Advertisment

কেন এত ভয় পাচ্ছে আপনার সন্তান, খবর রাখেন?

একই ঘটনায় এক এক শিশু এক এক রকম প্রতিক্রিয়া জানায়। খুব বারণ, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বড় হলে কেউ খুব ভিতুও হতে পারে। কেউ সে সবের তোয়াক্কা করল না, এমনও হতে পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
child fear, trauma, phobia

কেন ভয়ে সিটিয়ে থাকছে আপনার বাড়ির ছোট্টটা? (অলংকরণ অভিজিত বিশ্বাস)

ছোট্ট মিনির বয়স আড়াই বছর। ভারী দুষ্টু। সঙ্গে আবার জেদিও। দু'বেলা খাবার খেতে ভীষণ সমস্যা করে। সকাল-সন্ধে নানা বায়না। বাবা মা কাউকেই ভয় ভক্তি করেনা মোটে। ভয় শুধু প্রতিবেশী অনিমেষ বাবুকে। না! কাকা-জ্যাঠা-আঙ্কল কিছুই বলে না। বছর ষাটেকের অনিমেষ বাবু মিনির 'দত্যি আঙ্কল'। দত্যি আঙ্কলের নাম শুনে সব দস্যিপনা কোথায় যেন উধাও হয়ে যায় মিনির। এবার নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন তো! আপনার জীবনেও এমন এক দত্যি আঙ্কল আছে না? রক্ত মাংসের না হলেও পর্দার পেছনে কোনও এক দত্যি আঙ্কল আপনার ওপর নজর রাখছে, এই ভয় আপনি সত্যিই কখনও পাননি বলুন?

Advertisment

আরও পড়ুন, নিজের পরিবারেই আপনার সন্তান লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে না তো? 

কোথা থেকে জন্ম হয় ভয়ের? কেন ভয় পেতে শুরু করে শিশুরা? প্রশ্নের উত্তরে ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট মধুমিতা মুখোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানালেন, "বিশেষ কিছুক্ষেত্রে ভয় জিনগত ভাবে মা বাবার কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে চলে আসে। বাকিটা জন্মের পর নানা পরিস্থিতিতে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে সন্তানের ভেতরে আসছে। যেমন কখনও কোথাও বিষধর সাপ দেখে বাবা মা বুঝিয়ে দেন, ওটা এমন কিছু, যাকে দেখে ভয় পাওয়ারই কথা। সেই থেকে সাপ দেখলে ভয় পায়, এবং সতর্ক হয়ে যায় শিশুটি। এ ধরনের ভয় কিন্তু সাস্থ্যকর। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাঁচায় এই ভয়টাই। আবার কিছু ভয় এনভায়রনমেন্টাল। যেমন ধরুন, সাইকেল চালাতে গিয়ে রাস্তায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটল। তারপর থেকে সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে একটা ভয় কাজ করতেই পারে শিশুটির"।

"তবে ভয় বা ফিয়ার কিন্তু আমাদের জীবনের খুব স্বাভাবিক একটা অংশ। কিন্তু ভয় যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে আতঙ্ক বা 'ফোবিয়া'ইয় পরিণত হয়, সেখানেই সমস্যা। এক্ষেত্রে বাচ্চার প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ছোট শিশুকে দিয়ে কিছু কাজ করাতে বাবা মায়েরা ভুতের ভয় দেখিয়ে ফেলেন। এটা থেকে ফাসমোফোবিয়া হতে পারে শিশুটির। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের বাহ্যিক আচরণ দেখে হয়তো বোঝাও গেল না, ফোবিয়া হয়েছে। দিব্যি খেলছে, ঘুরছে, ভুতের গল্প পড়ছে, সিনেমা দেখছে, কিন্তু অনেক বড় বয়সে গিয়ে বোঝা গেল শৈশবেই ফাসমোফোবিয়ার বীজ ঢুকে গিয়েছিল বাচ্চাটির মধ্যে", বললেন, মধুমিতা দেবী।

আরও পড়ুন, সন্তানের স্বাধীনতায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বাবা-মায়েরাই

এ ক্ষেত্রে বাচ্চাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। বাবা মায়েরা খেয়াল রাখুন, সন্তান বিশেষ কোনও পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতে চাইছে কি না। তাহলে কিন্তু সেই পরিস্থিতিতেই বারবার নিয়ে এসে পাশে থাকতে হবে অভিভাবককে। তাঁরা না পারলে মনস্তত্ত্ববিদ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেউ আরশোলা দেখলে ভয়ে কাণ্ড জ্ঞান হীন হয়ে পড়ে। কাউকে আবার হয়তো ছোটবেলায় আর পাঁচজনের সঙ্গে কেমন ভাবে মিশতে হবে, সেই প্রসঙ্গে এত কিছু শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রাণ খুলে মিশতেই পারেনি সে। অনেক বড় হয়েও অন্যের সঙ্গে মেশার ক্ষেত্রে নানা বাধা অনুভব করেছে সে।

বাবা মায়েদের বুঝতে হবে সব শিশু একরকম হয়না। একই ঘটনায় এক এক শিশু এক এক রকম প্রতিক্রিয়া জানায়। খুব বারণ, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বড় হলে কেউ খুব ভিতুও হতে পারে। কেউ সে সবের তোয়াক্কা করল না, এমনও হতে পারে। কোনও শিশু খুব তাড়াতাড়ি অ্যাংজাইটিতে ভুগতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে বাবা মাকে বুঝতে হবে আপনার সন্তান কী ধরণের। সেই মতো বোঝাতে হবে, আলোচনা করতে হবে সন্তানের সঙ্গে। আর সেটা বুঝে প্রয়োজন মত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

child abuse
Advertisment