শারদীয়া উপলক্ষ্যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় শুরু হয়েছে পুজোর বিশেষ গল্প। আজকের গল্প 'সেক্টর ফাইভ' (প্রথম পর্ব)। লিখেছেন তপশ্রী পাল
সাড়ে আটটায় অনিমেষের সঙ্গে খেতে বসে আড় চোখে শাশুড়ির দিকে তাকায় নিবেদিতা। দুজনের পাতেই গরম ডাল ঢেলে দেন শাশুড়ি। নিবেদিতা জানে ঐ নির্লিপ্ত মুখের আড়ালে অনেক কথা! একটু নাড়া পড়লেই ঝড়ের মতন বেরিয়ে আসবে।
ওদের বিয়ে হয়েছে মাসখানেক। দুজনেই ইঞ্জিনীয়ার। অনিমেষ একটা কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে ডিজাইনে কাজ করে আর নিবেদিতা এক নামকরা সফটওয়ার কোম্পানীতে। শাশুড়ি বললেন “তোমরা এত তাড়াহুড়ো করে বেরোলে আমি কি এই বয়সে পাল্লা দিতে পারি? অনিমেষকে তো এখন তোমার ভাত বেড়ে দেওয়ার কথা!” অনিমেষ বলল “বেরোনোর সময় তোমার এই সব না বললে কি হয় না? আমরাই বেড়ে নিতে পারি! কিন্তু ছেলেকে বেড়ে না দিলে তোমারই ঘুম হয় না!”
শ্বশুরমশাই বললেন “এতো সকাল সকাল বেরোচ্ছ – তুমি এখন কোন প্রজেক্টে আছো বৌমা?” নিবেদিতা ভালই জানেন যে উনি নাম বললে বুঝবেন না। কিন্তু মিথ্যে বলতে ইচ্ছে হল না। নিবেদিতা বলল “আমি তো সবে জয়েন করেছি। এখনো প্রজেক্ট পাইনি। বেঞ্চে আছি।“ বলে দ্রুত দরজা খোলে।
পিছন থেকে ঘোলাটে চোখে চেয়ে শ্বশুরমশাই বলেন “বেঞ্চে বসে থাকো তুমি? তার জন্য তোমার মাকে সকাল সকাল ভাত বেড়ে দিতে হয়!” কোন কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে যায় নিবেদিতা। অফিস বাসটা মিস করবে নইলে! অনিমেষের অফিস কাছে। নিবেদিতার সেই সেকটর ফাইভ!
বেশ কটা বিল্ডিং নিয়ে নিবেদিতাদের বিরাট মালটিন্যাশনাল কোম্পানী। প্রতিটা ফ্লোর যেন এক একটা শহরের মত! একবার ঢুকলে বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কাঁচের দেওয়াল ঘেরা। সেন্ট্রাল এসিতে ভিতরটা হিমের মত ঠান্ডা! অসংখ্য লাল নীল হলুদ কিউবিকলে বসে আছে ছেলেমেয়েরা। নিজস্ব ল্যাপটপ, চাকা লাগানো চেয়ার, মাথার ওপর লকার আলমারী আর পায়ের কাছে তিনটি ড্র্য়ার নিয়ে সবার জগত। একটি কিউবিকল অধিকারের জন্য কত মারামারি! যতক্ষণ প্রোজেক্টে না ঢুকবে, কোন বসার জায়গা নেই। বেঞ্চে যারা রয়েছে তাদের হয় লাইব্রেরীতে নয় ক্যান্টিনে বসে সময় কাটাতে হয়। সবাই কেমন করুণার চোখে তাকায়।
নিজের আইডি কার্ডটা সোয়াইপ করে বিল্ডিং-এ ঢুকেই লিফটে লাইব্রেরীতে চলে গেল নিবেদিতা। একটা বই মুখে করে বসে থাকতে হবে! ঢুকেই দেখল অঞ্জন আর কাবেরী এসে গেছে! যাক বাবা, অন্ততঃ একা বসে থাকতে হবে না। ওরাও আপাতত বেঞ্চে। অঞ্জন বলল “আমি আজ প্রজেক্ট পেয়ে গেছি!” জোর করে একটা হাসি দিয়ে নিবেদিতা বলল “খুব ভাল খবর! কোন প্রজেক্ট?” “নতুন যে স্যাপ প্রজেক্ট এসেছে, সেখানে!” মনে মনে ভাবে নিবেদিতা, অঞ্জনটা কী লাকি! নিবেদিতারও তো “স্যাপ”-এর অভিজ্ঞতা রয়েছে! তাহলে ওকে নিল না কেন? মুখে বলে “আজ ক্যান্টিনে খাওয়াতে হবে কিন্তু!” কাবেরী এতক্ষণ চুপচাপ। নিবেদিতা বলল “কী, এত চুপচাপ?” “ভীষণ চিন্তায় আছি গো! যদি এমন প্রজেক্টে দিয়ে দেয়, যেখানে রাত জেগে কাজ করতে হবে কিংবা বাইরে টাইরে পাঠিয়ে দেয়, তবে চাকরী ছাড়তে হবে আমাকে! শ্বশুরবাড়িতে কেউ চায় না কর্পোরেটে চাকরী করি। সবাই বলে মেয়েদের টিচার হওয়াই ভাল। আমাকে যে করে হোক সন্ধে সাতটার মধ্যে বাড়ি ঢুকতেই হবে! সেই কোন্নগর!” কাবেরীকে দেখলে করুণা হয় নিবেদিতার। কোন যুগে যেন আটকে আছে!
লাঞ্চের পর বিল্ডিংগুলোর মধ্যের খোলা রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছিল কাবেরী আর নিবেদিতা। হঠাত কাবেরীর মোবাইলটা বেজে উঠল! এইচ-আর! ওর মুখ সাদা হয়ে গেছে। নিবেদিতাকে বলল “শমন এসে গেছে! কী হয় তোমাকে জানাব! হয়তো আজই চাকরীর শেষ দিন!” এমন নেকুপুষু ভাব সহ্য হয় না নিবেদিতার। চাকরী করতে এসে বাপেরবাড়ি শ্বশুরবাড়ি ভাবলে চলে? রিসেপশনে এসে সোফায় বসল নিবেদিতা। এভাবে দিন কাটানো যে কত শক্ত তা এই একমাসে বুঝেছে। মোটামুটি বছর দুয়েকের অভিজ্ঞতা ওর। ছোট মাঝারি দুটো কোম্পানীতে কাজ করে এসেছে বিয়ের আগে। এই প্রথম এতবড় মাল্টিন্যাশনালে সুযোগ পেয়েছে। পড়াশুনা করে যদি ক্যারিয়ারই না করতে পারল তা হলে আর লাভ কী? টেবল থেকে একটা ম্যাগাজিন তুলে নিয়ে ওল্টাতে ওল্টাতে সাত পাঁচ ভেবে যাচ্ছিল।
বিকেলে চা খেতে গিয়ে আবার দেখা হয়ে গেল কাবেরীর সঙ্গে। ওর চোখমুখ জ্বলজ্বল করছে! বলল “বেঁচে গেছি, জানো! আমাকে ডোমেস্টিক প্রজেক্টে দিয়েছে! ছোটখাট প্রোগ্রাম চেঞ্জ করতে হবে আর টেস্টিং! ধরাবাঁধা সময়ের কাজ! আমি রোজ ছটার বাসে বেরিয়ে যেতে পারব! যাক বাবা!” নিবেদিতা অবাক হয়। মেয়েদের এই কম্প্রোমাইস করা যে কবে শেষ হবে!
দেখতে দেখতে ছটা বেজে গেল। সেদিন আর ডাক পেল না নিবেদিতা। নীচে নেমে অফিস বাসের দিকে এগিয়ে চলল। আজ মাঝপথে নেমে পড়বে। অনিমেষও অফিস থেকে একটু আগে বেরোবে। দুজনে পার্ক স্ট্রীটে কেনাকাটা করতে যাবে। একদম ডিনার খেয়ে ফিরবে! রোজ বাড়ির ঐ থোড় বড়ি খাড়া খেতে একটুও ভাল লাগে না নিবেদিতার। অনিমেষও বাইরে খেতে ভালবাসে।
সায়েন্স সিটিতে নামতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। যা থাকে কপালে ভেবে একটা ট্যাক্সিতেই উঠে পড়ল! পার্ক সার্কাসের মোড়ে অনিমেষ দাঁড়িয়েছিল। অনিমেষের সঙ্গে একটা মেয়ে! বেশ স্মার্ট দেখতে! কে মেয়েটা? মনে মনে ভাবে নিবেদিতা। টিপিকাল মেয়েদের মত গায়ে পড়ে জিজ্ঞাসা করতে বাধে ওর। অনিমেষের সঙ্গে মেয়েটাও ট্যাক্সিতে উঠে বসল যে! বেশ বিরক্ত লাগল। অনিমেষ বলল “পরিচয় করিয়ে দি! মণিদীপা! আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছে। রিপন স্ত্রীটের দিকে থাকে। ওখানে নেমে যাবে। হঠাত বৃষ্টি এসে গেল। ওর বাসটাও আজ আসেনি, আমরা ওদিকেই যাচ্ছি তাই ওকে বললাম চলে আসতে!” নিবেদিতা ঠান্ডা গলায় “ভাল লাগল আলাপ হয়ে“ বলে চুপ মেরে গেল। মেয়েটা আড়ে আড়ে ওকেই দেখছে! রিপন স্ট্রিটের মোড়ে নেমে যেতেই অনিমেষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল নিবেদিতা “সুন্দরী মেয়ে দেখলে, পরোপকার করতে খুব ভাল লাগে, না?” অনিমেষটা ফিচেলের মত হাসতে লাগল! হাসলে ওকে ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগে! ওকে একটা দারুণ হ্যান্ডব্যাগ কিনে দিল অনিমেষ আর রাত্রে ওর প্রিয় চাইনিজ জয়েন্টে খাওয়াদাওয়া। সন্ধ্যাবেলার রাগ কোথায় মিলিয়ে গেল! বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত দশটা। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢুকে গেল ওরা। শ্বশুর শাশুড়ি খেয়েদেয়ে নিজেদের ঘরে টিভি দেখছেন। বাড়িতে বলে দিয়েছিল অনিমেষ, রাতে খাবে না। বাইরে বৃষ্টিটা বেড়ে উঠেছে! রাতে বিছানায় অনিমেষের উষ্ণ সান্নিধ্যে গলে যেতে যেতে নিবেদিতা বলল “এই, আমি কিন্তু প্রোজেক্টে সেটলড না হয়ে কনসিভ করতে চাই না!” অনিমেষ কোন বাধা মানতে চাইছে না! বাইরের বিদ্যুৎ চমকের সঙ্গে আরো যেন বন্য হয়ে উঠছে! একটা ভাল লাগা নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেও ছেয়ে যাচ্ছে নিবেদিতার মধ্যে! বাধা দেওয়ার শক্তি হারিয়ে গেছে!
রাত নটা বেজে গেছে। অফিস এখন নিস্তব্ধ! রাগিনীর কিউবিকল একেবারে রাস্তার দিকের কাঁচের দেয়াল ঘেঁষে। ইন্টেলিজেন্ট অফিস-বিল্ডিংয়ে লোকজন চলে গেলে, সেদিককার লাইটগুলো নিজেই অফ হয়ে যায়। এখন একটা আলো আঁধারি। দেয়ালের ভারী পর্দা সরাতেই রাস্তায় চোখ পড়ল রাগিনীর। ছ’তলা থেকে রাস্তায় গাড়িগুলোকে খেলনা গাড়ির সারি মনে হচ্ছে! লাইটপোস্টের নীলাভ আলোয় কেমন অলৌকিক লাগছে চারিদিক! একটা প্রোপোসাল প্রেসেন্টেশন আছে আজ! তার জন্যই রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে। শেষ মূহূর্তে টেকনিকাল প্রোপোসাল আর এস্টিমেট এসেছে। একটা ডামি প্রোডাক্ট প্রেসেন্টেশন এসেছে। কোম্পানীর ব্যাকগ্রাউন্ড, কাজকর্মের প্রেসেন্টেশনটা নিজে তৈরী করেছে রাগিনী। কেন এই প্রোজেক্ট ওদেরই পাওয়া উচিৎ, পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উঠে এসেছে ওর স্লাইডে! সব জুড়ে রেডি করতে হবে। শেষ মূহূর্তে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিল! প্রোজেক্টটা পেলে একটা ভাল হাইক আর প্রোমোশন এক্সপেক্ট করছে রাগিনী! প্রথমে আমেরিকায় ক্লায়েন্ট এনগেজমেন্ট ম্যানেজারের সঙ্গে কল। সব ঠিক থাকলে, তবেই ক্লায়েন্টকে প্রেসেন্ট করা হবে। রাগিনী ছাড়াও অফিসে রয়েছে টেকনিকাল প্রোপোসাল টিম, কমারশিয়াল টিম এবং প্রদ্যুম্ন রাই! কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছে না রাগিনী। মনটা চঞ্চল হয়ে আছে! স্বপ্ন দেখছে, এই গ্রুপে ভাল কাজ করলে, ও একটা অন্য লেভেলে চলে যাবে!
হঠাত ওর হোয়াটস-অ্যাপে রাজীব ভিডিও কল করল! রাজীবের কোলে পৃথা! মাত্র তিন বছর বয়স মেয়েটার! বড্ড মিস করে রাগিনীকে! রাগিনী বলল “খানা হো গিয়া বেটা? মৌসী চলি গয়ী?” “মাম্মা, তুম কব আওগে? কিতনি রাত হো গয়ে!” “অভি সো যাও বেটা, দের হোগী! বহুত কাম হ্যায়!” “এক কিসি দে দো!” মেয়েকে ফোনেই একটা চুমু খেল রাগিনী। রাজীবের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো পৃথা! রাজীব যথেষ্ট সাপোর্ট করে, কিন্তু এখন রাজীবের মুখ গম্ভীর। বলল “তুম ইয়ে ক্যা রেসপন্সিবিলিটি লে লি ইয়ার? দো বচ্চে লেকে অ্যায়াসা কাম মত লো! অডিট কা কাম আচ্ছা থা!” রাজীব তো জানে না এখন সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ ওর! ভাল করলে প্রমোশন, নইলে গালি! পরিচিত রাগিনীকে আজকাল আর ধরা ছোঁয়ার মধ্যে পায় না রাজীব!
এই কোম্পানীতে প্রায় ছ’বছর হয়ে গেল রাগিনী শর্মার। দিল্লী থেকে প্রাইভেট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজীব, বদলী হল কলকাতায়। বহু চেষ্টায় রাগিনীও বদলী নিয়ে চলে এল। রাজীব খুশি ছিল না বদলী নিয়ে। কলকাতা ইস নট এ হ্যাপেনিং প্লেস। ওর ইচ্ছে ছিল মুম্বাই বা ব্যাঙ্গালোরে বদলী হোক। কিন্তু কলকাতায় নতুন ব্রাঞ্চ খুলেছে তখন ব্যাঙ্ক, খুব চাপ। ছেলে মানবকে ভাল স্কুল ছাড়িয়ে আনবে কি না ঠিকই করতে পারছিল না বলে প্রায় বছরখানেক পরে এসেছিল রাগিনী। ওদের ইচ্ছে ছিল ম্যাক্সিমাম বছর দুয়েক থেকে অন্য কোথাও চলে যাবে। কিন্তু এখানে এসে রাজীব এমন জড়িয়ে পড়ল যে তিনটে বছর নড়ার উপায় রইল না। তারপর মেয়ে পৃথা এসে গেল আর কখন যেন এই লে’ডব্যাক শহরটাকে ভালবেসে ফেলল ওরা। শ্বশুর শাশুড়িকেও রাজীব নিয়ে এসেছে দিল্লী থেকে। বাচ্চারা দাদা দাদির কাছে বেশ থাকে। আর আয়া মৌসি তো আছেই। ওরা বড় একটা ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছে নিউ টাউনে।
রাগিনীর নিজের স্কিল “অর্যাকল”। দিল্লীতে থাকতে ও একটা ছোট প্রোজেক্ট লিড করছিল। কলকাতাতে এসে তত ভাল কাজ পাচ্ছিল না রাগিনী। তবুও এতদিন অডিট গ্রুপে প্রজেক্ট অডিট করে কাটিয়েছে। কিন্তু চার বছর কোন প্রমোশন পায়নি । হঠাত একদিন ক্যান্টিনে প্রদ্যুম্নর সঙ্গে দেখা। সেদিনের কথা স্পষ্ট মনে পড়ে রাগিনীর।
ক্যান্টিনে অডিট গ্রুপের চার পাঁচজন ছেলেমেয়ের সাথে চা খেতে গিয়েছিল রাগিনী। উল্টোদিকের টেবলে বসে চা খাচ্ছিল বছর চল্লিশেকের প্রদ্যুম্ন! যতবার ওদিকে চোখ গেছে, ততবার দেখেছে লোকটির চোখ ওর দিকে। একটু অস্বস্তি হলেও কেয়ার করেনি। চা খাওয়া শেষে হঠাত উঠে দাঁড়িয়েছিল প্রদ্যুম্ন। রাগিনী নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও তাকাতে বাধ্য হয়েছিল ছ ফুট লম্বা নিখুঁত নীল স্যুটে সজ্জিত হ্যান্ডসাম প্রদ্যুম্নর দিকে। ওদের টেবলে সব চেয়ার ভর্তি তাও, পাশের টেবল থেকে একটা চেয়ার টেনে দুজনকে পুশ করে এসে বসল প্রদ্যুম্ন। রাগিনীর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল “হাই, দিস ইস প্রদ্যুম্ন রাই! আই অ্যাম হেডিং প্রি-সেলস ফাংশন অ্যাস সিনিয়ার গ্রুপ ম্যানেজার। হোয়াট’স ইয়োর নেম প্লিস!” রাগিনীর ভ্রু কুঁচকে গেছিল! কী অদ্ভুত গায়ে পড়া লোক রে বাবা! তাও ভদ্রতার খাতিরে বলেছিল “আই অ্যাম রাগিনী শর্মা, লুকিং আফটার অডিট ফাংশন!” “লুকিং র্যাভিশিংলি বিউটিফুল ইন গোল্ডেন ইয়েলো!” বলে হাসিমুখে তাকিয়েছিল প্রদ্যুম্ন! রাগিণীর মুখ লাল! বুঝতে পারছিল না কী করে এত সিনিয়ার লোকটাকে অ্যাভয়েড করবে! দিল্লীতে ফ্লার্টিং অনেক দেখেছে। বিয়ের আগে তো আরো সহ্য করতে হত। কিন্তু কলকাতায় এসে এরকম কখনো ফেস করেনি! শুকনো ভাবে “থ্যাঙ্কস” বলে রাগিনী উঠে গিয়েছিল সেদিন সদলে। কিন্তু প্রদ্যুম্নকে সরাতে পারেনি।
কিছুদিন পরেই প্রি-সেলস গ্রুপের ইন্টারনাল অডিটে বেশ কিছু নন-কনফরম্যান্স অর্থাৎ নিয়মের ভুল ধরা পড়েছিল। রিপোর্ট সই করতে যাবে রাগিনী, এমন সময় প্রদ্যুম্ন এসে হাসিমুখে বসল “হোপ আওয়ার গ্রুপ হ্যাস নো এন-সি!” “ইউ হ্যাভ সাম মেজর ওয়ানস!” বলে উঠল রাগিনী। “তাহলে ওই রিপোর্টটা ছিঁড়ে ফেলে আর একটা বানাও। নতুন প্রোজেক্ট আনতে গেলে অত নিয়ম মানা যায় না!” বেশ কনফিডেন্টলি বলেছিল প্রদ্যুম্ন! আবারও দিশাহারা হয়ে গেছিল রাগিনী! এ ভাবে যে অডিট গ্রুপের রিপোর্ট কেউ চেঞ্জ করতে বলতে পারে, ভাবতেই পারেনি! ওর কিউবিকলে খুব কাছ ঘেঁষে টেবিলের ওপর বসেছিল প্রদ্যুম্ন! কী একটা পারফিউম মেখেছিল! অসাধারণ গন্ধ! না চাইলেও কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছিল রাগিনী!
অনেক চেষ্টায় নিজেকে স্থির করে বলেছিল “নট পসিবল! ক্লোস করতে হবে এগুলো। কাল আমি নিজে চেক করব! আপনি তো জানেন, অডিট গ্রুপ ইস ইন্ডিপেন্ডেন্ট! আমাদের রিপোর্ট সরাসরি সিইওর কাছে যায়!” হা হা করে হেসে উঠে প্রদ্যুম্ন বলেছিল “আই অ্যাম নট এ কিড রাগিনী! সিইও প্রোজেক্ট চায়, নট দিজ বুলশিট রিপোর্টস! ও তুমি যেভাবে পারো ক্লোস করে নিও। হোয়াট এ নাইস ইয়ার পিস!” বলে হালকা করে ওর দুলটা নেড়ে দিয়ে চলে গেছিল প্রদ্যুম্ন!
রাগিনী বুঝেছিল প্রদ্যুম্ন ঠিকই বলেছে। কোম্পানী শুধু বিজনেস বোঝে, বাকীটা সবই আই-ওয়াশ! কী হবে অডিটে পড়ে থেকে? একটাই সুবিধা, ঠিক সময় বাড়ি ফেরা যায়, বিদেশে যেতে হয় না। বাড়িতে দুটো ছোট বাচ্চা। রাজীবের ফেরার সময়ের ঠিক নেই। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ার? এই অস্থিরতার মধ্যেই, কিউবিকলে ফোনটা বেজে উঠেছিল। প্রদ্যুম্ন! “ইউ হ্যাভ এ লট অফ প্রসপেক্ট রাগিনী! আই নিড ইউ ইন প্রি-সেলস! কাল লাঞ্চে তোমাকে বলব সব! ইউ হ্যাভ টু কাম!” কী একটা ছিল প্রদ্যুম্নর গলায়, রাগিনীর না বলবার শক্তি রইল না।
প্রদ্যুম্নর মতিগতি দেখে, রাগিনী ওর ক্লোস ফ্রেন্ড মিতালীকে নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল। মিতালীও দিল্লীর মেয়ে। বয়সে রাগিণীর কাছাকাছি। প্রোমোশন পেয়ে ও তখন রাগিনীর ওপরের লেভেলে। তবু ওদের মধ্যে বন্ধুত্বের কোন পরিবর্তন হয়নি, কারণ রাগিণীর ইগো ছিল না।
মিতালী বলেছিল “ম্যায় ক্যা কাবাব মে হাড্ডি বননে যাউঁ? তুঝে আগর আদমী ঠিক নহি লাগতা তো তু মত যা!” “নহি রে, কুছ তো হ্যায় উস আদমী মে! না নহি বোলনে সে ভী রুকতা নহি!” “তো ম্যানেজমেন্ট মে কমপ্লেন কর দে কি ফ্লার্ট কর রহা হ্যায় তেরে সাথ!” “নহি নহি! তব ইধার জব করনা মুশকিল হো জায়েগা! ম্যানেজমেন্ট মে বহোত হোল্ড হ্যায় উসকা!” হেসে দুষ্টু মিতালীটা বলেছিল “তো ফির তু ভি উসে নাচা!” সেদিন লাঞ্চে কিন্তু প্রদ্যুম্ন খুব সিরিয়াস ছিল। বিশদে বুঝিয়েছিল ওকে প্রি-সেলসের কাজকর্ম, প্রসপেক্ট! খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল রাগিনীর। মিতালিও সব শুনে বলেছিল “ইয়ে চান্স আগর মেরে পাস আতি তো ম্যায় লে লেতি! হম তো কোডিং, টেস্টিং, ডেলিভারি কর করকে থক গয়ে! তেরে সামনে চান্স হ্যায় তো লে লে!”
প্রদ্যুম্নই ব্যবস্থা করেছিল ওকে অডিট গ্রুপ থেকে তুলে প্রি-সেলসে নেওয়ার! এই গ্রুপে আসার তিন মাসের মধ্যে একটা মিড টার্ম প্রোমোশন হয়েছিল রাগিনীর। রাজীবও খুব খুশী হয়েছিল। বলেছিল “বচ্চা সমহালকে তুঝে প্রমোশন ভি মিল গিয়া! কামাল হি কর ডালা!”
ক্রমেই ওকে নিজের আওতায় নিয়ে এল প্রদ্যুম্ন! প্রায়ই ওর কিউবিকলে এসে বসে। রাগিনীর জন্মদিনে দারুণ কেকের ব্যবস্থা করল! সঙ্গে রাগিনীর প্রিয় ঘড়ি! একসাথে ডিনার! এমন ভাবে ওর জন্মদিন রাজীবও পালন করেনি। রাজীবকে সেদিন বলেছিল যে প্রোজেক্ট পার্টি আছে অফিসে।
প্রদ্যুম্নর কখনো বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে না। ভারী অদ্ভুত লাগে রাগিনীর। একদিন জিজ্ঞাসা করেই ফেলেছিল। তাতে জেনেছিল প্রদ্যুম্নর ওয়াইফ নাকি প্যারালাইজড। দুবেলা অ্যাটেনডেন্ট আসে।
নিজের কিউবিকলে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিল রাগিণী। চটকা ভাঙল প্রদ্যুম্নর গলার আওয়াজে “আর ইউ থ্রু উইথ দ্য প্রোপোসাল? রমেশ ইস ইন লাইন! লেটস প্রেসেন্ট টু হিম ফার্স্ট!” রমেশ আমেরিকার সেই এনগেজমেন্ট ম্যানেজার। টেকনিক্যাল প্রোপসাল থ্রু হয়ে গেল। কিন্তু এস্টিমেট শুনে রমেশ বলল যে এই এস্টিমেট দিলে ক্লায়েন্ট প্রোজেক্ট দেবে না। “ইট ইস টু হাই! প্লিস ব্রিং ইট ডাউন!”
এস্টিমেশন টিমের মতে, যা কাজ, তাতে এই পরিমাণ রিসোর্স আর সময় লাগবেই! রমেশ বলল “হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? উই হ্যাভ টোল্ড ক্লায়েন্ট দ্যাট উই অলরেডি হ্যাভ এ প্রোডাক্ট! উই উইল কাস্টমাইজ ইট! বাট অ্যাকচুয়ালি উই নিড টু বিল্ড ইট ফ্রম স্ক্র্যাচ! দ্যাট কস্ট উই হ্যাভ টু অ্যাবসর্ব!” অনেকক্ষণ কথা বলেও রমেশকে কনভিন্স করা গেল না। যা টাইম দেওয়া হয়েছিল তার অর্ধেক সময়ে শেষ করতে হবে কাজ! টেকনিকাল টিম ভুগবে! কিন্তু প্রোজেক্ট আনতেই হবে – প্রদ্যুম্নর এক কথা! ও বলে বসল “উই উইল ওয়ার্ক ওয়ান আওয়ার নাউ টু গিভ এ রিভাইসড এস্টিমেট অ্যান্ড প্রেসেন্টেশন বাই মিড নাইট!” রাগিনীর বুক ধড়াশ করে উঠল! মিড নাইট অবধি অফিসে থাকলে রাজীব কী বলবে কে জানে? প্রদ্যুম্ন বলে উঠল “রাগিনী, অনলি ইউ ক্যান সেভ আস! লিড ফ্রম দ্য ফ্রন্ট অ্যান্ড কমপ্লিট দিস! আই হ্যাভ অর্ডারড পিৎজা ফর দ্য টিম! অ্যান্ড ইয়োর স্পেশ্যাল ফেভারিট ওয়ান উইথ এ লট অফ চিজ!” প্রবল রাগের মধ্যেও হেসে ফেলল রাগিনী!
সেদিন প্রদ্যুম্নর গাড়িতেই ফিরল রাগিনী বাধ্য হয়ে। প্রেসেন্টেশন ভাল হয়েছে। মনে হচ্ছে ক্লায়েন্ট কনভিন্সড হবে। বাড়ির স্টপেজ এলে, তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ছিল রাগিনী। মূহূর্তে গাড়ি থেকে নেমে ওকে তুলল প্রদ্যুম্ন! বলল “স্টেডি! ডোন্ট রাশ!” হঠাত রাগ হয়ে গেল রাগিনীর! রাজীব বারান্দায় থাকতে পারে! দেখলে কী ভাববে কে জানে! বলে ফেলল “প্রদ্যুম্ন! মাই হাসব্যান্ড ইস ওয়েটিং ফর মি! প্লিজ লেট মি গো ইন!” ইচ্ছে করে হাসব্যান্ডের নাম করল রাগিনী! ও বোধহয় ভুলে যায় যে রাগিনী ম্যারেড! অদ্ভুত ফ্লার্টবাজ! কীভাবে যেন জালে জড়িয়ে নিচ্ছে! রাজীব দরজা খুলে দিয়ে চুপচাপ চলে গেল। রাগিনীর মনে হল ও বড্ড নির্লিপ্ত! কী হত একটু রাগ করলে?
চিন্তিত মুখে প্রোগ্রামটা নিয়ে বসেছিল নিবেদিতা। একটা ছোট চেঞ্জ করতে হবে। অন্য সময় এগুলো খুব চটপট নামিয়ে ফেলে, কিন্তু সেদিন কিছুতেই কাজ করছিল না। বারবার বাগ রিপোর্ট আসছে। সেদিন ফাইনাল সাবমিশন! প্রোজেক্ট লিড স্বস্তিকদা ঘোরাঘুরি করছেন। সবার কাজ দেখছেন। স্বস্তিকদার এই বয়সেই বেশ ভাল পোজিশনে উঠে গেছেন। উনি কাজ অন্তপ্রাণ! বিয়ে করেননি। বাকীদের যে ঘর সংসার আছে সেটাও মাঝে মাঝে ভুলে যান। “স্যাপ” প্রজেক্টটায় পেয়ে বেশ নিশ্চিন্ত হয়েছিল নিবেদিতা। নিজের পছন্দের কাজ কলকাতায় বসে পাওয়া গেছে। খুব হাই ভিসিবিলিটি প্রজেক্ট। যারা কাজ করছে, তাদের হাইক, প্রমোশন সবই হবে কাজটা লেটেস্ট টেকনোলজির ওপর। ক্যারিয়ারের পক্ষে সবদিক দিয়েই ভাল!
প্রজেক্টে ঢুকে চাপটা বুঝতে পেরেছে! বেরোনোর সময়ের কোন স্থিরতা নেই। আটটা নটা প্রায় রোজই হচ্ছে। একদিন তো দশটা বেজে গেছিল! সেদিন অনিমেষ এসে নিয়ে গিয়েছিল ওকে। স্বশুর শাশুড়ি আজকাল খুব প্রয়োজন না হলে কথাই বলেন না। বাড়িতে একটা দমবন্ধ পরিস্থিতি। রাতে রোজ অনিমেষের সঙ্গে লড়াই চলছে। নিবেদিতা সমানে বলছে একটা আলাদা ফ্ল্যাট নেওয়ার কথা। এভাবে এক জায়গায় থেকে অশান্তি করতে ভাল লাগে না। কিন্তু অনিমেষ কিছুতেই বাবা মাকে ছেড়ে যাবে না! প্রতি রাতে অনিমেষের শরীরী দাবী মিটিয়ে শুতে মাঝরাত হয়ে যায় আর সকালে উঠেই অফিস! অনেক সময় অফিসে এসে ঢুলে পড়ে নিবেদিতা। এবার পিরিয়ড হচ্ছে না। প্রায় দশ দিন ডেট চলে গেছে! এমনিতে অবশ্য নিবেদিতার পিরিয়ড অনিয়মিত, কিন্তু তাও টেনশন হচ্ছে! অনিমেষকে কিছু বলেনি! নানা চিন্তায় মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কেমন অস্বস্তি টের পায় নিবেদিতা! গা গুলিয়ে ওঠে! এই প্রজেক্টে প্রায় সবাই ছেলে। স্বস্তিকদাকেও এ সব অসুবিধে বলা খুব মুশকিল! ব্রেক নিলে হয়তো ভাল লাগবে। মুখে একটা চিকলেট পুরে কানে ইয়ারফোনটা লাগিয়ে নিল নিবেদিতা। ভাল গান শোনা দরকার! ও নিজেও ভাল গান করে। কিন্তু চাপে পড়ে সবকিছু বন্ধ হতে বসেছে।
মন দিয়ে গান শুনছিল নিবেদিতা। গুলাম আলির গজল “বিন বারিশ বরসাত না হোগি!” আহা! মনটা বেশ হালকা লাগছে! শারীরিক অস্বস্তিগুলোও ভুলে যাচ্ছিল। লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে! প্রজেক্টের হলটা ফাঁকা। সবাই ক্যান্টিনে। ওর খেতে একটুও ইচ্ছে করছিল না। হঠাত ফটাশ করে পিছন থেকে কে ইয়ার-ফোনটা খুলে নিল! বেশ বিরক্ত হয়ে ফিরে তাকাল! কলেজমেট এবং কোলিগ অতীশ! আগের কোম্পানীতে একসাথে কাজও করেছে। ও অরাকল ডাটাবেস অ্যাডমিন। প্রায়ই ক্যান্টিনে আড্ডা হয়। খুব আড্ডাবাজ হাসিখুশি ছেলে অতীশ। নিবেদিতা বলল “অ্যাই খুললি কেন? অদ্ভুত তো!” অতীশ হেসে বলল “লাঞ্চ টাইমে রামগড়ুরের মত বসে কাজ না করে ক্যান্টিনে চল শীগগির! একখানা স্যাম্পল দেখাব!” নিবেদিতা মাথা নেড়ে বলল “আজ লাঞ্চ করব না রে, শরীর ভাল নেই!” অতীশ বলল “ঠিক আছে তোকে খেতে হবে না। ফল খাস। কিন্তু চল প্লিস! নইলে লাইফটাইম মজা মিস করবি!” নিবেদিতা ভাবল মনটা একটু ফ্রেশ হলে ফিরে এসে প্রোগ্রামটাকে জব্দ করতে পারবে। বলল “চল! তোকে নিয়ে আর পারা যায় না!”
ক্যান্টিনে এসে দেখে ছেলেমেয়েদের জটলা। সবাই একটা টেবলের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে! অতীশ বলল “বোস! তোকে বলছি!” নিবেদিতা অবাক হয়ে তাকাল ঐদিকে। বিশাল চেহারার কুচকুচে কালো, কোঁকড়া চুল এক ভদ্রলোক বসে আছেন! প্রথম দৃষ্টিতে দেখলে আফ্রিকান আমেরিকান মনে হবে! টেবলের মাঝখানে অন্তত গোটা কুড়ি আম জড়ো করা আছে। ভদ্রলোক থাবার মত হাত বাড়িয়ে একটি করে আম নিচ্ছেন আর ফুটো করে মুখে লাগিয়ে খাচ্ছেন! কনুই বেয়ে আমের রস পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমটা আমসি হয়ে টেবলে খোসাশুদ্ধ জমা হচ্ছে! ভদ্রলোক রুমালে হাত মুছে পরের আমের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। আজকে বোধহয় ফ্রুট ডিশে আম দেওয়া হয়েছিল। অন্য ছেলেমেয়েরা তাদের আমগুলোও ভদ্রলোকের টেবলে রেখে আসছে! ফলে সেখানে আমের সংখ্যা কমছে না! এই ভদ্রলোককে আগে চোখে পড়েছে বলে মনে হল না নিবেদিতার! বীভৎস খেতে পারেন!
ওর বিস্মিত মুখের দিকে তাকিয়ে অতীশ বলল “ইনি আমাদের নতুন ডি-বি-এ হেড! এ সপ্তাহে জয়েন করেছেন! আমেরিকায় ছিলেন। উনি কী করেছেন শোন! বাক্স বাক্স অর্যাকলের বই আর ম্যানুয়াল নিয়ে এসেছেন আমেরিকা থেকে! একটা বই দশ বিশ কপি! সবই নাকি ওনার পারসোনাল! সব উনি আমাদের অফিস লাইব্রেরীতে দান করেছেন! তুই কোনদিন একই বইয়ের দশ কপি কিনবি নিজের জন্য? বইগুলো পুরো সেলোফেন মোড়া! কেউ কোনদিন পড়েনি! আমার ধারণা উনি ব্যাপক পরিমাণ বই ঝেড়েছেন কোথাও থেকে এবং সেগুলো নিয়ে দেশে চলে এসেছেন! আমাদের উপকারই হবে! কিন্তু কী কান্ড ভাব!”
“লোকটা কেমন? তোদের বস?”
“জালি! কী দেখে এত উঁচু পজিশনে কোম্পানী ওকে নিল? ওপরের লেভেলে কী খেলা চলে বুঝি না ভাই! সকাল থেকে এসে শুধু এই টেবলে গল্প, ঐ টেবলে গল্প! চান্স পেলেই সিইওর রুমে ঢুকে যায়! ক্যান্টিনে সাড়ে বারোটা থেকে ওর লাঞ্চটাইম শুরু হয়ে চারটে পর্যন্ত গড়ায়। বিকেলের দিকে দিব্বি নিজের ডেস্কে মাথা রেখে নাক ডাকায়! আমাদের ডেকে একটা মিটিং করে বলেছে, তোমরা সবাই ওস্তাদ! তোমাদের কাজ আমার দেখার কিছু দরকার নেই।“
“এমন ব্যক্তির নামটা জেনে রাখি!”
“সৌগত বোস!”
“এ তো খাঁটি বাঙালি রে! চেহারা দেখে বোঝার জো নেই!”
“দ্যাখ না, কেমন একখানা গ্যালিস দেওয়া প্যান্ট পরেছে! হাতগুলো দেখেছিস? আস্ত থাবা!” বলতে বলতেই সৌগতর লাঞ্চ শেষ হল! টেবল থেকে উঠে ওদের টেবলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় “হেলো অতীশ!” বলে অতীশের পিঠে একখানে পেল্লায় থাপ্পড় মেরে হাতির মত দুলকি চালে এগোলেন!
অতীশ ফিসফিস করে বলল “বিশাল স্যালারি নিয়ে জয়েন করেছেন! শুনছি নাকি, টপ ম্যানেজমেন্টকে ভক্কি খাইয়েছেন যে বিদেশে প্রচুর কনট্যাক্ট! অনেক নতুন প্রোজেক্ট এনে দেবেন!
হাসতে হাসতে মনটা বেশ হালকা হয়ে গেল নিবেদিতার। ক’টুকরো শশা খেয়ে নিজের কিউবিকলের দিকে হাঁটা দিল। একটু এগোতেই গা টা আবার গুলিয়ে উঠল! বাথরুমে ঢুকে বেশ খানিকটা বমি করে তবে স্বস্তি! না খেলেই ভাল হত! আজ অনিমেষকে বলতেই হবে!
(চলবে)