Advertisment

বহতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা

বহতা মুখোপাধ্যায়কে বেশি মানুষ চেনেন বহতা অংশুমালী নামে। বেঙ্গালুরুর প্রবাসী এই বাঙালির পেশা চাকরি, নেশার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন লিপির পাঠোদ্ধার প্রচেষ্টা। এবার তাঁর দুটি কবিতা, একটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ, অন্য়টি তত দীর্ঘ নয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- অরিত্র দে

আনন্দযজ্ঞে

Advertisment

এতটা অনুৎসবও নয়

খিদে পাওয়া, খাওয়া, শ্বাস নেওয়া, বেঁচে থাকা

যদিও আকাশ ধোঁওয়া, বিকীর্ণ চতুর্দিকে তবু

ভিতরের অগণিত কারিগরের ষড়যন্ত্র

কী সফল আমরা বুঝি নি।

বুঝি নি কিভাবে-

নাগালের নাম হাত, সরণের পা

আলোর সাড়াই দুই চোখ,

দেহের ভিতর চুল্লী সমস্তদিন

অজ্ঞাত যে রসায়ন বাঁচতে চেয়েছে

তাপ বিকিরণ ক'রে শীতল না হতে চেয়ে তাপ আহরণ করে উত্তপ্ত হয়েছে

আমরা অনেক দূরে তাদের থেকেও

আমরা যে জিনেদের আজব শহর

ব্যথার বার্তায় কাঁদি,

স্নায়ুর উদ্বেগে হেসে উঠি

অদ্ভুত ঈশ্বর খুঁজি মাথার উপর।

এতটা অনুৎসবও নয় ।

যেটুকুতে হাত দিলে মথের পাখার মতো মিলিয়ে যেতাম বেদনায়

সেটুকু রেখেছো।

কিশা গোতমীর মতো ছুটতে হয় নি

অশোক সর্ষের প্রলোভনে

এই আলো হাওয়া জলে, বিমগ্ন জীবনে

আমার রাস্তা দিয়ে আসা সেই আজব অতিথি-

তাকে থাকতে দিয়েছো।

কচি পাতা কচি পাতা বাড়ছে সতেজ দিনে দিনে

এখন মাটির মধ্যে মিলোলেই হয়

রাতের আকাশমুখো চিৎ হয়ে অনির্বাণ অসংখ্য জ্যোতিষ্ক চোখে নিয়ে।

বেশ কেটে গেছে রাত, বেশ দিন

তাই-

এতটা অনুৎসবও নয়!

আঠা

বাসা ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে

অথচ শাবক!

ডানা বড় কচি

মা'র কাছে ক্ষীণস্বরে সে শুধায়

"আঠা নাই আর?

কী দিয়া বানাইলে ঘর -

কেমনে টুটায়?"

অথচ দুই লাখ বৎসর পূর্বে নিয়াণ্ডারথাল মানব

কী জানি কী পদ্ধতিতে আঠা বানাইয়াছে

ওক গাছের ছাল নিয়া, পাথরের গর্তের ভিতর

উইলো কাষ্ঠের আচ্ছাদনে

তারপরে অগ্নি সংযোগে

ভয়ানক তাপে

ওক গাছ আঠা হয়ে গেলে-

বিপুল শিকারে স্ফূর্তি

ঘরদোর তীর বল্লম

আঠা সহকারে

বৈজ্ঞানিকে  বলে

দু লাখ বছর চলে গেলো

রকেট ছুটলো মহাকাশে

তারহীন আকাশে বাতাসে ভেসে আসে

কত শব্দ কত কান্না তড়িৎচুম্বক ঢেউ হয়ে

অথচ এখন আঠা নেই?

প্যাকিং কাঠের বাড়ি কেন ভেঙে পড়ে?

শাবকের ডানা শক্ত নয়

তার মিঠে লাল মুখ

তার ক্ষীণ গলা

গলা ধরে বলে

"কেমনে গড়লি বাসা? কেমনে টুটায় ?"

মা তো তাই ওক গাছ হয়ে যায়, অগ্নিতে প্রবেশ

সে অগ্নি সহজ অগ্নি নয়

লেলিহান শিখা ওঠে হাক হাক

সমস্ত সত্তা জ্বলে খাক !

তুমি শীৎকার ছাড়া বাকশক্তি অচিরে হারাবে

যেন এক অপরূপ মাংসপিণ্ড হবে

সরীসৃপ আসবে ও যাবে

প্রবেশে নির্গমে কালো পাত্রে জমে আঠা

পুনরায় ইট হয় গাঁথা

সকালে তপ্ত দুধ খায় বসে ছেলে

রাতে শোয় অলক্ষ্য আঁচলে

মা তো সেই মা-ই

ন্যাংটো হোক ক্লান্ত হোক

আঁচল সর্বদা !

Bengali Literature bengali poetry
Advertisment