মহালয়ায় মাতৃপক্ষর সূচনা হয়ে গেল। কাঠি পড়ল পুজোর ঢাকে। আক্ষরিক অর্থেই সূচনা হয়ে গেল দুর্গা পুজোর। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনি। মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এই বিশেষ দিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। দুর্গাপুজোর সূচনা হয়, দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমেই।
Advertisment
রামায়ণ অনুসারে, বসন্ত কালে রাবণ দেবী দুর্গার পুজোর সূচ়না করেছিলেন। যা বর্তমানে বাসন্তী পুজো নামে পরিচিত। পরে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গার অকাল বোধনের আয়োজন করেন। যা অকালবোধন নামে পরিচিত। এরপর থেকেই শারদীয়া দুর্গা পুজো যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আদিকাল থেকেই রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রথের দিন হয়ে থাকে দেবীরমূর্তির কাঠামো পুজো। মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর হত দেবীর চক্ষুদান পর্ব।
কিন্তু, যুগের সঙ্গে রীতি বদলায়, মহালয়ার দিন হয় দেবীপক্ষের সূচনা। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরবর্তীকালে মহালয়ার দিনই প্রতিমার চেখ আঁকার চল শুরু হয়।
মেয়ের হাতে প্রাণ পাচ্ছে মায়ের চোখ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
চক্ষুদানের পরই হয়ে থাকে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা। মহাসপ্তমীর সকালে শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে দেবী দুর্গাকে কাজল পরানো হয়। প্রথমে ত্রিনয়ন, তারপর বাম চক্ষু ও শেষে ডান চক্ষু আঁকা হয় মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে। পর্দায় ঢাকা ঘেরাটোপে পুরোহিতের উপস্থিতিতে লেলিহান মুদ্রায় মোট ১০৮ বার বীজমন্ত্র জপ করা হয়। এর পরেই মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ীতে রূপে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী দুর্গা। তবে শুধু দুর্গার না, তার চার ছেলে মেয়ে - লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিক, এমনকী তাদের বাহনদেরও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
চলছে মায়ের চক্ষুদান পর্ব। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
তবে সময় পাল্টাচ্ছে। বর্তমানে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। তাই অনেক শিল্পীরা কাজের সুবিধার জন্য মহালয়ার আগেও ঘরের মেয়ে উমার চোখ আঁকেন। তবে মহালয়ায় চক্ষুদানের গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে তাৎপর্যবাহী। এদিনেরই পর থেকে ঢাকে কাঠি পড়ে যায় দুর্গাপুজোর।