সবর্না চট্টোপাধ্যায়ের এক গুচ্ছ কবিতা

সবর্না চট্টোপাধ্যায় শূন্য দশকের কবি। বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে, হচ্ছে। আজ সবর্নার কয়েকটি কবিতা।

সবর্না চট্টোপাধ্যায় শূন্য দশকের কবি। বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে, হচ্ছে। আজ সবর্নার কয়েকটি কবিতা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bengali poems of Sabarna Chatterjee

অলংকরণ- অরিত্র দে

তরঙ্গ

আমাকে জড়িয়ে নিচ্ছে আলো

শকুন্তলা। কস্তুরী ঘ্রাণ

নাভিতে ঘষছো ঠোঁট…

যেভাবে তরঙ্গ ওঠে স্থির জলে

তর্জনী ছোঁয়াও প্রভু !

বদরীবৃক্ষের নীচে ধ্যান করো তুমি

হে দামাল পুরুষ, ক্ষণকাল স্তব্ধ হোক

পথ খুলে যাক উর্বর। অতিধীর

স্তরে স্তরে তার কচি ধানবীজ…

ছড়িয়ে পড়ুক স্বর্ণরেণুর মতো

চেপে ধরো তলপেট। এমনই এক

হলুদ ভুট্টারক্ষেত, চেয়ে আছে নগ্ন

আকাশের দিকে…

আমায় চুরি করো প্রমিথিউস

শিফন শরীর ধুয়ে যাক গর্ভজলে

খোলা পদ্মে জিভ রেখো প্রভু

কাদায় লুটিয়ে যাক মেরু

আলো আলো আর আলো

তরঙ্গ স্রোতে ভাসুক বেগুনী শালুক!

জঙ্গলে আমি একা 

জঙ্গলে এলে জাপটে ধরে গাছগুলো

নদী...হাওয়া… সূর্যাটা

যেন ভানুমতির খেল !

এখানেই একদিন বেগুনি জারুলের ফাঁকে,

মশগুল উদাস মন।

খেয়াল করোনি একটা নদী চেয়ে আছে…

চারদিকে সন্ধের আলো। ময়ূরের ডাক

খেয়াল করোনি, আগুন জ্বলার আগে

তৈরী হচ্ছে কাঠ।

আমি সেদিনই নাড়িয়ে ছিলাম লাল কদম।

জ্যোৎস্নায় শান্ত জল।  হাতির পিঠে

পার হতে গিয়ে দেখেছি

কেমন অবুঝ সম্পর্কের মতো ক্যামেরাটা

দুলছে গলায়…

জঙ্গলে এলে আমি একা হয়ে যাই।

কুলকুল শব্দ, হাওয়ার নিঃশ্বাস

মনে হয়, জল ঠেলে উঠে আসে…

ঢিলে ক্যাপ্রি, সাদা শার্ট

চুলগুলো আলগোছে বাঁধা,

চোখে তার সূর্যটা ডুবছে…. ডুবছে….ডুবছেই !

আরও বাংলা কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এইলিংকে

নোংরা মেয়ে

জল ছুঁয়ে যায় শুক্নো ঠোঁটে, চোখ ছু্ঁয়ে যায় ভোর
উস্কোচুলো কাঠকুড়ুনির দিনশুরু কাকভোর!

Advertisment

কাঠ প্লাস্টিস যা পায় তাই কুড়িয়ে বোঝাই পিঠে
একটাদুটো আদুলসিকি গিঁট মেরে নেয় খুঁটে

মাটির ঘরে চারটে বেড়াল চুপটি বসে থাকে
ভাত বেড়ে দেয় কাঠকুড়ুনি, জড়িয়ে ধরে মা'কে!

Advertisment

মেয়ের পিঠে বস্তা বোঝাই যখন যেমন মেলে
চালের বস্তা আলুপিঁয়াজ বোঝাই তখন চলে

টিকিট নেইতো। খিস্তি জানে। গরিব ঘরে অভাব
এভাবে রাত দিন চলে যায়। সহ্য করা স্বভাব

ময়লা বোঝাই বস্তা পিঠেই কাঠকুড়ুনি ছোটে
ভোর পাঁচটার লোকাল ট্রেনে। সূর্য যখন ওঠে!

পথ

ছবির ভেতর ওঠে আসে ছবি।

ধোঁয়া ধোঁয়া পথ...

হরেন মাস্টারের বাড়ি…

গুটি আম পড়ে আছে কত!

ঘুমহীন শহরে স্ট্রিটলাইট জ্বলে রাতভোর

অঙ্কে ভুল হলে, নীলডাউন হত ছেলেটা

আর সূর্যটা ধীরে ধীরে মিশে যেত গঙ্গায়।

ওপরের ঘরে চুপিচুপি কথা হত।

শেষরাতে কেঁপেছি কতবার।জলে থৈ থৈ

তারপর ঘেঁটে যায় চোখ।

কালো। আঁকাবাঁকা চলতে থাকে সব !

ন্যাড়াপোড়ার প্রস্তুতি চলছে,

বৃষ্টি নামে তখন !

যেবার মারা গেল বাবা,

চারদিক কাদা...

গা ভর্তি গয়না একটা একটা করে

খুলে নিল নতুন বর।

পাতাদের নীচে ঝুরো বালি।

আমি তার নীচে শুয়ে শুয়ে বলি,

“ আমাকে স্পর্শ করো জল, স্পর্শ করো মাটি।

এত পথ হেঁটে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি।”

Bengali Literature bengali poetry