World Mosquito Day: সভ্যতার ইতিহাসে প্রাণনাশকারী সব জীব জন্তুর জন্য আপনার মায়া মমতা, সমবেদনা উথলে উঠলেও এদের জন্য আপনি শুধু বিরক্তই হয়েছেন। কাজ সেরে দিনের শেষে ক্লান্তি ভুলে বিছানায় একটু টানটান হবেন। অমনি কানের কাছে বো-ও-ও-ও করে দিল ঘুমের বারোটা বাজিয়ে। রাত জেগে সপরিবারে ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল দেখছেন, উত্তেজনা ধরে রাখতে পারছেন না, এমন সময় কুটুস করে একটা কামড়। কিম্বা খান পনেরো সরকারি চাকরির পরীক্ষার ইন্টার্ভিউতে উতরোতে না পেরে আপনি যখন হতাশ, ডাক পেলেন শেষটায়। প্রস্তুতি ভালোই। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন। টেবিলের ওপার থেকে সবে মাত্র দ্বিতীয় প্রশ্ন ছোড়া হয়েছে আপনার দিকে। ছোট্ট একটা মশা, নিতান্তই নিরীহ, কেমন করে পথ হারিয়ে ঢুকে গেল আপনার জামায়। ব্যস!
চেহারায় এই এতটুকু হলে কী হবে? হেলাফেলা করা যাবে না মোটেই। আকছার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে এরাই। সারা পৃথিবী জুড়ে। একশ বছরে হাঙরের কবলে মৃত্যু হয় যত মানুষের, মশার কারণে একদিনে হয় তার ঢের বেশি। দশ বছরে নাকি মশার কামড়ে প্রাণ যায় ৬০ লক্ষ মানুষের।
আরও পড়ুন: প্রবাসিনীর চিঠি: কানাডায় ইউথেনেসিয়া
বাংলা তথা কলকাতার সঙ্গে আবার মশার খাস আত্মীয়তা। স্যার রোনাল্ড রস কলকাতাতে বসেই আবিষ্কার করেছিলেন যে ম্যালেরিয়া রোগের বাহক আসলে মশাই। এখনকার এস এস কে এম (তৎকালীন প্রেসিডেন্সি জেনারেল) হাসপাতালের এক ঘরে বসে এই আবিষ্কার করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রোনাল্ড রস। তখন থেকে, মানে সেই ১৮৯৭ সাল থেকে, আজকের দিনটি ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত হয়েছে বিশ্ব মশা দিবস হিসেবে।
আজ ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবস। না এই দিনে কেউই পরিবেশ রক্ষার্থে মশার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন না। কিম্বা 'ডোবা পচাও/ মশা বাঁচাও' স্লোগান নিয়ে মিছিলও বেরোয়ে না। মশাবাহিত রোগসমুহ সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহল করতেই পালিত হয় দিনটি। আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি অবশ্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মশা থেকে বাঁচার সহজ উপায় বার করার। ফলপ্রসূ কয়েকটা উপায়ের উল্লেখ করা হল এখানে:
টার্মিনেটর ট্রেন
রাজধানী শহরে এদের বলা হয় মসকিটো টার্মিনেটর। এখানে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছড়ানো হয় এমন এক রাসায়নিক, যা কিনা মশার লার্ভাকে বেড়ে উঠতেই দেয় না।
কার্বন-ডাইঅক্সাইড ফাঁদ
এত জীবজন্তু থাকতে মশা সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছেই আসে কেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের শ্বসন পদ্ধতির জন্য। মশা নাকি কার্বন-ডাইঅক্সাইড দ্বারা আকর্ষিত হয়। তাই মানুষের কাছাকাছি ঘোরে। কৃত্রিম ভাবে কার্বন-ডাইঅক্সাইড জমিয়ে ফাঁদ তৈরি করে টোপ ফেলা হয়। মশা একে মানুষ ভেবে ভুল করে খুব সহজেই ফাঁদে ধরা দেয়।
আরও পড়ুন: আপনার সন্তান অ্যাংজাইটিতে ভুগছে না তো? কী ভাবে বুঝবেন
মশাকে বিকর্ষণ করে এমন স্মার্ট ফোন
আপনার ফোনের প্রযুক্তি মশাকে আপনার থেকে দূরে রাখতে পারে না? তাহলে আপনার ফোন যথেষ্ট 'স্মার্ট' নয়। সম্প্রতি এলজি বাজারে এনেছে এমন ফোন। এই ফোনে আল্ট্রাসোনিক নয়েজ ব্যবহার করা হয়, যা আপনার কানে না পৌঁছলেও মশার কানে পৌঁছে যায় ঠিক। স্বভাবতই মশা একেবারেই এর কাছে আসে না।
জেনেটিকালি মডিফায়েড মশা
ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, হলুদ জ্বর, জিকা ইত্যাদি মারণ রোগ ছড়ায় যে মশা, তার নাম ইডিস ইজিপ্টি। জেনেটিক মডিফিকেশন পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পুরুষ ইডিস ইজিপ্টি মশার ওপর বন্ধ্যাত্ব আরোপ করা হয়, ফলে নতুন মশার জন্মই হয় না।
অন্য পদ্ধতিটি একটু জটিল। এক্ষেত্রে কিছু মশার শুক্রাণু কোশে লিথাল জিন বাইরে থেকে ঢুকিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর নতুন মশা জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই মরে যায়।
RNA প্রযুক্তি
এর মাধ্যমে RNA ভিত্তিক কীটনাশক ব্যবহার করে স্ত্রী ইডিস ইজিপ্টি মশাকে মেরে ফেলা হয়।