চণ্ডী অনুযায়ী, মেধস ঋষির আশ্রমেই প্রথম চণ্ডীপুজো শুরু হয়েছিল। এই মেধস ঋষির আশ্রমটি ঠিক কোথায় ছিল, তা নিয়ে বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাবি, এই আশ্রমটি ছিল চট্টগ্রামের বোয়ালখালি উপজেলায় করলডেঙা পাহাড়ে। বেদানন্দ স্বামী পরিভ্রমণের সময় এই তীর্থস্থানটি আবিষ্কার করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫ এপ্রিল পাকিস্তানের বাহিনী মন্দিরটি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। কামানের গোলা দিয়ে আশ্রমটি ধ্বংস করে দিয়েছিল। প্রতিমা লুঠ করেছিল। তার পর সাত বছর এই মন্দিরে পুজোই বন্ধ ছিল। ১৯৮৯ সালে এই মন্দিরে পাথরের মূর্তি পুনরায় স্থাপিত হয়েছে।
বর্তমানে এখানে তারা কালী মন্দির, শিব মন্দির, সীতা মন্দির, চণ্ডী মন্দির-সহ ১০টি মন্দির রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সীতাকুণ্ড নামে এক পুকুর। প্রায় ৬৮ একর জায়গাজুড়ে এই গোটা মন্দির চত্বর। আশ্রমের প্রধান ফটক দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার গেলে ওপরে ওঠার সিঁড়ি পাওয়া যায়। প্রায় ১৪০টি সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলে মেধস ঋষির আশ্রম চোখে পড়ে। এই মন্দিরের পরই রয়েছে দেবী চণ্ডীর মূল মন্দির। যার একপাশে রয়েছে সীতাকুণ্ড বা সীতার পুকুর। পিছনে রয়েছে ঝরনা।
পশ্চিমবঙ্গ বা রাঢ়বঙ্গের বাঙালিদের মতে, মহর্ষি মেধসের এই আশ্রমটি রয়েছে দুর্গাপুরের কাছে গড়জঙ্গলে। ব্রহ্মানন্দ গিরি নামে এক সন্ন্যাসী ১৯৯১ সালে বোলপুরে থাকাকালীন এই মন্দিরের কথা জানতে পারেন। তিনি ১৯৯৪ সালে ওই মন্দিরের স্থানে পৌঁছন। সেখানে উইঢিপি ঢাকা প্রাচীন মন্দির, অশ্বত্থ এবং পাকুড় গাছ দেখতে পান।
আরও পড়ুন- কেন করবেন বাসন্তী পুজো ও এই সময়ে নবরাত্রি পালন, কী এর গুরুত্ব?
পরবর্তীকালে এখানে খোঁড়াখুঁড়ির জেরে মন্দির ও তার অংশ পাওয়া যায়। সেখানেই গড়ে ওঠে নতুন মন্দির। এই মন্দিরে পুজোর শেষে 'বন্দে মাতরম' বলা হয়। কারণ, স্থানীয়দের বিশ্বাস যে এখানে দেবী চৌধুরানি পুজো দিতেন। এখানে কিন্তু, দেবী দশভুজা নন। অষ্টভুজা দেবীর আরাধনা করা হয়। এমনিতে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের বাঙাল বলা হয়। আর রাঢ়বঙ্গের বাঙালিদের বলা হয় ঘটি। তাই এই দুই মেধস ঋষির আশ্রম নিয়ে বলা যায়, বাঙাল-ঘটির সাংস্কৃতিক বিবাদ রয়েছে।