ষষ্ঠীর দিনই জারি হল জগদ্ধাত্রী প্রতিমার ভাসানের নির্দেশিকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ৫ অক্টোবরের মধ্যে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার ভাসান শেষ করতে হবে। বিসর্জনের আগে শোভাযাত্রা করতে হলে পুজো কমিটিগুলোকে আগে থেকে পুলিশকে জানাতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও কমিশনারেটে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। সেই কথা মাথায় রেখে পুলিস সুপার ও কমিশনারদের বিসর্জনের জন্য যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
ইতিমধ্যেই বহু জায়গায় জগদ্ধাত্রী পুজো উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। ৩০ অক্টোবর রবিবার ছিল জগদ্ধাত্রী পুজোর ষষ্ঠী। ওই দিনই উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে বহু পুজোর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে বিরোধী দলনেতা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পুজোর উদ্বোধন করেছেন। তবে, জগদ্ধাত্রী পুজোয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় মহানবমীর পুজোকে। ২ নভেম্বর মহানবমী।
শাস্ত্রমতে, ওই দিন কিছু টোটকা পালন করলে ভক্তরা শুভ ফল পেতে পারেন। যেমন, মহানবমীর দিন জগদ্ধাত্রীর মন্দিরে বা পুজো মণ্ডপে গিয়ে পুজো দেওয়া শুভ। পুজোয় নতুন বস্ত্র অর্পণ করাও শুভ। জগদ্ধাত্রী পুজোর অষ্টমী ও নবমীর দিন বাড়িতে নিরামিষ খাবার খেতে পারলে দারুণ সৌভাগ্য বয়ে আনে। এমনটাই বিশ্বাস পণ্ডিতদের। আবার, নতুন সিঁদুরের কৌটো কিনে জগদ্ধাত্রী পুজোর দশমীর দিন পুরোহিতকে দিয়ে সেটি পুজো করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তারপর সেখান থেকে দেবীর চরণে কিছুটা সিঁদুর দিয়ে বাকিটা তুলে রেখে দিলে কাজে দেয়। পরিবারের কেউ কোনও সমস্যা বা বিপদে পড়লে সেই সিঁদুর থেকে বের করে তিলক লাগালে সমস্যা দূর হয়ে যাবে! এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের।
রাজ্যে জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য দুটো সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা হল কৃষ্ণনগর ও চন্দননগর। কৃষ্ণনগরের পুজো প্রথা মেনে হয় একদিনের। আর চন্দননগরের পুজো চলে চারদিন ধরে। এই পরিস্থিতিতে ৩১ অক্টোবর, সোমবার থেকেই জগদ্ধাত্রী ঠাকুর দেখার ইচ্ছা থাকলে যেতেই হবে চন্দননগরে। অন্যবারের মত এবারও আলোর মালায় জগদ্ধাত্রী পুজোকে সাজিয়েছে চন্দননগর। এখানে রেজিস্টার্ড ৮২৫ জন আলোর ব্যবসায়ী রয়েছেন। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। বাবু পালের মত কিংবদন্তি আলোকশিল্পী শ্রীধর দাসের উত্তরসূরিরা এবারও আলোকসজ্জায় ভরিয়ে দিয়েছেন চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোকে।
দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এগিয়ে এসেছে পূর্বরেলও। পুজোর চার দিন সারারাত ধরে লোকাল ট্রেনের পরিষেবা চালু থাকবে। জানিয়ে দিয়েছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। হাওড়া-বর্ধমান শাখায় এই ক'দিন ছয় জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চলবে। এরমধ্যে হাওড়া-ব্যান্ডেল রুটে চলবে ৫ জোড়া ট্রেন। আর হাওড়া-বর্ধমান রুটে চলবে ১ জোড়া বিশেষ ট্রেন।
আরও পড়ুন- হুঁ থেকে টুঁ করতেই গঙ্গায় ছোটেন পুণ্যার্থীরা, কী উপকার হয় গঙ্গাস্নানে!
এই পরিস্থিতিতে দর্শনার্থীরা চার দিনে বেশ কয়েকটি ঠাকুর দেখে নিতে পারেন। তার মধ্যে মানকুন্ডু স্টেশন থেকে জ্যোতির মোড় আসার সময় দেখে নিতে পারেন মানকুন্ডু স্পোর্টিং ক্লাব, পোস্টঅফিস গলি, নতুনপাড়া, নিয়োগীবাগান, চারাবাগান বালক সংঘ, সার্কাস মাঠের পুজো। জ্যোতির মোড় থেকে জিটি রোড ধরে ভদ্রেশ্বরের দিকে যাওয়ার সময় দেখে নিতে পারেন তেমাথা ছুতোর পাড়া, বারাসত দক্ষিণ চন্দননগর, অরবিন্দ সংঘ, বারাসত ব্যানার্জি পাড়া, বারাসত চক্রবর্তী পাড়া, বারাসত গেটের পুজো। আবার জ্যোতি সিনেমা হল থেকে জিটি রোড বরাবর চন্দনগরের দিকে এগোনোর সময় দেখে নিতে পারেন লিচুতলা, সাবিনাড়া, কপালিপাড়া সাহেববাগান, ডুপ্লেক্সেপট্টি, হালদারপাড়া ষষ্ঠীতলা, আদি হালদারপাড়া, রথেরসড়ক, পাদ্রিপাড়া কালীতলা, পাদ্রিপাড়া, লালবাগান পাদ্রিপাড়া, লালবাগান চক ও বড়বাজারের পুজো।