ডায়াবেটিস শব্দটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত এবং এর কারণে ঠিক কী ধরনের সমস্যা হতে পারে সেই নিয়েও অনেকেই জানেন। প্রতিনিয়ত কিন্তু বিশ্বের নানা দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। তবে প্রি ডায়াবেটিস এই সমস্যাটির সম্পর্কে আজও অনেকেই অবগত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে একদিনেই কখনও ডায়াবেটিস শরীরে দেখা দিতে পারে না। বহুদিন ধরেই এর সূত্রপাত ঘটে থাকে।
চিকিৎসক অভিস্থিতা মুদুনুরি বলেন, অনেক শিশুদের মধ্যেও কিন্তু টাইপ টু ডায়াবেটিস লক্ষ্য করা যায়। এবং এই টাইপ টু ডায়াবেটিসের পূর্ব লক্ষণ প্রি ডায়াবেটিস। তিনি বলেন, প্রাক অবস্থায় একে শনাক্ত করা খুব প্রয়োজন এবং সেটি সম্ভব হলে প্রথম থেকেই কিন্তু ডায়াবেটিস আয়ত্বে রাখা সম্ভব। সমস্তরকম জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আসলেই প্রি ডায়াবেটিস এই শব্দটির সঙ্গে তার নামের ভীষণ যোগাযোগ রয়েছে। এটি এমন একটি সময় ঠিক যেইখানে শারীরিক ইনসুলিন প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হয় এবং এইসময় দৃষ্টি না পড়লেই টাইপ টু ডায়াবেটিস হতে পারে।
কী কারণে এর মাত্রা বাড়তে পারে?
দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ সঙ্গেই শরীরের নিষ্ক্রিয়তা, সঠিক মাত্রায় না ঘুমানো এমনকি উদ্বেগ এবং স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে গেলেই ইনসুলিন ওঠানামা করে। সেই থেকেই এর আবির্ভাব হতে পারে। শরীরের সঙ্গে অতিরিক্ত অনিয়মের ফলে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় ক্যাসকেডের মাধ্যমে এটি নিঃসৃত হয়। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ট্রাইগ্লিসারাইড আকারে যখন শরীরে জমা হয় তখনই ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়ায় বাধা পরে। এবং সেই থেকেই প্রথমে প্রি ডায়াবেটিস পরে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ আপনার শরীরে দেখা দেবে।
বিশেষ করে, জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণ এই রোগের জন্য দায়ী। পারিবারিক ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, পিসিওএস, স্থূলতা এমনকি বয়সের সঙ্গেও এটি সম্পর্কিত।
শরীরে কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায়?
- ত্বকে কালো ছোপ, বিশেষ করে বগলে এবং কপালের কাছে।
- ওজন হ্রাস অসুবিধে
- তলপেটে মেদ বৃদ্ধি পাওয়া
- ঘাড়ের কাছে স্কিন কুচকে যাওয়া
- চিনি খাওয়ার ইচ্ছে
- শক্তির অভাব
- বেশি ক্যালোরি এবং কার্ব যুক্ত খাবার খেলেই ঘুমের আলসেমি
- গায়ে হাত পায় চরম ব্যথা
- মহিলাদের শরীরে হরমোনাল সমস্যা
চিকিৎসা পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
খাবারে কার্বোহাইড্রেট কমানো কিন্তু শরীরের পক্ষে বেশ ভাল। প্রোটিন এবং চর্বি খাবারে অপরিহার্য।
কম করে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা খাবার না খেয়ে থাকার অভ্যাস করুন। এই অবস্থায় আপনার ক্ষুধা ক্রমশই বাড়বে এবং তার ফলেই শরীরের উৎস হিসেবে চর্বি ক্ষরণ হতে শুরু করে। ফলেই প্রি ডায়াবেটিসের সঙ্গে মোকাবিলা করাও হবে।
শরীর চালনা করা এই ক্ষেত্রে খুব দরকার। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ৪৫ মিনিটের জন্য হাঁটা অবশ্যই দরকার। এতে পেশী সক্রিয় থাকে। এছাড়াও ২০ মিনিটের জন্য ব্যায়ামের অভ্যাস করুন, এটি শরীরের পক্ষে ভাল।
ধ্যান কিংবা শান্ত স্নিগ্ধ মিউজিক মন ভাল রাখতে সক্ষম তাই এটিও বেশ কার্যকরী।
সবকিছুর সঙ্গে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে গেলে সারকেদিয়ান রিদম ভাল থাকা খুব জরুরি। সঠিক সময়ে ঘুম এবং খাওয়া একেবারেই দরকার। অন্তত ৭/৮ ঘণ্টা ঘুম সত্যিই দরকার। নাহলে ওজন বৃদ্ধি, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
আগে থেকেই দৈহিক সংকেত বুঝতে হবে, অযথা সময় নষ্ট করবেন না। ইঙ্গিত বুঝে আগেই চিকিৎসা করান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন