Advertisment

ছোট গল্প: গণপিটুনির পরের দিন

নবীন গল্পকার সরোজ দরবারের লেখার হাত নিয়ে প্রশংসায় মুখর তাঁর বয়োজ্যেষ্ঠদের অনেকেই। সম্প্রতি একটি গল্পগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এই রবিবার তাঁর গল্প।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- অরিত্র দে

পুকুরে যে পাগলা রমেনই বিষ দিয়েছিল, এই তারাতলার সকলেই তা বিশ্বাস করে না। তবে হাতের সুখ দু-চার ঘা এমনিই দিয়েছে। বিশ্বাস করে নয়, একজন মারছে দেখে আর একজনের হাত নিশপিশ করে উঠেছে। তা রমেন মার খেয়েছে ভালই। কষ থেকে রক্তও বেরিয়েছে। থাপ্পড়ে গালের ভিতরটা কেটে-ফেটে গেছে বোধহয়।

Advertisment

সেই দুপুরের ঘটনা। এই সন্ধে পেরিয়েও শীতলাতলার আটচালায় ওই কথাই হচ্ছে। দিনের আলো নিবলেই আটচালায় নানারকম জটলা। একদিকে বুড়োদের দল। একপাশে মাঝবয়েসি সংসারীরা বাজারের ভাল-মন্দ নিয়ে খানিক গল্প করে হাই তুলতে তুলতে বাড়ি ফেরে। আর একপাশে, বেকার চ্যাংড়ার দল গুলতানি করে, তাস খেলে।

তবে আজ সব জটলাতেই একটাই গল্প। রমেনকে মারা হল ঠিকই। পঞ্চানন্দ তালুকদারের কথাতেই মারা হল। মানে, না মেরে উপায় থাকল না। কিন্তু পুকুরে বিষ দিয়ে যে সে মাছ মারবে এটা এখনও কেউ মন থেকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

তখন দুপুরের রোদ একেবারে মাথার উপরে। মাঠ থেকে জোয়ান লোকেরা সবে ঘরে ফিরেছে। কেউ কেউ চান করবে বলে গামছা হাতে বড়পুকুরের আসেপাশে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় পঞ্চানন্দ তালুকদার চিল চিৎকার শুরু করে দিল। -বিষ দিয়েছে গো, বিষ দিয়েছে। সব্বোনাশ করে দিয়েছে। শুনে আরও পাঁচজন হইহই করে উঠল-বলো কী! ক্রমে একটা হট্টগোল বাধল, আর এ-পাড়া থেকে ও-পাড়া খবর রটে গেল পঞ্চানন্দের ইশকুলের ধারের পুকুরটায় কেউ বিষ দিয়েছে। মাছগুলো সব মরে ভেসে উঠেছে। যেগুলোর জান কড়া, তারা এখনও যন্ত্রণায় লাফাচ্ছে। আগে চোখ পড়লে বাঁচানো যেত। পঞ্চানন্দ হাউহাউ করে বলল, আগে চোখ যাবে কী করে! তার তো এদিকে আসারই কথা নয়। হঠাৎ কী মনে হল, ঘুরতে ঘুরতে চলে এসছিল। তারপরই দেখে এই কীর্তি।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে তখন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে পাগলা রমেন। হঠাৎ পঞ্চানন্দের নজর পড়ল সেদিকে। রাগে কান-মুখ তার লাল হয়ে গেল। তারপর সে বেজায় চিল্লিয়ে বলে উঠল, শুয়ার এখন দাঁড়িয়ে মজা দেখা হচ্ছে। তুই-ই বিষ দিয়েছিস। বলতে বলতেই পাগলা রমেনের গালে এক থাপ্পড় বসাল।

কেউ কেউ পঞ্চানন্দকে ছাড়াতে ছুটল। বাকিরা হতবুদ্ধির মতোই দাঁড়িয়ে। এমনকী পাগলা রমেনের খুড়তুতো ভাইরাও দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। হাজার হলেও রক্তের সম্পর্ক। রমেন মার খাচ্ছে দেখে খারাপ লাগল তাদের।

কারণটা পঞ্চানন্দই ভেঙে বলল। যা শুনে বাকিদেরও মাথা গরম হয়ে গেল। পঞ্চানন্দ, হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, গতকাল সে নাকি রমেনকে বলেছিল, পুকুরে এখন ছিপ না ফেলতে। নতুন এক ভার মাছ ছাড়া হয়েছে। এখুনি তাদের না ঘাঁটাতে। সেই রাগেই নাকি রমেন এসে পুকুরে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে।

কথাটা কারও বিশ্বাস হল। কারও মনটা আবার কিন্তু কিন্তু করছে। এর মধ্যেই মাতব্বর শশী গিয়ে রমেনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, তুই বিষ দিয়েছিস? রমেনের মুখে কথা নেই। -তোকে ছিপ ফেলতে বারণ করেছিল বলে এই কাজ করেছিস? রমেনের মুখে কথা নেই। এরপরই চড়-থাপ্পড়-মার শুরু হল। পাগলামিটা বেড়েছিল, মারলেই নাকি টাইট হবে, এই ভেবেই কেউ গায়ে হাত তুলল। এদিকে কেউ বলল, এর আগে রমেন নাকি একদিন ডিম চুরি করেছিল। কার হাঁসের পায়ে ঢিল মেরে পা খোঁড়া করে দিয়েছিল। আসলে কোনওকিছুরই প্রমাণ নেই। তবু মারতে গেলে একটা কারণ থাকা চাই তো!

রমেন মারের মধ্যে কেঁদেকেটে বলার চেষ্টা করেছিল, বারণ করেছে বলে সে তো আজ আর আসেইনি। কিন্তু পুকুরে বিষ দেবে কেন! কিন্তু একে পঞ্চানন্দ তালুকদার ধনী লোক। তায়ে তারাতলার একমাত্র ডাক্তার। আপদে বিপদে সে-ই তো সহায়। বয়সটাও হয়েছে। চেহেরাটাও মোষের মতো। গাঁক গাঁক করে চেঁচাচ্ছেও। সব মিলিয়ে এমন একটা পরিবেশ হল যে কেউ আর রমেনের কথা শুনলই না। ধরে নিল, শালা পাগলা মাথার খেয়ালে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে। অতএব দে মার।

এখন আফশোস হচ্ছে। অনেকেরই মনে হচ্ছে, এমন কাজ পাগলটা করতেই পারে না। মাতাল বিশু বলল, আমি বরং একবার গিয়ে দেখে আসি। বেঁচে-টেচে আছে কি না। যা টলতে টলতে গেল!

আরও পড়ুন, ছোট গল্প: সঙ্গীত নন্দন

২)

সত্যি বেঁচে না থাকলেই ভাল হত। বিছানায় শুয়ে কঁকাতে কঁকাতে এ কথা আজ অনেকবার মনে হয়েছে রমেনের। লোকের হাতে মার খেয়ে এত লোক মরে, আর সে মরল না কেন! ল্যাটা চুকেই যেত তাহলে। তবু পুকুরে বিষ দেওয়ার অপবাদ নিয়ে তো বেঁচে থাকতে হত না।

তারাতলার সবাই কিন্তু জানে যে পাগলা রমেন মাছেদের সঙ্গে গল্প করে। বঁড়শি গেঁথে মাছ তোলে। তারপর একটু ছটফট করলেই কানে কানে কী একটা বলে ছেড়ে দেয়। আর কেউ জানে না, রমেন মাছেদের বলে, কীরে লাগছে? কষ্ট পাচ্ছিস? যা তোরে মুক্তি দিয়ে দিলাম। বলে, নিজে নিজেই একচোট হেসে নেয়। আর বুকের ভিতর অদ্ভুত আরাম পায় সে।

পঞ্চানন্দর যে পুকুরটায় বসে ছিপ ফেলে রমেন সেটা ডাক্তারবাড়ির পিছন দিকে। পুকুরের একপাশে ডাক্তারদের ধান জমি। আর পুকুরের পাড় ধরে রাস্তা বরাবর এগিয়ে গেলেই তারাতলার ইশকুল। সামনে অনেকখানি রাস্তা জুড়ে ঝাউ গাছ লাগানো। দুপুরবেলা একটানা শোঁ শোঁ একটা শব্দ আসে। টিফিন টাইম হলে সেটা কমে যায়। ছেলেমেয়েদের আওয়াজে তখন ভেসে যায় চাদ্দিক। রমেনের মনে হয়, কেউ যেন রেডিওর কাঁটা ঘুরিয়ে দিল। একটা আওয়াজ থেকে তাই আর একটা আওয়াজে চলে গেল। এদিকটায় বিশেষ কেউ আসে না। তারাতলার ছেলেপুলে তাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করে না। মাঝে মাঝে বাইরের একটা দুটো মেয়ে এদিকে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে। তাকে দেখে সাহস করে কেউ কেউ জানতে চায়, মাছে পেলে? রমেন হাসে, দু’দিকে মাথা নেড়ে বলে, না। ওরা বলে, একদিনও মাছ তোমার ছিপে ওঠে না? রমেন বলে, উঠবে উঠবে। একদিন ঠিক উঠবে।

আসলে ওরা দেখেনি, মাছ তুলেও কেমন ছেড়ে দেয় রমেন। কানে কানে কথা বলে মাছেদের সঙ্গে। তবে পঞ্চানন্দর বাড়ির সবাই জানে, রমেন মাছ নেয় না। শুধু ছিপ ফেলে। গোড়ায় একটু আপত্তি করেছিল পঞ্চানন্দ। তারপর পাগল বলে ছেড়ে দিয়েছে। রমেনও পুকুরটাকে আপন করে নিয়েছিল। মাছগুলোর সঙ্গে কী ভাব যে হয়ে গিয়েছিল! দিন গড়িয়ে যেত। নাওয়া-খাওয়ার হুঁশ থাকত না। সে মাছেদের সঙ্গে গল্প করত। এক একদিন সন্ধে হয়ে যায়। শালুকপাতার উপর ফড়িংটাকে পর্যন্ত আর দেখা যায় না। তবু বসে থাকে রমেন। বসেই থাকে।

এরকম দিনে অন্ধকার থেকে মাথা তুলে এক নারী বলে ওঠে, অনেক হয়েছে, এবার ঘরে যাও। তখন রমেন আর কথা বাড়ায় না। একবার অন্ধকারের দিকে চেয়ে, একবার ছিপের দিকে তাকিয়ে উঠে পড়ে। মাথা নিচু করে বাড়ির পথ ধরে।

এই রমেন নাকি মাছেদের গলায় বিষ ঢেলে দেবে! এও হয়, না হতে পারে! অথচ সব জেনেশুনেও আজ পঞ্চানন্দ তাকে কী মারটাই না খাওয়াল!

নিজের পুকুর হলে এসব হতই না। এককালে ছিলও তো সব। পাগলা রমেনের ঠাকুর্দা এই অঞ্চলের জমিদারই ছিল বলা যায়। পাশের গ্রামে গ্রামেও তাদের বিঘে বিঘে জমি ছিল। মূলত মুসলমানরাই প্রজা। তারাই এসে ধানের ভাগটাগ দিয়ে যেত। কিন্তু সামন্ততন্ত্রে অন্তঃকলহ থাকবে না তাই আবার হয় নাকি! শরিকি বিবাদ চরমে উঠেছিল। সম্পত্তি সব টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। কত সম্পত্তি হাতছাড়া হল। অর্ধেকের তো হদিশই মিলল না। ভাঙনের শুরু হয়েছিল অনেকদিন, তার উপর রমেনের বাপটা ছিল নিষ্কম্মা। যেটুকু ভাগে মিলেছিল, সেটুকু বেচে বেচেই আজীবন খেল।

রমেন অবশ্য গোড়া থেকে পাগল ছিল না। সম্পত্তি যাচ্ছিলই। মা-বাপও উপরি উপরি বছর মরল। মাথাটা ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করল তার। শুধু নিবেদিতা ভরসা দিত। বলত, কোনরকমে পড়াটা চালাও। একটা কিছু হয়ে যাবে। রমেনদেরই বড় তেঁতুলগাছের সামনে একটা চাতাল করেছিল তার ঠাকুর্দা। সবই ভেঙেচুরে গেছে। তবু গাছের গুঁড়ির আড়ালে রোজ একবার করে নিবেদিতা ওই ভাঙা চাতালে এসে বসত। আর সামনে দাঁড়াত রমেন। ওই কয়েকটা পলের জন্যই তার মনে হত, কলেজের পড়াটা শেষ করতে হবে। বাঁচতে হবে। জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

তারপর একদিন কলেজ থেকে ফিরে শুনল নিবেদিতার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্র কলকাতায় চাকরি করে, বিয়ের পর বউকে শহরে নিজের কাছে রাখবে। নিবেদিতার সেদিনের মুখটা আজও ভুলতে পারে না রমেন। এমন পাথরের মতো মানুষ সে আর কোনওদিন দেখেনি।

বিয়েটা আটকাল না। আটকানোর মতো যুক্তিও ছিল না নিবেদিতার হাতে। রমেনের হাতেও না। নিবেদিতা তারাতলা ছাড়তেই ক্রমে পাগল হয়ে গেল রমেন। পড়া গেল। ভিটেটুকুও গেল। একসময় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, খাবার নেই, বদ্ধ উন্মাদ সে। খুড়তুতো ভাইরাই বারবাড়িতে থাকতে জায়গা দিয়েছিল। সেখানেই একটা তক্তাপোশে আজও শুয়ে আছে রমেন। পেটে খিদে, গায়ে ব্যথা। শশী জানতে চাইছিল, সে বিষ দিয়েছে কি না! রমেন কোনও উত্তর দেয়নি। আসলে সে যে কেন বিষ দেবে, তাই-ই তো ভেবে পাচ্ছিল না। অথচ আত মার সইতে হল। রমেনের আরও একবার মনে হল, সে মরে গেল না কেন!

কথায় বলে অদৃষ্টের লেখা মোছে না! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিবেদিতাকে ফিরতে হয়েছিল। বরটা ছেলে ভালই ছিল, কিন্তু বাসের তলায় পড়েছিল। কেউ কেউ বলে আসলে নেতাদের সঙ্গে ঘুরত-টুরত। কী একটা কুকর্ম ফাঁস করে দিতে ছেলেটাকে নেতারাই পিষে দিয়েছে। যাই হোক নিবেদিতা আবার একদিন তারাতলায় ফিরে এল। আর কী আশ্চর্য পঞ্চানন্দ তালুকদারের দ্বিতীয়বার বিয়ের ইচ্ছেটাও চাগাড় দিয়ে উঠল। বউ তার আগেই মরেছিল। এতবছর একলাই ছিল। হঠাৎ মনে হল, একেবারে সামাজিক কর্তব্য আর স্ত্রীসুখের বন্দোবস্ত এবার করে নিলেই হয়।

একে তারাতলার ওই একটাই ডাক্তার। তার উপর সদ্য বিধবার হিল্লে। তারাতলার মাতব্বররা আপত্তি করেনি। ফলে আরও একবার বিয়ে হয়ে গেল নিবেদিতার। রমেনের তখন চাল নেই, চুলো নেই, উন্মাদই। সেও আজ কতবছর আগের কথা।

আজ এই তক্তপোশে শুয়ে শুয়ে মনে হচ্ছে, নিবেদিতা তার কাছে না এলেই পারত। নাহয় আর একটু সন্ধে পর্যন্ত পুকুরধারে বসে থাকত সে। যে কথা গাঁয়ের কেউ ঘুণাক্ষরে কোনওদিন জানেনি, সে কথা নিশ্চয়ই পঞ্চানন্দ বুঝতে পেরেছে। নইলে নিজের পুকুরে বিষ দিয়ে তাকে মার খাওয়াবে কেন!

আরও পড়ুন, ছোট গল্প: উপনিবেশ

৩)

পরদিন ব্যথার ভিতর যখন রমেনের তন্দ্রা ছুটল, তখন গাঁয়ে বিস্তর হই-হল্লা হচ্ছে। কলরব কানে আসতেই সিঁটিয়ে গেল রমেন। আবার কি তাকে মারতে আসছে? পঞ্চানন্দের অন্য পুকুরেও কি আবার তবে কেউ বিষ দিয়েছে!

একবার ভাবল, এগিয়ে গিয়ে শুনবে। তারপর মনে হল, যদি কেউ মারে। থাক, কাজ নেই। আর এই এত যন্ত্রণার ভিতর আশ্চর্য একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল পাগলা রমেন। সত্যিই তো সেই কাল সন্ধেয় বিশু একবার খোঁজ নিয়ে দুটো মুড়ি দিয়ে গিয়েছিল। আর তো কেউ আসেনি। এ জগতে তার তো কেউ নেই। তাহলে সে এই তারাতলায় পড়ে থাকবে কেন!

ভয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়েই সুট করে পিছনে চলে গেল। তারপর শরীরটাকে টেনে টেনে মাঠে গিয়ে নামল। মাঠটা সকলের চোখের আড়ালে পেরতে পারলেই বড় রাস্তায় পড়া যাবে। তারপর বাসে করে রেলস্টেশন। তারপর যেদিকে দু-চোখ যায়। চোখ মেলে সে দেখল, কাছেপিঠে কেউ কোত্থাও নেই।

থাকবে কী করে! তারাতলায় তখন জোর হইচই। পঞ্চানন্দ তালুকদারকে ধরতে খবরের লোক এসেছে। লোকটা নাকি ডাক্তারি পাশই করেনি। স্রেফ গ্রামের লোকেদের মাথায় টুপি পরিয়ে এদ্দিন চালাচ্ছিল। খবর পেয়ে লোক এসেছে। সঙ্গে ক্যামেরা-গাড়ি...। ছোট্ট গ্রামটায় একেবারে হুলস্থুল পড়ে গেছে। খবরের লোকটা বলছে, পুলিশ এল বলে। পঞ্চানন্দকে নাকি ধরে নিয়ে যাবে। গোটা রাজ্যে নাকি এইরকম ডাক্তারদের এখন ধরা হচ্ছে।

পঞ্চানন্দ ডাক্তারিতে পাশ দিয়েছে না দেয়নি, তা কারওর কোনওদিন জানার দরকারই পড়েনি। এমনকী মাতব্বর শশীও জানত না। সে মাথা চুলকে চুলকে বলছিল, কঠিন কঠিন অসুখ কিন্তু সারিয়ে দেয়...। কিন্তু খবরের লোক কি শোনে তার কথা! বলে, এনার স্ত্রী আর বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলব। একটু হেল্প করুন তো। শশী ফের মাথা চুলকে বলকে, হ্যাঁ চলুন।

কিন্তু নিবেদিতাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন সকালের রোদ মাথায় উঠতে শুরু করেছে। পাগলা রমেন মাঠ পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠে পিছন ফিরে তাকিয়েই একেবারে স্বর্গ পাওয়ার মতো অবাক হয়ে গেল। দেখে হনহনিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে একজন। যেন প্রাণপণ দৌড়াচ্ছে। বিশ্বাস করতে না পেরে রমেন চিমটি কাটল  নিজের গায়ে। আর চামড়ায় সাড় পাওয়ার সময়টুকুর মধ্যেই কাছে চলে এল নিবেদিতা। হাঁপাচ্ছে আর বলছে, পালাচ্ছিলে কেন? যদি ঘরের পিছন দিকটা না যেতাম, তবে তো আর কোনওদিন খোঁজই পেতাম না। রমেন কী একটা বলতে যাচ্ছিল, থামিয়ে দিয়ে নিবেদিতা বলে, বাস এলেই হাত দেখিয়ে দাঁড় করাও। আমাদের উঠতে হবে।

রমেন আস্তে আস্তে বলে, আর পঞ্চানন্দ?

মুখের ঘাম মুছে আঁচলটা গায়ে টেনে কপালে হাত ঠেকায় নিবেদিতা। মৃত স্বামীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার। ওনারই এক বন্ধুর ফোন নম্বরটা এতদিন পড়েই ছিল। লোকটা বলেছিল, দরকারে যেন সে ফোন করে। এই এত বচ্ছরে প্রথম দরকার পড়ল। তবে রমেনকে এসব বলে কী লাভ! পাগল প্রেমিকের মুখের দিকে তাকিয়ে সে শুধু বলে, কী দরকার তাকে তোমার? ব্যথার ওষুধ লাগবে বুঝি!

Bengali Literature Bengali Short Story
Advertisment