Advertisment

গরু-ঘোড়া-ঘোড়ার ডিম এবং বাঘ: জঙ্গল নয়, রাজনীতির গল্প

কমিউনিস্ট পার্টির প্লেনামে পাড়া হবে ঘোড়ার ডিমটি। আর সেই ডিম ফুটলে জানা যাবে 'বিশ্ব বিপ্লবের দিনক্ষণ'। আলিমুদ্দিনের ছাদে কড়া নিরাপত্তায় এই ডিমে তা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন আবার 'প্রকাশপন্থীরা'।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকরণ- অরিত্র দে।

সাংবাদিকতা বা প্রতিবেদন আদতে ইতিহাসের খসড়া। এমনটাই মনে করেন বহু পণ্ডিত। অর্থাৎ আজ যা খবর, আগামীতে সেসব ঘটনাবলীই পরিমার্জিত হয়ে ঠাঁই নেয় ইতিহাসের পাতায়। আর সে জন্যই আদর্শের দিক থেকে 'ইতিহাসকার'কে (এ ক্ষেত্রে সাংবাদিককে) পরম বস্তুনিষ্ঠতা এবং চরম নিরপেক্ষতার ঠুলি পড়ে থাকতে হয় সর্বক্ষণ। তা না হলেই তো মহাপাপ, ইতিহাস পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়বে। কিন্তু, সাংবাদিকেরও তো একটা মন এবং সত্তা থাকে। সেখানেও তো আঁচড় কাটে এসব ঘটনা। বিশেষত রাজনৈতিক ঘটনাবলী। আর সেইসব আঁচড়ের তো একটা প্রতিক্রিয়াও থাকে। কিন্তু, ধর্ম থেকে বিচ্যুতি কিংবা 'প্রতিক্রিয়াশীল' (এখন এ রাজ্যে এই শব্দটির তেমন বাজার না থাকলেও বামকালে প্রায় হটকেক ছিল) হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সেসব সরাক্ষণ ডানা ঝাপটাতে থাকে। আর সুযোগ পেলেই বেরিয়ে আসে 'এক ডজন গোরু ও অন্যান্য'-র মতো করে। এই চাপা প্রতিক্রিয়ার বেরিয়ে আসাটা অনেক ক্ষেত্রেই 'স্যাটায়ার ধর্মী'। প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রের এই সংকলনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। খবরে চোখ রাখা পাঠক এ বইয়ের পাতা উলটালেই বুঝতে পারবেন সে কথা।

Advertisment

বিগত চার-পাঁচ বছরে ভারতের জাতীয় রাজনীতি ও সমাজে ইস্যু (বা ননইস্যু) হিসাবে গরুর প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য। নিত্য খবরের শিরোনাম দখল করে হয় গরু, না হয় গরু-বাহিনী। পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে সেসব ঘটনাকে খুবই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। আর এসব ঘটনা দেখতে দেখতে এবং অন্তরালের সত্য অনুভব করে আমোদিত, বিরক্ত এবং কথনও কখনও শঙ্কিত হয় সাংবাদিক মন। এই বইয়ে তাই গো-রাজনীতির নানা দিকই প্রাধান্য পেয়েছে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের ছলে। তাছাড়া, সংকলনটির নামে যেহেতু 'এক ডজন গোরু' রয়েছে, তোই গরুর গুরুত্বই সর্বাধিক, একথা ভূমিকাতেই জানিয়ে দিয়েছেন লেখক। গো-রাজনীতির গন্তব্য যে আদপে 'অ্যাবসার্ডিটি', সে বিষয়েও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র।

তবে, শুধু গরুই নয়, ঘোড়াও রয়েছে আলোচনায়। বলা ভাল, গরু-ঘোড়া ছাড়াও এই সংকলনে স্থান পেয়েছে ঘোড়ার ডিমও। কমিউনিস্ট পার্টির প্লেনামে পাড়া হবে ঘোড়ার ডিমটি। আর সেই ডিম ফুটলে জানা যাবে 'বিশ্ব বিপ্লবের দিনক্ষণ'। আলিমুদ্দিনের ছাদে কড়া নিরাপত্তায় এই ডিমে তা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন আবার 'প্রকাশপন্থীরা'। অর্থাৎ বর্তমান রাজনীতিতে সিপিআই-এমের রাজনৈতিক লাইনের প্রতি শানিত শ্লেষ ধরা পড়েছে একাধিক লেখায়। সিপিএম-এর অন্দরের চিরকেলে খাঁটি বনাম উদার অর্থাৎ প্রকাশ বনাম সীতারাম 'কনফ্লিক্ট'ও উঠে এসেছে 'লঘু-গুরু বিতর্কে'। তবে, রচনাকাল প্রকাশ জমানা হওয়ায়, 'লঘু-গুরু'-র পরিচয়ও সেই অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে।

রাম-বামেই না থেমে থেকে, জোড়াফুলেও তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন শুভাশিস মৈত্র। রাজ্যে 'দিদিমণি'র সরকারের নানা সিদ্ধান্ত এবং নীতি নিয়ে সুন্দরবনের বাঘেদের অসন্তোষের কথা শোনানো হয়েছে ব্যাঙ্গের ছলে। 'সিন্ডি দা' ও পুঠা'র কথোপকথন অথবা 'ভাই ভাই' সিমেন্টের গুঁতো খেয়ে গোবরডাঙায় চলে আসা মার্ক জুকেরবার্গের ভয় থেকে রাজ্যের সিন্ডিকেট চিত্র এবং গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনাবলীর আঁচ পাওয়া যায়।

সব মিলিয়ে এই সংকলনে সম্প্রতিককালের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতির এক সরস ও তীর্যক ছবি ধরা পড়েছে। নির্মেদ গদ্য এবং লেখকের সাবলীল অভিব্যক্তির কারণে বইটিও বেশ সুখপাঠ্য। লেখাগুলি বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অতীতে একাধিক পত্রপত্রিকা এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলেও এভাবে দুই মলাটের মধ্যে চলে আসায় তা 'পলিটিক্যালি কনসাস' (মিথ না মিথ্যা জানি না) বাঙালির ভালই লাগবে বলে আশা করা যায়।

এক ডজন গোরু ও অন্যান্য।

প্রকাশক- ধানসিড়ি।

দাম- ১৫০ টাকা।

journalist Book Review
Advertisment