অতীতে, বাংলা বইয়ের প্রকাশ ঘিরে উদ্দীপনা থাকত বৈশাখে। পয়লা বৈশাখের দিন লেখক-পাঠক নতুন চুক্তি হত, লেখকদের হাতে অর্থ দিতেন প্রকাশকরা। সে দিন গেছে। এখন বাংলা বইয়ের যা কিছু সাজো সাজো, সে সব বইমেলা ঘিরে।
কিন্তু, "যা গেছে তা যাক"- সদা সত্য নয়।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলা বইয়ের মেলা শুরু হয়েছিল। খাস কলকাতায়। তার পোশাকি নাম বই উৎসবে। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ, চেনা ১০ বা বড়জোর ২০ শতাংশ ছাড়ের চেয়ে বেশি ডিসকাউন্টে বই পাওয়ার সুযোগ।
এ উৎসব অনুষ্ঠিত হল, বইপাড়া বলে পরিচিত কলেজ স্ট্রিটের কলেজ স্কোয়ারে। ২০১৪ সাল থেকে এখানে এ উৎসব হচ্ছে। শুরুর দিকে মাত্র মাস চারেকের ব্যবধানে বইমেলায় অংশগ্রহণ নিয়েই অনেকের সংশয় ছিল। যেমন সপ্তর্ষি প্রকাশন। তারা এ বছরই প্রথম এ মেলায় যোগ দিয়েছে। সপ্তর্ষির কর্ণধার সৌরভ মুখোপাধ্যায় বললেন, এবারের উৎসবে যোগ দিয়ে বুঝছেন, আগে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। "কলকাতা বইমেলার মাঠে আমাদের বড় স্টল থাকে। অনেক বই ডিস প্লে করা সম্ভব হয়। এখানে জায়গা কম। শুধু আমাদের বাছাই বইগুলোই রাখছি। এবং সত্যি বলতে কী, ব্যবসার যদি গড় হিসেব করতে হয়, তাহলে কলকাতা বইমেলার তুলনায় খারাপ তো হয়ইনি, পুরো হিসেব করলে হয়ত দেখা যাবে, ভালোই হয়েছে। আগে থেকে এলেই ভালো হত।"
এটা অবশ্য বইমেলা নয়। এর নাম বই উৎসব। নববর্ষের দিন শুরু হওয়া এ উৎসবের উদ্বোধন করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। উদ্যোক্তা সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড। গিল্ডের তরফ থেকে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, "২০১৪ সালের পর থেকে প্রতি বছরই বই উৎসব ঘিরে উৎসাহ বাড়ছে। এবার মেলায় স্টলের সংখ্যা ৭০- এর বেশি। প্রতি বছর অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, এত সাড়া পাব ভাবিনি।" এ তো গেল অংশগ্রহণকারীদের কথা। আর ক্রেতা? "সে সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। প্রতি বছরই বেশি বেশি সংখ্যক মানুষ আসছেন।"
কেন? মেলায় ঘুরছিলেন অভিষেক সরকার। জানালেন, "এ উৎসবটা আসলে অনেকটাই পাবলিকেশনগুলোর স্টক ক্লিয়ারেন্স সেলের মত। ছাড় বেশি। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। সেটা পাঠক-ক্রেতাদের আকর্ষণের একটা বড় কারণ।"
মেলাতেই ছিলেন জারি বোবাযুদ্ধ লিটল ম্যাগাজিনের প্রচেতা ঘোষ। উৎপল দত্ত সমগ্র কম দামে পেয়ে, দাঁও জেতার হাসি তাঁর চোখে মুখে।
কিন্তু এ উৎসবে ব্রাত্য কেন লিটল ম্যাগাজিন? একটি কোণেও তাদের কেন দেখা মেলে না? ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বললেন, "জায়গা নিয়ে হয়ত একটা সমস্যা হতে পারে, কিন্তু আমাদের কাছে এরকম কোনও প্রস্তাব লিটল ম্যাগাজিনের তরফ থেকে কখনও আসেনি।" কথাটা স্বীকার করে নিলেন লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরির কর্ণধার সন্দীপ দত্তও। তিনি জানালেন, "সত্যিই আমরা কখনও ভাবিনি, কখনও প্রস্তাব দেওয়াও হয়নি। কথাটা যখন উঠলই, তখন বিষয়টা ভেবে দেখা যেতে পারে।"
মেলায় হাজির ছিল দু বছরের প্রকাশনা সংস্থা দোসর। বাংলা ও ইংরেজি দু ধরনের নন ফিকশন প্রকাশ করে থাকে এই প্রকাশন সংস্থাটি। সিরিয়াস ধরনের বই পাঠকের কাছে নিয়ে যাওয়া তাঁদের উদ্দেশ্য। কাশিমবাজারেরর ইতিহাস বা কলকাতার ইতিহাস নিয়ে তাঁদের বই বেশি মানুষ পছন্দ করছেন বলে জানালেন প্রকাশন সংস্থার সায়নী দত্ত মিত্র।
অবভাস প্রকাশনার দায়িত্বে থাকা পার্থ চক্রবর্তীর মতে, এ উৎসবে পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁদের উৎসাহিত করছে কয়েকবছর ধরে। কলকাতা বইমেলার তুলনায় বিক্রি পরিমাণে হয়ত কম, কিন্তু লোকসান হচ্ছে, এমন নয়।
তবে মহাবোধি সোসাইটির দিকে যাঁদের স্টল, তাঁদের অনেকেই রোদ নিয়ে ভুগেছেন। চড়া সূর্যের কারণে, দুপুরের দিকে ওদিকে লোকজন ঘেঁষেনি তো বটেই, স্টলে দায়িত্বপ্রাপ্তরাও বসতে কষ্ট পেয়েছেন।
তবে এখানে স্থান সংকুলান সমস্য়া হবে বলে আশঙ্কায় আছেন ত্রিদিব বাবু। বললেন, "সকলকে জায়গা দিতে পারা যাবে না। গোলদিঘি তো আর টেনে লম্বা করা সম্ভব নয়।"