শোকপ্রস্তাব
ফুল খেলবার মতো করে মানুষ শোক প্রস্তাব শিখে নিচ্ছে
অনর্গল হাসির একটু ফাঁক গলে রেখে দিচ্ছে দুঃখ-কবিতা
সময় এমন চতুর, এমন ধুরন্ধর হয়ে উঠেছে আজকাল,
যে কাঁদছে শ্মশানভস্ম মেখে, তার চোখের জল খানিক -
দূর থেকে মনে হছে শিশিরের আলো ফোঁটা, শীতকাল,
সংরাগ হারিয়ে কেবলই এক পালাবদল, পৃথিবীতে আসে,
যে যায় কেবলই যায়, ব্রিজের ওপার একান্তই দূরদেশ ;
নীরবতা, বিচ্ছিন্নতার ডাক, পৃথিবী জন্মে তাকে কে বা চায়
মানুষ তাই আকাশের প্রচ্ছদে লিখছে হল্লা, বিরহ উল্লাস ;
কুয়াশার ব্যবচ্ছেদ অস্বীকার করে বাতাসে উড়িয়ে নিচ্ছে
বিস্ময় বিনির্মাণ, শূন্যতা সম্মুখ জ্ঞানে করছে যুগ সম্মিলন
শীতসকাল
হেঁশেলের ধোঁয়া ওঠা গন্ধের মতো অন্ধকার
ছড়িয়ে বসেছে শীতের সকালজুড়ে ;
ভাতের থালার মতো চাঁদ অন্তিম পৃথিবীতে
বৃক্ষের সৌহার্দ্যে নামছে অদ্ভুত মৌনতা।
কৃত্রিম আলোয় ভূত খেলবার মতো মানুষেরা
দীর্ঘ ছায়া ফেলে কেবলই হেঁটে যায় চুপচাপ।
পড়শি জলে ভাঙনের শব্দ হলে,
কাকে যেন মনে পড়ে অকস্মাৎ
প্রতীক্ষা বিষয়ক হারিয়ে ফেলা কবিতাটি
আমার শুধু মনে পড়ে হাওরের শেষ হিজল গাছটির কথা
গাছ মানে তো কেবল শাখা প্রশাখা ছড়ানো ছায়াসবুজ নয়
একটি শুরু, একটি শেষ, দুটো জনপদের সংযোগস্থল
আরও যেমন দাঁড়িয়েছিল ক'টি ইট-পাথরের মিছিল ভগ্নপ্রায়
আরেকটু গভীরে মাথা উঁচু করে ক'টি বাবুই বাসার তালগাছ
আমার তবুও মনে পড়ে শেষ হিজল গাছটির কথা শুধু ;
এমনতর একা, বিষণ্ণ সে গাছ, দাঁড়িয়ে থাকে নিজের মতো
তার সমস্ত কথা কি নিজের সাথে, দূর বার্তা ছড়ানো হাওয়ার পর
অসীমের ছায়া নিয়ে সহস্র বিকেল রাত্তিরে যাবার আগে তাকে -
জিগ্যেস করেছিল কি কোন দিন, কতটুকু সে জানে বিষয় যদি ঘর
কিংবা ভূতের মতো অন্ধকার নামার আগে রক্তরসের ক্লান্ত রোদ
জানিয়েছিল কি কোনদিন দিনান্তের বিদায়, ভালো থেকো বন্ধুবর
আমার এইসব মনে আসে, একটি হিজল গাছ একা দাঁড়িয়ে শেষে
প্রতীক্ষা শব্দটির কি খুঁজতে চেয়েছিলো প্রকৃত উত্তর!
দেবী
দেবীদের কথা আমরা কতটুকুই বা জানি
সমুদ্রের ফেনা থেকে উথলে উঠে
রাত্রিপ্রহরে ঢুকে পড়ে নিরীশ্বর পৃথিবীতে
ধূপ ও ধোঁয়ার গন্ধের ভেতর অপলক
মহাজীবনের গল্প শুনে যায় মানুষের ;
যে গোপন দুঃখের কথা মানুষ বলে না
মানুষের কাছে, সামাজিক ভাবনায় -
সে সব কথা টুকে নিয়ে উড়ন্ত ডানায়
নিরুত্তর আকাশে অপেক্ষায় রেখে যায়