করোনা আতঙ্ক এবং লকডাউনের জোড়া ফনায় কার্যত বিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। এর মধ্যেই একাধিক সংস্থার করা সমীক্ষায় উঠে এল লিঙ্গবৈষম্যের অভূতপূর্ব ছবি৷ সমীক্ষকদের দাবি, লকডাউনের সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে গিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়ছেন কর্মরতা মায়েরা। ঘরে স্বামী থাকলেও অধিকাংশ সময় সন্তান সামলাতে হচ্ছে মায়েদেরই। ফলে টান পড়ছে নিরবিচ্ছিন্ন ওয়ার্কিং আওয়ার বা শ্রমঘন্টায়৷ চাকরি ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছেন অনেক কর্মরতা মা।
ইন্সটিটিউট অফ ফিসকাল স্টাডিজ (আইএফএস) এবং ইউসিএল ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কর্মরত বাবাদের তুলনায় কর্মরতা মায়েরা অনেক কম সময় নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অফিসের কাজ করতে পারছেন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন এমন বাবারা গড়ে তিন ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অফিসের কাজ করতে পারলে কর্মরতা মায়েদের ক্ষেত্রে এই সময়ের পরিমাণ মাত্র ১ ঘন্টা। কাজ হারানোর সংখ্যাতেও মায়েরা অনেক এগিয়ে রয়েছেন বাবাদের তুলনায়। সমীক্ষকদের আশঙ্কা, লকডাউনের জেরে ব্যপক বেতন বৈষম্যের শিকার হতে হবে কর্মরতা মহিলাদের৷
আরও পড়ুন, লকডাউনে ওঁরা যেন শুধু মা নন, দুগ্গা মা!
গত ২৯ এপ্রিল থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ৩৫০০ হাজার পরিবারের কর্মরত বাবা-মায়েদের নিয়ে সমীক্ষা করেছিলেন আইএফএসের সমীক্ষকেরা। তাতে দেখা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকেই চাকরি ছাড়তে শুরু করেছেন কর্মরতা মায়েরা। অধিকাংশ পরিবারেই সন্তানের যাবতীয় দেখভাল করতে হচ্ছে মায়েদেরই৷ কর্মরত বাবাদের অধিকাংশই এই দায়িত্ব এড়াচ্ছেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবে কর্মরতা মায়েদের উপর খড়গহস্ত হচ্ছে সংস্থাগুলিও। লকডাউনের মধ্যে মায়েদের চাকরি যাওয়ার পরিমাণ বাবাদের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি৷ চাকরি ছাড়ার পরিসংখ্যানেও অনেক এগিয়ে মায়েরা। এক্ষেত্রে ফারাক প্রায় ৪৭ শতাংশের।
কর্মরতা মায়েদের শ্রমঘন্টার পরিমাণও ব্যপক পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। আগে সপ্তাহের কাজের দিনে গড়ে ৬.৩ ঘন্টা কাজ করতেন মায়েরা। এখন লকডাউনের সময় সন্তান ও সংসার সামলে তাঁরা কাজ করতে পারছেন গড়ে ৪.৯ ঘন্টা। অন্যদিকে বাবাদের শ্রমঘন্টার দৈনিক গড় ৮.৬ ঘন্টা থেকে কমে হয়েছে ৭.২ ঘন্টা।
আইএফএসের সিনিয়র রিসার্চ ইকোনমিস্ট অ্যালিসন অ্যান্ড্রুর কথায়, "লকডাউনের শুরু থেকেই কর্মরতা মায়েদের কাজ ছাড়ার পরিমাণ বাবাদের চেয়ে অনেক বেশি৷ যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরাও পুরুষদের তুলনায় নিরবিচ্ছিন্ন কাজের সময় পাচ্ছেন অনেক কম। এর মূলে রয়েছে সাংসারিক কাজের দায়ভার, বিশেষত সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব। আমাদের আশংকা,লকডাউনের ফলে হয়তো আগামীদিনে পুরুষ ও নারীকর্মীদের মধ্যে বিপুল বেতনবৈষম্য তৈরি হতে পারে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন