক অনুষ্ঠানে দেবী কালীকে নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের করা বিতর্কিত মন্তব্যে চতুর্দিক তোলপাড়। ইতিমধ্যেই মহুয়া মৈত্রের গ্রেফতারির দাবিতে পথে নেমেছেন হিন্দুত্ববাদীরা। থানায় তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
কিন্তু, এসব তো গেল রাজনীতির কথা। যাঁরা দেবীর উপাসনা করেন, তাঁরা কী বলছেন, সেই বক্তব্যটাও জানা জরুরি। রাজ্যের সিদ্ধপীঠ বলে পরিচিত তারাপীঠের খ্যাতি ভারতজোড়া। সেই তারাপীঠের মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'প্রাচীন কাল থেকে তারাপীঠে ভোগের নিয়ম রয়েছে যে একদিকে দেবীকে যেমন নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। আবার, তন্ত্রমতে দেবীর ভোগের জন্য মৎস্য লাগে, কারণসুধা লাগে এবং মানসিকের যে বলি হয়, মন্দিরে যে বলি হয়, সেই বলির পাঁঠার মাংস লাগে। এটা কিন্তু, তন্ত্র মতে পুজো করতে গেলে লাগে।'
তারাময় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন ভক্ত দেবীকে ভক্তিভরে যেটা ভোগ দেন, সেটাই দেবীর ভোগ হয়। কার্যত এই সুরেই মহুয়া মৈত্র বলেছিলেন, ‘নিজের ভগবানকে তুমি কীভাবে দেখতে চাও, তা কল্পনা করার অধিকার সকলের আছে। ভুটান আর সিকিমে গেলে দেখা যাবে সেখানে পুজোয় ভগবানকে হুইস্কি দেওয়া হয়। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশের কোথাও এমন ভোগ দিলে অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। আমার কাছে কালী একজন মাংস খান এমন দেবী। শুধু তাই নয়, সুরা পান করছেন এমন দেবীও বটে। তবে, এই বিষয়ে মানুষের আলাদা মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু, সে নিয়ে আমি চিন্তিত নই।’
শাস্ত্রজ্ঞরা বলছেন, সর্বত্র দেবীর জন্য মাংস বা কারণসুধার ব্যবহার প্রচলিত না-হলেও তন্ত্রমতে তা প্রচলিত। হিন্দু শাস্ত্রে পুজোর অনেক ভাগ আছে। তাতে, সাধারণ পদ্ধতিতে পুজো আর তন্ত্রমতে পুজোর মধ্যে পার্থক্য আছে। তৃণমূল সাংসদ যা বলেছেন, তা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-হলেও, তন্ত্রমতে উপেক্ষণীয় নয় বলেই মনে করছেন শাস্ত্রজ্ঞরা।