Advertisment

১০ দিন পরেও দুয়োরানি কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলা

এ বারের মেলায় মোট যোগদানকারীর সংখ্যা ৬৬। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ৯টি স্টলকে পার্টিশন করে ১৮টি প্রকাশনীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

১১নভেম্বর শেষ হচ্ছে অষ্টম বাংলাদেশ বইমেলা

উল্টো ফুটে সুয়োরানি যখন দারুণ সেজে উঠছে অতিথি ও অভ্যাগতদের জন্য, তখন এ পাশে দুয়োরানি নেহাৎই  নিরাভরণ। তার সজ্জা তো নেইই, এমনকি সে যে আদৌ আছে, তাও ভাল করে বোধ হয় না। বাংলাদেশ বইমেলা ১০ দিন কাটিয়ে ফেলেছে।

Advertisment

কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলার মেয়াদ ১১ নভেম্বর অবধি। ২ তারিখ শুরু হওয়া মেলার দশ দিন কেটে গিয়েছে। আগের সাতবারের তুলনায় এবারের মেলায় দর্শক-পাঠক সমাগম যে কম, সে নিয়ে কোনও মতানৈক্য নেই সংগঠক এবং প্রকাশকদের মধ্যে।

publive-image রকমারি বই আছে এ মেলায়

অথচ ৭ বছর কেটে গেছে কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলার। অষ্টম বছরটা এরকম গেল কেন? এ মেলার আয়োজনের দায়িত্বে থাকে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে বাংলাদেশ হাইকমিশন। মেলার সংগঠনে সহায়তা করে থাকে সে দেশের সরকারের বিভিন্ন বিভাগও।

publive-image রয়েছে রকমারি প্রকাশনাও

মেলা উদ্যোক্তাদের তরফে মহম্মদ গফুর হোসেনের দাবি, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই কেবল এ মেলার আয়োজন করা হয় না। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রচার ও প্রসার। তিনি স্পষ্টই জানালেন, ‘‘বাংলাদেশের একুশে বইমেলায় যে ভাবে বই বিক্রি হয়, বা কলকাতা বইমেলায় যেভাবে বই বিক্রি হয়, বাংলাদেশ বইমেলায় কিন্তু তা হয় না। তারপরেও আমরা বাংলাদেশের প্রকাশকরা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকি এ বইমেলার দিকে, যাতে বাংলাদেশকে কলকাতার মানুষদের কাছে আমরা তুলে ধরতে পারি।’’ তাহলে কি যোগদানকারী প্রকাশকরা ক্ষতি স্বীকার করেই এ বইমেলায় যোগ দিতে রাজি হয়ে যান? ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলা নিয়ে প্রকাশকদের নিজস্ব স্ট্র্যাটেজি রয়েছে বলে জানালেন মহম্মদ গফুর হোসেন। ‘‘কলকাতার পাঠকরা কী ধরনের বই পছন্দ করেন, কেনেন, সে নিয়ে গোটা বছর ধরেই আমরা কাজ করি, এবং সে বইগুলিই কলকাতায় নিয়ে আসি আমরা। আমরা চাই দু দেশের লেখকদের মধ্যে, দু দেশের পাঠকদের মধ্যে, দু দেশের প্রকাশকদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হোক। এই সেতুবন্ধনের কাজটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এ বইমেলার আয়োজন করে থাকে।’’

publive-image কলকাতার পাঠকদের পছন্দ অনুসারেই বই নিয়ে আসেন প্রকাশকরা

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গফুর হোসেনের গলা যতটা আশাব্যঞ্জক শোনায়, তার অনেকটাই অনুপস্থিত মেলায় যোগদানকারী বেশ কয়েকজন প্রকাশকের মধ্যে। পাঠক সমাবেশের নাম প্রায় সকল সাহিত্যপ্রেমীদের কাছেই পরিচিত, অন্তত যাঁরা বাংলাদেশের খোঁজখবর রাখেন। এ প্রকাশনার তরফে মেলার স্টলের দায়িত্বে রয়েছেন গৌতম মিত্র। তিনি কলকাতারই বাসিন্দা, তবে পাঠক সমাবেশের স্টলের দায়িত্ব এ বছরই প্রথম তাঁর ওপরে। তিনি বললেন, ‘‘প্রথম দুদিন মোটামুটি ভাল হয়েছিল, কিন্তু তারপর থেকেই কমতে শুরু করেছে। আশা করছি শেষ দুদিনে আরেকটু বাড়বে।’’

পুজোর ছুটির জন্য ভিড় কম হচ্ছে বলেই মনে করছেন ভাষাচিত্রের তনভির। শেষ দুটো দিন, বিশেষ করে রবিবারের ছুটির দিকে অনেকটাই তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। সাধারণভাবে বাংলাদেশের একুশে বইমেলার তুলনায় এখানের বইমেলায় কিছুটা প্রাণের অভাব দেখা যায় বলেও মনে করেন তনভির। ‘‘আমাদের বাংলাদেশের মেলাটা একমাস ধরে হয়, প্রচুর লোকের সমাগম হয় সেখানে। এখানে যেহেতু মেলার পরিসর ছোট, অনেকে হয়ত জানেনও না মেলা হচ্ছে, বা মেলাটা একটু অবস্থানগত দিক থেকেও পিছিয়ে থাকা হয়ত, এগুলোও কারণ হতে পারে মেলায় কম পাঠক-ক্রেতা এসে পৌঁছোনোর। এসব কারণেই মেলার প্রাণটা একটু কম।’’

publive-image তবে সব মিলিয়ে বইয়ের গায়ে খুব বেশি হাত পড়ছে না

এ বইমেলায় প্রথমবার এসেছে বাতিঘর। ‘‘বিক্রি সবসময়ে না হলেও যেসব লোকজন মেলায় আসছেন, তাঁরা সবাই স্টলে ঘুরে যাচ্ছেন, বই হাতে নিয়ে টাইটেলগুলি নেড়েচেড়ে দেখছেন, এই বা কম কিসে?’’ বললেন স্টলের দায়িত্বে থাকা বিক্রেতা। বাতিঘরের থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে বুদ্ধদেব বসুর বই।

আহমদ পাবলিশিং হাউসের বিক্রি মূলত ধর্মীয় পুস্তকের, বললেন ঢাকা থেকে আসা শাহ আলম। এ ছাড়া তাঁদের বিপণি থেকে ইতিহাস সংক্রান্ত বইয়ের কাটতিও কম নয়। তবে তাঁর মুখেও একই কথা। উৎসবের জন্য লোক কম।

এ বারের মেলায় মোট যোগদানকারীর সংখ্যা ৬৬। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ৯টি স্টলকে পার্টিশন করে ১৮টি প্রকাশনীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মেলার উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে এ কথা জানালেন গফুর। এমন অসময়ে মেলার আয়োজনের ব্যাপারে তাঁদের হাত নেই। মোহর কুঞ্জের মাঠ যে সময়ে খালি পাওয়া যায়, সেসময়েই মেলার আয়োজন করে থাকেন ওঁরা।

হাওড়ার ডোমজুড় থেকে এসেছিলেন মহাদেব কুণ্ডু ও শ্রাবন্তী হাজরার হাতে বেশ কয়েকটা বইয়ের ব্যাগ। তাঁদের ভারী মজা। বললেন, ‘‘কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে যা ভিড়ভাট্টা হয়, তাতে বই হাতে নিয়ে দেখা সম্ভব নয়। তার চেয়ে এখানে ফাঁকায় ফাঁকায় বই দেখা যায়, এই ভাল।’’

মোহর কুঞ্জে বইমেলা শেষ হচ্ছে ১১ নভেম্বর। তার উল্টোদিকে, নন্দন প্রাঙ্গন জমকালো সেজে উঠছে। ১১ নভেম্বর থেকে সেখানে পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। সুয়োরানির কাছে যাঁরা আসবেন, বা সে উপলক্ষে যাঁরা এক দু দিন আগে থেকে ভিড় জমাবেন, তাঁরা কি শেষ দিকের কলকাতার বাংলাদেশ বইমেলা জমিয়ে দেবেন?

Book Fair
Advertisment