World Environment Day slogan: আমাদের গন্তব্য, প্লাস্টিক-মুক্ত ভবিষ্যৎ
ভারত এবছর 'বিট প্লাষ্টিক পলিউশন' (প্লাস্টিক দূষণ থামান) থিম নিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের 'হোস্ট কান্ট্রি' বা আহবায়ক রাষ্ট্র। ভারতের পরিবেশের পক্ষে এবছরের সবচেয়ে আশাপ্রদ খবর নিঃসন্দেহে মুম্বইয়ের ভার্সোভা বিচে অতীব কষ্টসাধ্য এবং যত্নশীল সাফাই অভিযানের পর সেখানে অলিভ রিডলে টার্টেলদের প্রত্যাবর্তন, বছর কুড়ি পরে।
কিন্তু যেখানেই আশার আলো, সেখানেই অন্ধকারও বটে।
আধুনিক প্রযুক্তির দৌলতে আজ আমরা ১৯৬৪ সালে যতটা প্লাস্টিক উৎপাদন করতাম, তার প্রায় ২০ গুণ বেশি করছি। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরে উৎপাদন বাড়বে আরও দু'গুণ, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে আবার দ্বিগুণ হবে সেই উৎপাদন।
প্লাস্টিকের প্রতি আমাদের আকর্ষণ নিরন্তর। কেনা, ব্যবহার করা, ফেলে দেওয়া, আবার কেনা...প্লাস্টিক বোতলে ভরা আমাদের সুস্বাদু পানীয়, প্লাস্টিকে মোড়া আমাদের খাদ্য, ফাস্ট ফুড পরিবেশিত পলিস্টিরিন কন্টেনারে, সঙ্গে প্লাস্টিকের কাঁটা চামচ। ধোয়ামোছার বালাই নেই, ফেলে দিয়ে ভুলে গেলেই হল। সত্যি যদি তাই হত, আজ প্লাস্টিক-মুক্ত পৃথিবী থিমের ওপর ভর করে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করার।
প্রশান্ত মহাসাগরে একাংশে ভাসমান প্লাস্টিকের তাল এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে তা আকারে মায়ানমার বা ফ্রান্সের মত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে অনায়াসে। এবং এতেই শেষ নয়, প্রতি মিনিটে এই ভাসমান প্লাস্টিক শহরে যোগ হচ্ছে অন্তত এক লরিভর্তি প্লাস্টিক। এমনকি উত্তর মেরুও সুরক্ষিত নয়। রেকর্ড পরিমান প্লাস্টিক পাওয়া গেছে সেখানেও।
পৃথিবীর সমস্ত প্লাস্টিক অবশ্যই স্থলে উৎপাদিত, এবং সমুদ্রে যত পরিমাণ প্লাস্টিক আজ ভাসছে, তার দশ ভাগের নয় ভাগই সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে দশটি নদীর মাধ্যমে, যাদের মধ্যে আটটিই এশিয়াতে অবস্থিত, এবং এদের মধ্যেও প্রধান হল গঙ্গা, ইয়াংতজে, ইয়েলো, পার্ল, এবং মেকং নদী। সম্প্রতি, নরওয়ের উপকূলে একটি কারভার্স বিক্ড হোয়েল পাওয়া যায়, যার পেটের ভেতর ছিল ৩০ টি প্লাস্টিকের ব্যাগ। একইভাবে, স্পেনের সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি স্পার্ম হোয়েলের পেট থেকে বেরোয় ২৯ কিলো প্লাস্টিক। আলব্যাট্রস পাখিরা রঙচঙে প্লাস্টিক দেখে খাদ্য ভেবে তাদের শাবকদের মুখে বিভ্রান্ত হয়ে তুলে দিচ্ছে বোতলের ছিপি, যার অবধারিত ফল অবরুদ্ধ অন্ত্র, এবং ধীরগতির, অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু।
প্রাণীজগতে প্লাস্টিকের এই দাপট মানুষকে স্পর্শ করবে না ভাবছেন? ভুল ভাবছেন তবে। খুব শিগগির এমন দিন আসতেই পারে, যে মাছ আপনার রান্নাঘর হয়ে আপনার খাওয়ার টেবিলে পৌঁছল, তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্লাস্টিক।
তবে সব অন্ধকার হয়ে যায়নি এখনও। কিছু দেশ যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে। কেনিয়াতে প্লাস্টিক ব্যাগ সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ, গ্রেট ব্রিটেনের বড় বড় সুপারমার্কেটগুলি প্রতিজ্ঞাবোধ হয়েছে যে তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাবে। এবং গতমাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এমন বেশ কয়েকটি প্লাস্টিক পণ্য বর্জন করার, যেগুলির কম হানিকারক বিকল্প রয়েছে।
(তথ্য সৌজন্যে: IANS)