এমনিতে হিন্দু দেবদেবীর পুজো দিনের বেলায় হয়। দিনের বেলায় দেবতারা জাগ্রত থাকেন। তাই দিনের বেলায় পুজো করাই হিন্দু শাস্ত্রের বিধান। কিন্তু, দুর্গাপুজোর বোধন হয় সন্ধের সময় বা রাতে। এর একটা কারণ আছে। আর, সেই কারণের উল্লেখ আছে কালিকাপুরাণে। রামায়ণ ও পুরাণ অনুযায়ী, রাবণ বধের জন্য রামচন্দ্র দেবী দুর্গার পুজো করেছিলেন। সেই সময়ে আশ্বিন মাসে দেবী দুর্গার পুজো প্রচলিত ছিল না। দেবী বাসন্তী রূপে দুর্গাপুজো হত বসন্তকালে। রামচন্দ্র সেই সময়ের আগেই দেবী দুর্গার পুজো করেছিলেন। তাই একে বলা হয় অকাল। অর্থাৎ, যার কাল হয়নি।
আবার শাস্ত্রমতে শরৎকাল হল দক্ষিণায়নের সময়। এই সময় বিষুবরেখা থেকে সূর্য ক্রমশ দক্ষিণ দিকে গমন করে। সূর্যের এই দক্ষিণায়নের সময়কালও ছয় মাস। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দক্ষিণায়নের এই ছয় মাস দেবতাদের কাছে একরাতের সমান। সেই সময় দেবতারা ঘুমান। তাই শাস্ত্রে রাতে পুজো করার বিধান নেই। অথচ, শরৎকালেই শ্রীরামচন্দ্র দুর্গাপুজো করেছিলেন। সেই কারণেও এক দুর্গাপুজোকে অকাল বলা হয়। শাস্ত্র আরও বলে, অকালে দেবী দুর্গার পুজো করতে গিয়ে তাঁকে ঘুম থেকে জাগাতে হয়েছিল। দেবী দুর্গাকে এই জাগিয়ে তোলাকেই বলা হয় বোধন। অকালে যেহুতু জাগিয়ে তোলা হয়েছিল, তাই এই বোধনকে বলে অকাল বোধন।
আরও পড়ুন- দুর্গাষষ্ঠীতে আরাধনা করা হয় দেবী কাত্যায়নীর, জানেন দেবী কী বর দেন?
আরও পড়ুন- দুর্গাষষ্ঠী কী, গণেশের জন্মের সঙ্গে দুর্গাষষ্ঠীর সম্পর্কই বা কী?
রামচন্দ্রকে রাবণ বধে সাহায্য করার জন্য এই বোধন করেছিলেন প্রজাপিতা ব্রহ্মা। তিনি রাতে এই বোধন করেছিলেন। সেই কারণে রাতে অকাল বোধন বা শরৎকালের দুর্গাপুজোর বোধন হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, শাস্ত্রমতে ব্রহ্মার আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী বেলগাছের এক বেলপাতায় কুমারী কন্যারূপে আবির্ভূতা হয়েছিলেন। তাই বোধনের সময় বেলগাছের দরকার হয়। বোধনের পর হয় দেবীর অধিবাস। যা হল, বেলগাছের তলায় দেবী দুর্গার আরাধনা। এই গাছের তলায় কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে নিয়ে দেবী একরাত কাটান। সপ্তমীর সকালে তিনি পা দেন বাপের বাড়িতে বা পুজোমণ্ডপে।