বোষ্টমী
দয়াল গুরু কবে আমায় জায়গা দেবেন
দুই পায়ে তাঁর? যখনি ওই চরণদুটি
রাখতে গেছি বুকের তাপে...গুরু আমার
দিশাহারা! সামাল সামাল রব তুলে সেই ছোট্টোঘরে,মিলিয়ে গেলেন চৌরাস্তায়
বলেন তিনি ' না আমি নই তোমার পুরুষ
আমি শুধুই পথ দেখাবো'...কিন্তু আমার রক্ত গরম রক্ত ছোটে শিরায় শিরায়
কী কাজ আমার শব্দ মেপে? অথবা এই
সাঁঝবেলাতে একলা মেয়ের বিষাদ লিখে
অধরোষ্ঠে কাঁপতে থাকা এই চুমু কে
ঢালবো না তাঁর বক্ষতলে? বিপুল যতো
বাসনা সব উড়িয়ে দিয়ে আমার গুরুর
আঙুলগুলি যেই চেয়েছি এই শরীরে
তখন দেখি ঘরের ভিতর নেই তিনি আর
দূরে কোথায় ঝড়ের রাতে তাঁর অভিসার
শতজন্ম চলছে যেন; তারই মধ্যে আমার
এমন ব্যাকুল শরীর উথালপাথাল জাগতে দেখে, হঠাৎ যেন ভয় পেয়েছেন
ভয় পেয়েছেন দয়াল আমার...
ছবি
পুরভবনের সেই সাদা বাড়ি মনে পড়ে।
এলোমেলো হাওয়া দিত। তোমাদের ঘরবাড়ি ঢেকে দিত মহার্ঘ্য ক্রিসেন্থিমাম
সে কবে হারিয়ে গেছে রঙিন বাজারে
চারপাশে মাছি আর ক্রেতা ঢেকে ফেলে
জোকারের কান এঁটো হাসি, দূরের নদীটি
আর জলের ছলাৎস্বর আমবাগানের সেই
আধো আলো ছায়াঘেরা রাত; আর ছিলো প্রাণপণ বিবাহের ছল, নতুন কিছুই তুমি
পাবেনা এ মিনারনগরে;
যাকে ফেলে এসেছিলে অতিদূর গ্রামে
একমাত্র সেই জানে রঙের কাহিনী
কতোটুকু রঙ দিলে ঢাকা যাবে চোখের নিচের কালি, নতুন দিনের ছবি ওইখানে
আঁকে আজ তাপসীর বোন
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় প্রকাশিত আরও বাংলা কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
জলরঙের দিন
কারশেডে জমা জল ধেড়ে ইঁদুরের বাসা
কেতলিতে জমে ওঠা কালি। উনুনের ঢিমে আঁচ কাঁচা রাস্তার পাশে ওই ভাড়াবাড়ি, ততোধিক কাঁচা ঘর
শ্যাওলা ও মিথুনের ছায়া পড়ে
উঠোনের ভাঁজে। বৃষ্টি এলে ভিজে যায়
বারান্দায় জমে থাকা জীবিকা সংবাদ
"আর না হবে মন মানবজনম" বকুলের অন্ধ বাবা মাঝেমাঝে দশ টাকা পায়
জনসভা শেষ করে ফিরে আসছে
বন্ধ চটকল ট্রেনভর্তি হাজামজা লোক
দু'টাকা কিলো'র চাল হাতে নিয়ে
কুঁজো হয়ে হেঁটে আসছে এ পাড়ার
বিধু মাস্টার, ছেঁড়া চটি দমকা হাওয়ায় তার উল্টানো ছাতা, শিক ভেঙে গেছে কবে একদিন কোন হাহারবে...
"পাঁচটাকা বেশি লাগবে" ঠোঁটে চাপা ভেজা বিড়ি, কাকে যেন ধমকালো রাস্তার ওইপারে অটোর চালক
অর্গ্যান
প্রাচীন তক্ষক এক মাথা তোলে এই বনপথে। গাছের গুঁড়িটি ঘিরে শুধু তার
মন্থর ডাক সারাদিন 'তক্ষ তক্ষ বাজে
প্রাণের গভীরে। যেখানে নিভেছে আলো
ঝুলকালি পরিত্যক্ত ঘরে অকস্মাৎ
জানালায় উঁকি দিচ্ছে পুরনো সময়
সেই এক স্বেদবিন্দু একপাশে রতিকাতরতা; অন্যদিকে ওই মুখে
আগুনবলয়; সমস্ত অর্গল খোলা
হলুদ পাতার স্তূপে নেশাতুর কিন্নরী
অবিরাম ইশারা পাঠায়...কী দক্ষ বাজিকর, দেখো তার কেরামতি
তুলে আনছে জায়মান পুরনো বছর
'তক্ষ তক্ষ' ডাকে বিব্রত হাত কেঁপে উঠছে
স্পর্শ করে সেই হিমচূড়া;গলে যাচ্ছে ধীরেধীরে, উষ্ণজল, ভরে উঠছে অস্থির
স্বপ্নচরাচর
তস্কর
চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, এইমতো জেনেছি প্রবাদ আর ছবিগুলি সরিয়ে ফেলেছি
চারপাশে গাছপালা বাদামী পথের বাঁকে আলো, তোমার শরীরে সেই ফুটে ওঠা ধানক্ষেত আজ সব কোথায় হারালো
কোথায় তোমার ডানা! নভোচারী নও আর ঋজু প্রশাসক; মাঝেমধ্যে মনে পড়ে
জলের দুপুর আর ওই সাদা গাড়ি
মেলার মাঠের ভীড়ে বাঁশি আর সাপিনীর
আর্ত কলরব...গাড়িতে ঠোঁটের দাগ
জন্মাবধি ছুঁয়ে আছে অপার্থিব দেহ
এইমাত্র স্মৃতিভ্রম,মুকুরে অনেক মুখ
চতুর্দিকে রচিত আবহ
নন্দিনী
মনে হয় একটানে ছিঁড়ে ফেলি সে মুখোশ
উদ্ধত রাগ আর জেদ ঠোঁটের দু'পাশে
চাপা বিদ্রূপ যে মুখোশ দিনরাত গণ্ডি কাটে, বলে ওঠে 'বাড়াবাড়ি ভালো নয়'
মনে হয় ও মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে
উড়িয়ে দি' মুখুজ্জে বাড়িতে। সে বাড়ির
ন্যালাক্ষ্যাপা ছেলে যার বউ ভেগে গেছে
মুদীর দোকানে যার একরাশ ধার
দাদা বউদি ঘাড়ধাক্কা দেয়, সে ওই মুখোশ পরে নিজের ব্যবসা ফেঁদে সারাদিন
চারচাকা...ঘুরুক এই সুতানুটি গোবিন্দপুর, মালতীকে বলে দিক
'এখন সময় নেই,পরে এস'...
"বাড়িটা সারিয়ে নিও" দাদাকে শুনিয়ে দিক, সদর্পে হেঁটে যাক দোতলার ঘরে
সে ওই মুখোশ পরে অন্তত একবার
হয়ে যাক এ পাড়ার বাঘ বাহাদুর