প্রতিপদ (সোমবার) থেকেই শুরু হয়ে গেল দেবীপক্ষ। সোমবার থেকে টানা নয় দিন মহাদেবীর ভিন্ন ভিন্ন রূপের আরাধনা করবেন ভক্তরা। নবদুর্গার প্রথম রূপ দেবী শৈলপুত্রী। দেবীকবচেও একথাই বলা হয়েছে। শৈলপুত্রী শব্দের অর্থ হল পর্বতের কন্যা। দেবী হলেন পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা। তাই তাঁর নাম শৈলপুত্রী। কালিকাপুরাণ-এ উল্লিখিত চৌষট্টি যোগিনীর অন্যতমাও হলেন দেবী শৈলপুত্রী।
কথিত আছে, গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর পত্নী মেনকা দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য তপস্যা করছিলেন। তাঁদের ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে সতী দেবতাদের পরিত্রাণের জন্য হিমালয়ের গৃহেই পুনর্জন্ম গ্রহণ করলেন। শৈলরাজের পুত্রীরূপে মহামায়া দুর্গা হলেন শৈলপুত্রী। সেই কারণে শৈলপুত্রীর প্রণাম মন্ত্রে বলা হয়েছে, 'শৈলপুত্রীং প্রপদ্যে, পুনর্ভুং ময়োতুম্। কন্যাং শিখলিনি পাশহন্তাং যুবতীং কুমারীণীম্।।'
হিমালয়ের কন্যা বলে দেবীর অপর নাম হৈমবতী। দেবীর এই হৈমবতী নামটি সামবেদীয় কেন উপনিষদ্-এও পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়েছে- 'স তস্মিন্নেবাকাশে স্ত্রিয়মাজগাম বহুশোভমানামুমাং হৈমবতীং তাং হোবাচ কিমেতদ্ যক্ষমিতি।। (কেন, ২৫)'
দেবী শৈলপুত্রীকে কেমন দেখতে? দেবীর মাথায় অর্ধচন্দ্র শোভিত। তাঁর বাহন শ্বেত ষাঁড় বা নন্দী। দেবী দ্বিভুজা। তাঁর একহাতে থাকে ত্রিশূল। অন্য হাতে পদ্ম। দেবীর ভৈরব শৈলেশ্বর। দেবী শৈলপুত্রী ভক্তকে বাঞ্ছিত ফল-সহ যশ দেন।
এই ব্যাপারে শৈলপুত্রী স্তোত্রে বলা রয়েছে- 'প্রথমদুর্গা ত্বং হি ভবসাগরতারিণী। ধন ঐশ্বর্যদায়িনী শৈলপুত্রী প্রণমাম্যহম্।। ত্রিলোকজননী ত্বং হি পরমানন্দপ্রদায়িনী । সৌভাগ্যারোগ্যদায়নী শৈলপুত্রী প্রণমাম্যহম্।। চরাচরেশ্বরী ত্বং হি মহামোহবিনাশিনী। ভুক্তিমুক্তিদায়নী শৈলপুত্রী প্রণমাম্যহম্।।'
আরও পড়ুন- কখন শুরু ষষ্ঠী, কখনই বা শেষ, জেনে নিন এবারের দুর্গাপুজোর খুঁটিনাটি
কাশী অথবা বারাণসীর আলাইপুরার মড়িঘাটের কাছে দেবী শৈলপুত্রীর মন্দির আছে। বর্তমান মন্দিরটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসস্তুপের ওপর নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের প্রাচীন কুয়োটি এখনও আছে। দেবীর মূল মন্দিরটি অপেক্ষাকৃত ছোট।
এই মন্দিরের গর্ভগৃহের পশ্চিমদিকের দেওয়ালে শৈলপুত্রীর কষ্টিপাথরের বিগ্রহ রয়েছে। এর কুণ্ডের মধ্যে রয়েছে কাশীর প্রাচীন শিবলিঙ্গ, শৈলশ্বর। দেবীর বিগ্রহ ও শিবলিঙ্গের উচ্চতা প্রায় একহাত ছাতার মত। শারদীয়া এবং বাসন্তী নবরাত্রির প্রথম দিনে এই শৈলপুত্রী মন্দিরে ভিড় জমান ভক্তরা।