"সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা বলার সময়ে আমরা বাইরের দিকে দেখি। নিজের দিকে তাকাই না। সন্ত্রাসবাদ যেন আমাদের অপর। কিন্তু আদতে তো তা নয়। সন্ত্রাস আমাদের মধ্যেই বিরাজ করে, বিরাজ করে সন্ত্রাসবাদের বীজ।" বলছিলেন তরুণ সাহিত্যিক দেবতোষ দাশ। উপলক্ষ ছিল সমকালীন আরেক সাহিত্যিক শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘তেরো নদীর পারে’-র মলাট উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভা। আলোচনার শীর্ষনাম ছিল সাহিত্যে সন্ত্রাস।
এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসব শুরু হল শুক্রবার সন্ধেয়। অক্সফোর্ড বুক স্টোর ও পত্রভারতী প্রকাশনার উদ্যোগে আয়োজিত চতুর্থ বছরে পা দেওয়া এই সাহিত্য উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন শঙ্খ ঘোষ। জোড়াসাঁকো রবীন্দ্র মিউজিয়মের উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, বাংলাদেশের প্রকাশক মাজহারাল ইসলাম প্রমুখ।
তিন দিনের সাহিত্য উৎসবে প্রতিদিনই থাকবে আলোচনা
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনার মধ্যে জোড়াসাঁকো প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-ও। চেয়ার পেতে সে অনুষ্ঠান অনেকের সঙ্গে বসে দেখলেন শঙ্খবাবুও। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী ভাষণে তার আগে তিনি জোড়াসাঁকো স্মৃতি রোমন্থন করলেন। তেমন রোমন্থন শোনা গেল সমরেশ মজুমদারের কাছেও। শ্লাঘাময় উচ্চারণ অবশ্য ছিল মাজহারাল ইসলামের। যিনি তথ্য দিয়ে জানালেন বাংলাদেশে বই বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। বললেন, হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই শুধু একটা একুশের মেলাতেই বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার কপি। তাঁর দাবি, একটা গোটা দেশ যে ভাষায় কথা বলে, সে ভাষার মৃত্যু নেই।
শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশিতব্য উপন্যাসের প্রচ্ছদ উন্মোচন (বাঁদিক থেকে দেবতোষ দাশ, শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, হিমবন্ত বন্দ্যোপাধ্য়ায়)
ভাষার মৃত্যু আছে কি নেই, হবে কি হবে না, সে প্রশ্ন ভবিষ্য়তের। বর্তমানের মৃত্যু, সন্ত্রাসজনিত মৃত্যু, সন্ত্রাসবাদ- এসবই বিষয় হয়ে উঠেছে শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে। তেরো নদীর পারে, শীর্ষ বলছিলেন, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের প্রেক্ষিতেই লেখা হয়ে উঠেছে। আমাজন বাংলা বিভাগ থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে তাঁর এই উপন্যাস। আলোচনার সঞ্চালক তথা পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের আগ্রহে শীর্ষ বলে দিলেন, বাংলাদেশের একটি হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হচ্ছে এই উপন্যাস। যে হত্যাকাণ্ডের জের ধরে চরিত্ররা পৌঁছে যাবে ইউরোপেও।
এদিনের আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন সাহিত্য সমালোচক হিমবন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংবাদিক বিতনু চট্টোপাধ্যায়ও।
এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসব চলবে রবিবার পর্যন্ত। শুরু বেলা এগারোটায়। বিভিন্ন বিষয়ে মিনিট ৪৫-এর আলোচনার আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা। সেসব আলোচনায় অংশ নেবেন বিভিন্ন সাহিত্যিক।