চোখের ওপর চাপ, কিংবা ব্যথা, অথবা নালী শুকিয়ে গিয়ে জল পড়া সবকিছুই কিন্তু চোখের পক্ষে বেশ ভয়াবহ প্রমাণিত হতে পারে! গ্লুকোমা সমস্ত সমস্যা সম্মিলিত একটি চোখের রোগ যার কারণে চোখের লাল ভাব, বমি বমি ভাব, অনেক সময় দৃষ্টিতে রামধনুর অবয়ব অনুভূত হয়। গ্লুকোমা বিশ্বের দ্বিতীয় প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্বের এক ভয়াবহ কারণ। এর ফলে রাত্রিবেলা দেখতে যেমন অসুবিধা হয় তেমনই আলোর ঝলকানি তে চোখের ওপর প্রভাব পড়ে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নেহা চতুর্বেদি বলছেন, এটি চোখের এমন একটি রোগ, যা অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি করে। মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পর্কিত এই স্নায়ু, আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভাল করে। এটি ইন্ট্রাও কুলার প্রেসার নামে চোখের বর্ধিত চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতি বছর ১২ই মার্চ বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এটি নীরবে দৃষ্টির ক্ষতি করতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, যত বয়স বাড়ে ততই এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এবং ৪০ বছর হলেই এটি আরও বেশি মাত্রায় প্রস্ফুটিত হয়।
ভারতে কম করে ১১ কোটি মানুষের গ্লুকোমা রয়েছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন বয়েসের মানুষদের শরীরে এটিকে দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় জন্মসময় থেকেই এটি শিশুদের শরীরে থাকে, তখন একে জন্মগত গ্লুকোমা বলা হয়। চোখের স্নায়ুতন্ত্রের এই রোগটি, বংশগত হতেই পারে, কিংবা চোখের আশপাশে আঘাত, চোখের ড্রপ আকারে স্টেরয়েড নিতে থাকলে এই জাতীয় রোগের সূত্রপাত হয়। এর কোনও লক্ষণ নেই, শুধু একটাই বিষয়, সময়ের সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। এবং নিয়মিত চোখের স্ক্রিনিং করানো খুবই দরকার। অপটিক স্নায়ুর গঠন পরীক্ষার সঙ্গেই চোখের অন্যান্য নার্ভের পরীক্ষা করা খুব দরকার। কয়েকটি বিশেষ মূল্যায়ণ, যেমন ভিসুয়াল ফিল্ড টেস্টিং, কর্নিয়ার ধাত ছাড়াও অপটিক নার্ভের স্ক্যান করতে হবে। এতে রোগের মাত্রা বোঝা সম্ভব, এবং অবশ্যই কোনরকম চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কাজ করা উচিত নয়।
এর কোনও ট্রিটমেন্ট রয়েছে?
এখনও পর্যন্ত গ্লুকোমার কোনও ট্রিটমেন্ট নেই তবে যাতে এটির মাত্রা না বেড়ে যায় সেইদিকে বিবেচনা করেই, বিভিন্ন থেরাপির দ্বারা ব্যাধিকে রোধ করা যেতে পারে। প্রাথমিক ভাবে, চোখের ড্রপ ব্যবহার করা সবথেকে ভাল এবং এটি সারাজীবনের জন্য করে যেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অনেকেই অস্ত্রপ্রচার করাতে পারেন তাতে অল্প হলেও সুরাহা হয়। অনেকেই লেজার সার্জারির সাহায্য নেন, তাতে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যায়।
এজাতীয় ট্রিটমেন্ট এর পরেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেমন নিয়মিত স্ক্রিনিং, ছয়মাস অন্তর চোখের পরীক্ষা, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের ওজন বৃদ্ধি করা, ক্যাফেইন বেশি গ্রহন করা। ধূমপান এড়ানো ভাল। চিকিৎসকদের বক্তব্য, যারা বেশিক্ষণ মাথা নিচু করে থাকেন অথবা মাথা নিচু করে ব্যায়াম করেন সেটি বন্ধ করে দিতে হবে। মাথা উচু করে জল খাওয়া কিংবা চাপ গ্লুকোমার ক্ষেত্রে খারাপ হতে পারে।