পার্ক সার্কাস, চ্যাপলিন স্কোয়ার, বহরমপুর, এরকম নানা জায়গায় নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি বিরোধী আন্দোলন শুরুর বেশ খানিকটা আগে থেকেই বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড় শুরু হয়েছিল কলকাতার বৌদ্ধিক মহলে। ফেসবুকে হাতে গোনা কয়েকটা গ্রুপ তৈরি হয়েছিল আসাম এনআরসি প্রক্রিয়া শুরুর সময়ে। পরে এরকম গোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরকম গোষ্ঠীর তরফে মিছিল-সভাও ডাকা হয়। তবে এসব নিয়ে লেখালিখির কাজ বেশ কিছুটা আগে থেকেই চলছে। কলকাতা বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিন ও ছোট প্রকাশনা সংস্থার অনেকেই এই উদ্যোগে শামিল ছিল, হয়েছে। তার স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে কলকাতা বইমেলায়।
কালধ্বনি পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যা সহ তিন থেকে চারটি সংখ্যায় নাগরিকত্ব, অভিবাসন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন লেখার সমাহার। সাম্প্রতিকতম সংখ্যায় সম্পাদক প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা তো আছেই, ঠিক এক বছর আগের সংখ্যায় শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ও সুজাত ভদ্রের এ সম্পর্কিত লেখা রয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যায় পাওয়া যাবে হীরেণ বরগোহাঁঞিয়ের লেখা।
কিন্তু ছড়ানো-ছেটানো লেখাই নয় কেবল, বেশ কয়েকটি ছোট পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়েছে, বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও ছোট প্রকাশনা সংস্থার তরফে।
আয়নানগর পত্রিকার টেবিলে মিলবে গ্রাউন্ডজিরো প্রকাশনার "নাগরিকত্ব, আধুনিক রাষ্ট্র ও আসাম"। এপুস্তিকার লেখকদ্বয় সজল নাগ ও শান্তনু সরকার আসামের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এ বইতে ইউরোপিয় নেশন স্টেটের সঙ্গে ভারত রাষ্ট্রের তফাৎ যেমন আলোচিত হয়েছে, তেমনই আসামের ভিন্নতার কথাও উঠে এসেছে।
পিপলস স্টাডি সার্কেল তিনটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে এ সম্পর্কে। পাওয়া যাচ্ছে প্রতিরোধের সিনেমা টেবিলে। একটির নাম- "নিজের দেশে রিফিউজি হব? প্রশ্নোত্তরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব বিল (সিএবি)"। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এ পুস্তিকাটি প্রকাশ পায়, যখন নয়া নাগরিকত্ব আইন হয়নি, বিল পর্যায়ে রয়েছে। এদের আরেকটি বই আসামে নাগরিকপঞ্জীর সাতকাহন। লেখক দেবর্ষি দাস গুয়াহাটি আইআইটি-র অধ্যাপক। পু্স্তিকার নামেই মালুম এর বিষয়আশয়। তিন নং পুস্তিকাটিরও নামেই পরিচয় বোঝা যায় অনেকটা। "এই বাংলার উদ্বাস্তু"- লেখক হিমাদ্রী চ্যাটার্জী ও অন্বেষা সেনগুপ্ত। এ বইটির ১৯ সালের মার্চ মাসে প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
গুরুচণ্ডালী থেকে প্রকাশিত হয়েছে নাগরিকপঞ্জী- এনআরসি, এক ভয়াবহতার কাহিনি এবং নাগরিক পঞ্জী ও ডিটেনশন ক্যাম্প- আসামে নাগরিক তৈরির বৃত্তান্ত। প্রথম বইটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ও দ্বিতীয় বইটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশের সন তারিখ থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই মহলটি, নিজস্ব ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নিয়ে রাষ্ট্রীয় অবস্থানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রচার ও সচেতনতা প্রয়াস চালাচ্ছেন। যে কারণে বইগুলির দামও স্বল্প, এবং নামের মধ্যেও সরাসরি বিষয়ের বর্ণনা করা হয়েছে, অ্যাবস্ট্রাকশনের তোয়াক্কা না করে।
এ ছাড়াও বেশ কিছু কাজ রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে ও অন্যান্য মঞ্চ থেকেও। বইমেলায় অবশ্য সম্ভবত সবচেয়ে চমকিত করেছে আরেকটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা সৃষ্টিসুখ। এদের স্টলের বাইরের দেওয়ালে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা রয়েছে সংবিধানের প্রস্তাবনা। আর মাথায় একদিকে লেখা রয়েছে লালনের গানের পংক্তি, অন্যদিকে ফৈয়াজ আহমেদ ফৈয়াজের হাম দেখেঙ্গের তিনটি লাইন।