ম্যালেরিয়া সচেতনতা প্রচারে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর 'বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস' পালন করে চলেছে। ম্যালেরিয়া দিবস ২০২২-এর থিম হল, ‘ম্যালেরিয়া রোগ কমানো এবং জীবন বাঁচাতে উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগান’। ম্যালেরিয়া মুলত মশাবাহিত একটি প্রাণঘাতী রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর ২০ কোটির বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়ার কারণে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান। মশাবাহিত এই রোগটির প্রাদুর্ভাব ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায় মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। সাধারণত মশার কামড়ের ১০ থেকে ১৫ দিন পর রোগের উপসর্গগুলি দেখা যায়।
ম্যালেরিয়া রোগের প্রধাণ লক্ষণ-
মনিপাল হাসপাতালের ইন্টারন্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক অরবিন্দ জিএম বলেন, 'ম্যালেরিয়ার প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যাথা, হালকা ঠান্ডা লাগা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে রোগীর চিকিৎসা শুরু না হলে রোগী গুরুতর অসুস্থতার সৃষ্টি করে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণসমূহ-
নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা এ রোগের প্রধান লক্ষণ। জ্বর সাধারণত ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে। এছাড়াও মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, অনিদ্রা এই রোগের অন্যতম প্রধাণ লক্ষণ। সেইসঙ্গে খাবারের প্রতি অনীহা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিবমি ভাব অথবা বমি, হজমের গোলযোগ এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।
অত্যধিক ঘাম হওয়া, খিঁচুনি, ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা, মাংসপেশি, তলপেটে ব্যথা অনুভব, যকৃত বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যাতেও অনেকেই ভোগেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ম্যালেরিয়ার জটিলতম ধরণ হল ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া’। সাধারণ ম্যালেরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখে দেয়। রক্তশূন্যতা, কিডনির অসুখ, শ্বাসকষ্ট হওয়া, জন্ডিস, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। জরুরি চিকিত্সা না পেলে এসব রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।
রোগ নির্ণয় ও ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা-
ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে অবশ্যই আগে পরীক্ষা করাতে হবে। যদি ম্যালেরিয়া ধরা না পড়ে তাহলে পরপর তিন দিন পরীক্ষাটি করতে হবে।যদি ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকদের কথায়, ম্যালেরিয়ার জ্বরের সঙ্গে সাধারণ ভাইরাল জ্বর, ডেঙ্গি জ্বরের বিশেষ কোনও তফাত বোঝা মুশকিল। তবে জ্বর হলে এবং তা থেকে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ম্যালেরিয়া থেকে জ্বর হলে মাথাব্যথা থাকবে, সঙ্গে গা-হাত-পা ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজে, গা বমি ভাবও থাকতে পারে। বমিও হতে পারে, খিদে কমে যায় এমনই উপসর্গ দেখা যায় ম্যালেরিয়ায়।
শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে ম্যালেরিয়া মারাত্মক আকার নিতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবিটিস বা হৃদরোগের সমস্যা থাকলে ম্যালেরিয়া মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি-সহ যে কোনও মশাবাহিত অসুখ আটকে দেওয়ার একমাত্র উপায় মশার কামড় থেকে দূরে থাকা আর মশারি ব্যবহার করা। বাড়ি বা পাড়ায় কোথাও জল জমতে দেওয়া চলবে না। পাড়ার নর্দমা ও জলা জায়গার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।