ছয় চাকার সওয়ারি, ভারতের প্রথম মহিলা ট্রাক চালক যোগিতা রঘুবংশী

ট্রাক ওভারলোডিংয়ের তিনি ঘোরতর বিরোধী। দুই, তিনি চান ট্রাক চালকেরা চিরাচরিত প্রথা মেনে নেশাভাং করে রোজগারের টাকা না উড়িয়ে নিজেদের জীবন শুধরে নিন।

ট্রাক ওভারলোডিংয়ের তিনি ঘোরতর বিরোধী। দুই, তিনি চান ট্রাক চালকেরা চিরাচরিত প্রথা মেনে নেশাভাং করে রোজগারের টাকা না উড়িয়ে নিজেদের জীবন শুধরে নিন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভারতের প্রথম মহিলা ট্রাক চালক যোগিতা রঘুবংশী। এক্সপ্রেস ফোটো: শশী ঘোষ

আইনজীবী হতে পারতেন। হলেন ট্রাক চালক। মানে দুই বা চার চাকা নয়, একেবারে ছয় বা আট চাকাওয়ালা এক দৈত্যের মত গাড়ি। যেটি অক্লেশে চালান যোগিতা রঘুবংশী, ভারতের প্রথম মহিলা ট্রাক চালক।

Advertisment

সম্প্রতি কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে তাঁকে সম্মান প্রদান উপলক্ষ্যে শহরে এসেছিলেন যোগিতা। অনুষ্ঠানের ফাঁকে কিছু কথা হলো তাঁর সঙ্গে। বললেন কেন বারো বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর এই ব্যাতিক্রমী পেশা বেছে নিলেন তিনি। "আমার স্বামী মারা যাওযার পর তৎক্ষণাৎ রোজগারের প্রয়োজন ছিল। তার ওপর ছিল বিনা খরচায় সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ।" আইনজীবি হলেন না কেন? "করেছিলাম তো দু-মাস প্র্যাকটিস। কিন্তু কাউকে চিনতাম না, রোজগারও তেমন হচ্ছিল না। আর আমার তখন যা অবস্থা, মাস মাইনের জন্য অপেক্ষা করা মুশকিল ছিল।"

আরও পড়ুন, Health Tips for Summer Heat Wave: তীব্র গরমে মাথায় রাখুন এই দিকগুলো, নচেৎ বিপদ অবধারিত

publive-image ট্রাক চালাচ্ছেন যোগিতা। এক্সপ্রেস ছবি- শশী ঘোষ

Advertisment

যোগিতার আদি বাড়ি ভোপালে। বলা বাহুল্য, বাবা-মায়ের মতের বিরূদ্ধেই তাঁর বর্তমান পেশায় এসেছিলেন তিনি। আজও আমরা প্রশ্ন করতে বাধ্য হই, রাত্রে যখন আপনি বাইরে কাজ থাকেন, বর্তমানে দেশে নারী নিরাপত্তা নিয়ে যে হাজারো সমস্যা, আপনাকে মুশকিলে পড়তে হয় না? যোগিতার সাফ জবাব, "মহিলা এবং পুরুষের মধ্যে আমি ফারাক দেখি না। যারা দেখেন, তাঁরাই এই সমস্যা তৈরি করেছেন। এবং অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের দুর্বল করে রেখেছেন।" নিজেকে কোনভাবেই দুর্বল মানতে নারাজ যোগিতা। অবসর সময়ে তাই নিজের সেলাইয়ের শখ কাজে লাগিয়ে নিজেই তৈরি করেন নিজের পোশাক। ছেলেমেয়েদেরও সেভাবেই বড় করেছেন। তারাও আজ নিজেদের ইচ্ছেমত পেশা বেছে নিতে সক্ষম।

তাই পুরুষ সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে যোগিতার চোখেমুখে দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট। চোখ চোখ রেখে বলতে পারেন, "আপনিই এই পেশাকে শুধুমাত্র পুরুষদের ভেবেছেন। ট্রাক ড্রাইভারি কোনদিনই শুধু ছেলেদের ছিল না।"

publive-image কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে সম্মান জানানো হল যোগিতাকে। এক্সপ্রেস ছবি- শশী ঘোষ

নিজের পেশা নিয়ে সন্তুষ্ট যোগিতা কিন্তু কিছু অনুযোগও করেন। এক, ট্রাক ওভারলোডিংয়ের তিনি ঘোরতর বিরোধী। দুই, তিনি চান ট্রাক চালকেরা চিরাচরিত প্রথা মেনে নেশাভাং করে রোজগারের টাকা না উড়িয়ে নিজেদের জীবন শুধরে নিন। সেইসঙ্গে তিনি চান এই পেশার প্রতি আরেকটু সন্মান।

বারো বছর ধরে কাজ করছেন, আর কতদিন? "জানা নেই, মনে হয় না কখনও ছাড়তে পারব।" তাঁর কথায়, বয়স যদি পার না হয়ে গিয়ে থাকে, সেই দিকেই এগোন উচিৎ যেখানে আপনি কাজ করতে চান। তাহলেই আর হাঁপিয়ে উঠবেন না। "যেমন ধরুন আমি। আমার ড্রাইভিং করতে ভাল লাগে।" সরল দর্শন, সহজ জীবন।

Yogita Raghuvanshi First female truck driver