রথযাত্রা বলতেই সবার আগে নাম আসে পুরীর। কারণ, পুরীকে অনুসরণ করেই বাকি সব জায়গায় রথযাত্রা হয়। আর, সব কিছুরই একটা ইতিহাস আছে। কিন্তু, কবে থেকে পুরীতে রথযাত্রা শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ দেখতে পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে অনেকেই ভরসা রাখেন ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি 'ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ'-এর ওপর। এই পুঁথি অনুযায়ী, মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নর আমলে জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি তৈরি হয়। একইসঙ্গে রথযাত্রাও চালু হয়। বিভিন্ন ইতিহাসবিদদের দাবি, ১০৭৮ সালে তৈরি হয়েছিল পুরীর জগন্নাথ মন্দির। ১১৭৪ সালে মেরামরির পর তা বর্তমান জগন্নাথ মন্দিরের চেহারা নেয়।
কিন্তু, আবার ‘রথ চকদ’ নামে আর একটি গ্রন্থে আছে যে আটের শতকে রাজা যযাতি কেশরী রথযাত্রা উৎসব উদযাপন করেছিলেন। সেই সময় তিনি শ্রীজগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আরও পড়ুন- আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে পুরীর রথযাত্রার, জানেন কী সেই বৈশিষ্ট্য?
‘মাদলা পঞ্জী’ নামে একটি কালানুক্রমিক বিবরণমূলক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, আগে শ্রীজগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরে যাওয়ার পথে ‘মালিনী নদী’ নামে একটি নদী পড়ত। ওই নদী ‘বডা নাই’ বা বড় নদী নামেও পরিচিত ছিল। ওই সময়ে রাজার ছয়টি রথ এই রথযাত্রায় অংশ নিত। শ্রীজগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রা এবং সুদর্শন চক্রকে ওই নদীর দিকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনটি রথ ব্যবহৃত হত। তারপর বিগ্রহগুলি নদীর অপর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হত নৌকোয় চাপিয়ে। সেখান থেকে গুণ্ডিচা মন্দির পর্যন্ত শ্রীজগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রাকে বহন করার জন্য আরও তিনটি রথ থাকত।
কথিত আছে রাজা বীর নরসিংহ দেবের রাজত্বকালে ‘মালিনী নদী’ পলিতে ভর্তি হয়ে যায়। তারপর থেকে তিনটি রথই সরাসরি গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত যায়। এই গুন্ডিচা মন্দির শ্রীজগন্নাথ মন্দির থেকে ২.৮ কিলোমিটার দূরে। ‘মাদলা পঞ্জী’ অনুযায়ী গুণ্ডিচা মন্দিরটি আগে কাঠ দিয়ে তৈরি ছিল কিন্তু তারপর রাজা বীর নরসিংহদেব সেটি পাথর দিয়ে পুনঃনির্মাণ করান। আর, এতে পুরীর রথযাত্রার জৌলুস আরও বৃদ্ধি পায়।