দুর্গাপুজোর তিথিগুলোর সঙ্গে 'মহা' শব্দটি জুড়ে থাকে। আগে মহাসপ্তমী থেকে মহানবমী পর্যন্ত তিথিগুলোর সঙ্গে 'মহা' শব্দটি জুড়ে থাকত। এরপর ষষ্ঠীর সঙ্গেও জুড়েছে। তারপর পঞ্চমী আর চতুর্থীর সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে 'মহা' শব্দ। 'মহা' শব্দের অর্থ হল অতিশয়, বড়। এখানে উল্লেখযোগ্য তিথি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে এর সঙ্গে মহালয়া শব্দকে গুলিয়ে ফেলেন। কারণ, সেখানেও মহা শব্দটি যুক্ত রয়েছে।
মহালয়ার সঙ্গে দেবীপক্ষের তিথির ফারাক
যদিও, মহালয় শব্দটি এসেছে মহা+আলয় থেকে। যেখানে, মহ শব্দের অর্থ প্রেত। আর, আলয় শব্দের অর্থ আশ্রয়। এই দুটো শব্দ যুক্ত করে হয়েছে মহালয়। সেখান থেকে মহালয়া। এক্ষেত্রে অনেকে প্রশ্ন তোলেন যে, তাহলে তো মহালয় বললেই হত। মহালয়া বা শব্দের স্ত্রীলিঙ্গের রূপ কেন ব্যবহার করা হল? সেকথা মাথায় রেখে অনেক বিশেষজ্ঞই বলেন যে, পিতৃপক্ষের অন্ধকার পেরিয়ে দেবীপক্ষের আলোয় উজ্জ্বল আগমন। একথা মাথায় রেখে মহালয়ের বদলে শব্দটি মহালয়া করা হয়েছে।
কেন আগে যুক্ত হয়েছে 'মহা' শব্দ?
কিন্তু, প্রশ্নটা হল দেবী দুর্গার তিথিগুলোর সঙ্গে কেন 'মহা' শব্দটি যুক্ত হয়েছে। এখনও আমরা প্রতিপদ থেকে তৃতীয় পর্যন্ত দেবীপক্ষের দিনগুলোয় 'মহা' শব্দটি যোগ করি না। এক্ষেত্রে শাস্ত্রজ্ঞরা মনে করছেন, দুর্গাপুজো এখন এগিয়ে এসেছে। আগেই পুজোর উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে। অতীতে যেখানে বোধন দিয়ে পুজো শুরু হত, এখন পৃথিবীটা সংবাদমাধ্যমের দৌলতে ছোট হয়ে আসায় জানা যাচ্ছে যে, বহু বনেদি বাড়িতেই ষষ্ঠীর আগে থেকেই দুর্গাপুজোর চল রয়েছে। আর, সেসব থিম পুজোর দৌলতে নতুন যুক্ত হয়নি। এই সব পুজো চলে আসছে কোনওটা ১৫০, কোনওটা বা ২০০ বছর ধরে। একটা সময় সেই সব পুজো অত্যন্ত রমরম করে চলত। উপস্থিত থাকতেন বহু বিশিষ্টরা। আর, সেই সব কথা মাথায় রেখেই 'মহা' শব্দটিও ক্রমশ জুড়ে গিয়েছে আপাতত চতুর্থী তিথি থেকেই।
আরও পড়ুন- দুর্গাপূজায় মহানবমীর বিশেষ গুরুত্ব আছে, জানেন সেটা কী?
নবমী তিথিতে 'মহা' শব্দের ব্যবহার
তবে, শাস্ত্রের কথা ধরলে- কালিকাপুরাণে দুর্গাপুজোকে মহোৎসব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, সেখানে দুর্গাপুজোর তিথির মধ্যে কেবল মহানবমীর উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'ততেঽ নু নবমী যা স্যাৎ সা মহানবমীস্মৃতা। সা তিথিঃ সর্ব্বলোকানাং পূজনীয়া শিবপ্রিয়া।।' যার অর্থ, মহানবমী শব্দটি শাস্ত্রসম্মত। আর, সেই কারণে এখনও বহু জায়গাতেই জগদ্ধাত্রী পুজো কেবল মহানবমীতেই আয়োজন করা হয়। একদিনেই চলে গোটা পূজাপাঠ। কারণ, শাস্ত্রমতে এই মহানবমীতেই দেবী শিবেরও আরাধ্যা বা সিদ্ধিদাত্রী হিসেবে ধরা দিয়েছিলেন। সেই মতো দুর্গাপুজোয় মহানবমীতেই মোটামুটি শেষ হয়ে যায় পূজাপাঠ। দশমীতে থাকে দেবীর সংক্ষিপ্ত পুজোপাঠ। সেটা দেবীর বিদায়, দেবী অপরাজিতার পুজো- এগুলো।