/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/07/IMG-20200718-WA0001.jpg)
বিরিয়ানি, মোগলাই আভিজাত্যে ঠাসা। নামে মোগলাই খানা হলেও বিরিয়ানি কিন্তু এখন বাঙালিদের হেঁশেলে বহুদিন ঢুকে পড়েছে। মাছ ভাত ছেড়ে বাঙালির এখন প্রথম প্রেম বিরিয়ানি-ই। বিরিয়ানির যাত্রা শুরু দিল্লি ও লখনৌতে যথাক্রমে মোগলাই ও অওধি কুইজিন হিসাবে। তবে একান্তই এখন বাঙালি খানা বিরিয়ানি। মফসসল থেকে শহর কলকাতা- বিরিয়ানির জয় জয়কার এখন সর্বত্র।
একটা বড় হাঁড়ি, তার গায়ে একটা লাল শালু জড়ানো। ওটাই যেন বিরিয়ানি প্রেমিকদের কাছে 'সিগন্যাল'। লাল শালু দেখে বিরিয়ানি প্রেমিকরা কি স্প্যানিশ ষাঁড়ের মতই দৌঁড়াবে, এমনটাই হয়ত ভাবেন পরিবেশকরা। তবে কখনো কি কেউ ভেবে দেখেছেন লাল শালু কেন জড়ানো থাকে বিরিয়ানি ডেকচির গায়ে!
লাল রঙের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। বিদেশি অতিথি যখন আসেন, তখন কিন্তু লালগালিচায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অন্য কোনো রঙের নয় কিন্তু! মাজার বা উরসের ক্ষেত্রে বাঁশের মাথায় লাল শালুর পতাকা ঝোলে। পান বা পনিরওয়ালার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আর বিরিয়ানি, হালিমের ডেকচির আইডেন্টিটির অন্যতম অংশ লাল শালু।
প্রতিটা রঙের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। লাল রঙের একেক দেশে অর্থ ভিন্ন ভিন্ন। কোনো দেশে লাল রং শৌর্য, আক্রমণ ও বিপদ অর্থে ব্যবহৃত হয়। লাল নিশানের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদলের নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগে। ট্রেন বা রাস্তার সিগনালে লালের অর্থ বিপদ। ফুটবল মাঠে লাল কার্ড দেওয়া হয় চরম শাস্তি হিসেবে।
তবে লাল মানে কিন্তু হৃদয়ের নিজস্ব রং। লাল রংকে সাধারণত ধরা হয় সৌভাগ্য, উষ্ণতার, আনন্দ-উৎসব ও ভালবাসার আবেগের প্রতীক হিসেবে। শুধু তাই নয়, উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রকাশের ক্ষেত্রেও হৃদয়ের লাল রং ব্যবহার হয়।
গোড়ার দিকের মুঘল শাসকরা ছিলেন পারস্য সংস্কৃতি প্রভাবিত। তারা তাদের জীবনে এই ধারা অনুকরণ করতেন। সম্রাট হুমায়ুন হলেন এর পথপ্রদর্শক। কারণ তিনি যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাকে পারস্য সম্রাট সেই লালগালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনাই দিয়েছিলেন। খাদ্য পরিবেশনে দরবারি রীতিগুলোতে বিশেষত্ব, রুপোলি পাত্রের খাবারগুলোর জন্য লাল কাপড় আর ধাতব ও চিনামাটির জন্য সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে নিয়ে আসা হতো। যা মুঘলরাও তাঁদেরর দরবারে চালু করেন। শুধু তাই নয় সম্মানিত ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য ছিল লাল পাগড়ির ব্যবস্থা।
বিরিয়ানি ভারতে পা রাখে মুঘল আমলে। খাদ্য পরিবেশনে এই প্রথা ও রঙের ব্যবহার শহর লখনউয়ের নবাবরাও অনুসরণ করতেন। সমাজ জীবনে তাই অভিজাত্য, বনেদি, উষ্ণতা প্রকাশে লাল বা লাল শালুর ব্যবহার চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। রঙের শহর কলকাতা ব্যতিক্রম হয় কী ভাবে?
তাই বিরিয়ানির আভিজাত্যের সঙ্গে হৃদয়ের কানেকশন বোঝাতেই শালুর রং স্রেফ লাল!