/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/03/bk1.jpg)
হরফ প্রকাশনীর সাম্য এবং ঐক্য দেখবার মত
বইমেলা মানেই প্রতিবছর নিত্যনতুন কিছু। বইমেলা মানেই আবেগ, সর্বধর্ম সমন্বয়। বইয়ের কোনও ধর্ম নেই, এর কোনও জাতি নেই - বই শুধুই শেখায়। বই পড়ে যেন মানুষ সত্যের পথে এগোতে পারে, সে ধর্ম হোক কিংবা সাহিত্য। আর এই বার্তা নিয়েই প্রায় ৫০ বছর সময় ধরে ঐক্য এবং সাম্যের বার্তা বহন করেছেন আজিজ পরিবারের দুই প্রজন্ম।
বইমেলার ৪০৩ নম্বর স্টলে থরে থরে সাজানো গীতা থেকে কোরান শরিফ এবং বেদ। রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের নানা বই, আর যিনি গর্বের সঙ্গে এই সব বই মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি মনিরুল আজিজ! ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে বেদ-উপনিষদ পাঠকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। বহু বছর ধরে এই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন মনিরুল সাহেব। জানালেন, বছর ৫০ আগেই তাঁর বাবা আবদুল আজিজ এই কাজ প্রথম শুরু করেন। কিন্তু কেন? মনিরুল বললেন, "বাবা চাইতেন মানুষ যেন সবসময় সঠিকটা জানতে পারেন। ধর্ম নিয়ে অনেক কিছু রটানো হয়, তবে সঠিক কেউ বলে না। এমন এক পরিস্থিতিতে বাবা এবং সংস্কৃত কলেজের আরও ১৪ জন অধ্যাপক মিলে নিজ দায়িত্বে বেদ এবং উপনিষদ প্রকাশ করেন। নানান ধর্মগ্রন্থ যাতে মানুষ কম দামে পায়, এই একটি মাত্র প্রচেষ্টা। বাবা মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর, আমি সেটাকে ধরে রেখেছি, এর বেশি কোনও অবদান আমার নেই।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/03/bk5.jpg)
চারপাশের মানুষ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানান এই বিষয়ে? উত্তরে মনিরুল আজিজ বললেন, "আমি সেইভাবে করিনি, তবে হ্যাঁ আমার বাবা করেছিলেন। মুসলমান ভাইরা বলেছিলেন, ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়েও তুমি বিধর্মী কিছু লিখছ, অথবা প্রকাশ করছ। আর হিন্দু ভাইরা বলেছিলেন, এমন একজন আমাদের ধর্ম নিয়ে কাজ করবে? এর থেকে বই কেনা যাবে না। তবে বাবা কোনওদিন থামেননি, তিনি নিজের সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আল্লাহকে সামনে রেখেই এগিয়ে গেছেন।"
আরও পড়ুন মন পড়ে আছে দেশে, যুদ্ধ নয় বইমেলায় বসে শান্তির কথাই বলছেন রুশ নাগরিকরা
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/03/bk3.jpg)
সাধারণ পাঠকের কাছ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পান? তিনি এক্ষেত্রে যে উত্তর দিলেন সেটি সত্যিই ভাবনার বিষয়। বললেন, "এই সম্পূর্ণ বিষয়টি বলতে গেলে দুই রকম বর্ণনা দিতে হয়, যেটি আনন্দের সঙ্গে সঙ্গেই দুঃখজনক বটে। আমার চেহারা, দাড়ি, টুপি দেখার পরে অনেকেই স্টলের ভেতরে আসতে চান না…অনেক সময় হয়তো নাতি-নাতনি ঢুকতে চাইছে কিন্তু ঠাকুমা-দাদুরা আমাকে দেখেই তাদের সরিয়ে নিয়ে গেল, এগুলো খুব দুঃখজনক! বইয়ের পাতার কোনও ধর্ম নেই, শিক্ষার কোনও বিকল্প নেই….আবার কিছু-কিছু মানুষ চরম আগ্রহের সঙ্গেই স্টলে আসছেন, যে আরেহ! একজন মুসলিম হয়েও বেদ-উপনিষদ বিক্রি করছেন, বেশ দারুণ বিষয়। কিছু সংখ্যক মানুষ আজও ধর্ম নিয়ে এতটাই উত্তেজিত যে, এটিকে সাধারণ ভাবে প্রকাশ করতে দেয় না। মাঝে মাঝে খুব অপমানিত বোধ করি, কিন্তু আর কী করার….অনেকেই মন থেকে ধর্মের বিভেদে ঘৃণা কিংবা বিদ্বেষ ত্যাগ করতে পারেনি…."
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/03/bk4.jpg)
ব্যক্তিগত জীবনে এরকম কিছুর শিকার হয়েছেন? তিনি জবাব দিলেন, "একেবারেই না! বরং আমি যে অধ্যাপকের কাছে পড়তাম তিনি খাঁটি হিন্দু ছিলেন তবে উনি এবং তাঁ মা আমাকে খুব ভালবাসতেন, এমনও বলতেন আমার মতো ছেলে নাকি তিনি দেখেননি। মনে করি সবকিছুই মানুষের জীবনের ওপর নির্ধারিত, যে যেভাবে বড় হয়েছে তার ওপর সেই প্রভাব পড়ে। তবে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই জাতি, ধর্ম বর্ণ নিয়ে এতটা কুৎসা, খারাপ ধারণা না রাখাই ভাল।"