চামড়ায় জলের শব্দ
মোমপালিশ করে ফেলার পর কোনও সংবেদই আর এই ঘরকে স্পর্শ করতে পারছে না। বহুবছর আগেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটা গ্রহ থেকে তুমি যে জল সংগ্রহ করে এনেছিলে, তা দিয়ে আর স্নান হবে না। যতই খেলাও না কেন এই চিরে ফেলা বাঁশের মধ্যে দিয়ে গলার স্বর আর পরবর্তী জন্মের তোমার কাছে পৌঁছোচ্ছে না। অথচ ধুমকেতুর আগুনে রুটি সেঁকে নিতে নিতে হাওয়ার স্থিতিস্থাপকতা সম্পর্কে সন্দেহ তোমার কেটে যাচ্ছিল। এদিকে একটা অপরিচিত মেঘ এসে তোমার সওয়ারি নিয়ে চলে গেল। স্থির ও জমাট একটা জিজ্ঞাসাচিহ্নের মতো এই দেয়ালে কোনও দরজা ছিল না। আর ধৈর্য্য শব্দটির অর্থ খুঁজতে খুঁজতে তুমি একটা পান্ডুলিপির ভেতর ঢুকে যাচ্ছিলে। কালো এবং ঠান্ডা এই হরফগুলোর থেকে কোনও বীজধানের প্রস্তাবনা হেঁটে আসেনি। আর শুধুমাত্র একটা জলের চাদর নিয়ে তুমিও বা কতখানি শস্যখেত হয়ে উঠতে পারবে। কেবল ভিজে যাওয়া শব্দে ভরে উঠছে খাতা
মেঘাতুর এই আয়নায়
কয়লাখনির ভেতর লাল নীল কয়েকটা হরফ। তুমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঢেকে দিতে চাইছ রং। আসলে জল নয় ছায়ার ভেতর তোমার আঙুল ভিজে যাচ্ছিল। অন্ধকারের দিকে সরে আসছে দিন। বর্ণনার চাদরে ঢেকে গেল মূল কিসসা। চাঁদমারি অব্দি আর যেতেই পারছ না। এই ভিজে এবং ভারী উপন্যাসের ভেতর আসলে অনেকগুলো ছোটগল্প লুকিয়ে বসে আছে। তুমি কিন্তু কাউকেই সনাক্ত করতে পারছ না। আর এই ছোঁয়াছুঁয়ি খেলার ভেতর কেবলই ঘেমে যাচ্ছ। ক্লান্তি একটা ভারী সুজনীর মতো নড়েচড়ে বসল এই ঘরে। আর আঙুল জমে যাচ্ছে। হাওয়ার এই তলোয়ার তোমাকে আর কতখানি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। শুধু উদ্দেশ্যহীন কিছু কাটাকুটি, কয়েকটা সূচের কারুকাজ ফুটে উঠবে চামড়ায়। আর উল্কির ভেতর বসে থাকা এই হলদে হয়ে যাওয়া লোকগান শুনতে শুনতে তুমি কিন্তু শেষ অব্দি আর ঘুম পর্যন্ত পৌঁছোতেই পারবে না। শুধু রোদের ভেতর তোমার ছায়া একা একাই ভিজতে থাকবে
আরও পড়ুন, Literature: তুষ্টি ভট্টাচার্যের কবিতা
প্রতিধ্বনি ১
সেই সিঁড়ি সেই মূর্তির ধাতব চিৎকার
ছুঁয়ে শুধু প্রতিধ্বনি খুঁজে গেছ
ছুটে গেছ বারবার মূর্তির কাছে
মাত্র চিৎকারটুকু ছুঁয়ে
আবারও খুঁজেছ প্রতিধ্বনি
দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরেছ তুমিই
শুধু কি দেয়াল
শুধুই আয়না
মূর্তির হাড়গোড় পড়ে আছে
আয়নাতে
হাড়ের ভেতর থেকে রজরস
মজ্জা ও হাওয়া
ছায়ার ভেতর খোঁজ
দস্তার মুখোশ
উঁহু
ঘর নয়
চারচৌকো আয়নায় দেয়াল
তোমার মুখোশ শুধু বেঁকেচুরে যায়
তোমার মিথ্যেটুকু বেঁকেচুরে যায়
প্রতিধ্বনি ২
হালকা শব্দ করেই ব্যথাহীন
মরে যাবে কোলাহল
ভিজে ছায়া
নির্জনতার গাঢ় ছাই
ঝরে পড়বে চোখের পাতায়
প্রতিধ্বনির জন্য আরও সজাগ
হয়ে উঠবে এই পিয়ানো
আর ছাইয়ের কার্পেটের ভেতর
এক ছায়া চুপচাপ
শুরু নয় শেষ নয়
বাতি জ্বালিয়ো না
কিছু শব্দ
অপ্রচলিত ও মৃদু
এবার উঠে আসছে
তাদের জ্বলন্ত হৃদয়পিণ্ড
এই অন্ধকারে
এই প্রহেলিকায়
বাঙ্কারের স্তব্ধতা থেকে
উঠে এসে ভাষার ভেতরে
হালকা কম্পন তুলে দেবে
এই কথাহীন বার্তা
এই নিঃশব্দ ঢেউ
চলে যাবে প্রতিধ্বনির দিকে