Advertisment

ব্রিটিশ রাজের রোষে নিষিদ্ধ হয়েছিল এই মিষ্টি, 'জয় হিন্দ' সন্দেশের গল্প জানলে গর্ব হবে

জানুন এই মিষ্টির ইতিহাস সমৃদ্ধ অজানা গল্প

author-image
Shashi Ghosh
New Update
makhanlal das and sons sweet jay hind known as anti british sweet independence day

জয় হিন্দ সন্দেশ- এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

সময়টা ১৯৪২ সাল। সারা দেশ তখন ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মুখরিত। একের পর এক আন্দোলন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দেশবাসীর গর্জন দিনে দিনে আরও মজবুত হচ্ছে। কেউ গান, কেউ কবিতা কিংবা সংবাদপত্রে জোরালো ভূমিকা নিচ্ছেন সকলেই। স্বাধীনতা পেতেই হবে। আর এই সবকিছুর মাঝেই নিজেদের মতো করে লড়াইয়ে নামলেন কলকাতার মন্মথ দাস - এক প্রসিদ্ধ মিষ্টি বিক্রেতা।

Advertisment

দেশে তখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। আর প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ী মন্মথ দাস বানালেন 'জয় হিন্দ' সন্দেশ। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল এই মিষ্টির গল্প। গান, কবিতার পরে এবার মিষ্টির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল জাতীয়তাবাদের রেশ। তেরঙা এই মিষ্টি ক্রমশই জায়গা করে নিল দেশবাসীর মনে। এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করল, আর তাতেই ভয় পেলেন ব্রিটিশ আধিকারিকরা। কিন্তু এই মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের বিশেষ করে স্বাধীনতার নানা গল্প।

makhanlal das anti british sweet jay hind
জয় হিন্দ সন্দেশ- এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

তখনকার দিনে, জমিদার বাড়িতে হালুয়াই বসত। আর এই 'জয় হিন্দ' মিষ্টির একটাই লক্ষ্য ছিল - এই শব্দ যাতে মানুষের মুখে মুখে প্রচার পায়। খাবারের পাতে পড়তে শুরু করল এই মিষ্টি। এবং ধীরে ধীরে এই মিষ্টির সঙ্গেই আওয়াজ উঠতে শুরু করল - জয় হিন্দ। আর যত শোরগোল বাড়তে থাকল, ততই আতঙ্কে পড়লেন ব্রিটিশরা। তাঁদের মনে হল, এইভাবে চলতে থাকলে খুব মুশকিল। তাই এই মিষ্টি বন্ধ করতে হবে। একেবারেই তৈরি হতে দেওয়া যাবে না এই মিষ্টি। তখন, এই মিষ্টির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বড় বড় জমিদার বাড়ির মানুষেরা অর্থাৎ মল্লিক বাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ি এমনকি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িও। সেইখানে রীতিমতো হানা দিতে শুরু করেন ব্রিটিশরা।

makhanlal das anti british sweet jay hind
জয় হিন্দ সন্দেশ- এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

কিন্তু স্বাধীনতার স্বপ্ন যখন রক্তে মিশে যায় তখন আর কোনওভাবেই কিছু আটকানো যায় না। হাজার বাধা বিপত্তি সত্বেও ছোট্ট একটি ঘরেই এই মিষ্টি বানানো শুরু হয়, এবং মন্মথ দাসের দেখাদেখি নলিন দাস থেকে নকুর চন্দ্র সকলেই এই তেরঙা মিষ্টি বানাতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য একটাই, এই মিষ্টির মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ আরও বাড়িয়ে তোলা। জয় হিন্দ যেন মানুষের প্রতি শব্দে মিশে যায়।

makhanlal das anti british sweet jay hind
মাখন লাল দাসের দোকান- এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

এমনকি শোনা যায়, রায়বাহাদুররা এই মিষ্টি গোপনে প্রচার করতেন। সামনা সামনি না পারলেও দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ সামিল হয়েছিলেন তাঁরাও। এমনকি এই মিষ্টির মাধ্যমেই বার্তা আদান প্রদান করতেন মাস্টারদা, যতীন দাসের মতো ব্যক্তিত্বরা। কোনও চুক্তি হোক বা ব্রিটিশদের শায়েস্তা করার ছক - এই মিষ্টি সাংঘাতিক ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে। দেখতে দেখতে দেশ স্বাধীন হল, এবং এই মিষ্টির চাহিদা হারিয়ে গেল। এখন আর কোনও দোকানে এই মিষ্টি বানানো না হলেও মাখন লাল দাসের দোকানে আজও দশটা করে হলেও এই মিষ্টি বানানো হয়।

আরও পড়ুন ১৫ অগস্ট স্বাধীন হয়েছিল বিশ্বের এই দেশগুলিও, জানেন এই ইতিহাস?

makhanlal das anti british sweet jay hind
জয় হিন্দ সন্দেশ- এক্সপ্রেস ফটোঃ শশী ঘোষ

এটি আসলে পার্সি সন্দেশ। জাতীয় পতাকা উড়লে ঠিক যেরকম দেখতে লাগে সেই আদলে তৈরি। দোকানের বর্তমান কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস। আজও স্বমহিমায় বানিয়ে চলেছেন ২০০ বছরের ইতিহাসে লেপটে থাকা এই মিষ্টি।

kolkata Sweets Independence Day 2022
Advertisment