/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/02/book-fair-general-feature.jpg)
সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কে শুরু হয়েছে ৪৩তম কলকাতা বইমেলা। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
গ্যাট-ডাঙ্কেল পুরনো হয়ে গেছে। সেসব নিয়ে লিফলেট-প্যাম্ফলেট, বই, এসব ছাপা হয়ে গেছে প্রচুর। মেধাস্বত্ব চুরি এখন গর্হিত অপরাধ বলেই মান্য। তবে এর বিপরীতে কপি লেফটও আছে। আর আছে বই চোর। ফি বছর বইমেলা এলে তারা নড়েচড়ে বসে। তাদের কথা কাগজে ছাপা হয়, কেননা তারা ধরা পড়ে। শাস্তি তেমন হয় না, এমনকী আজকালকার দিনে যা প্রায় জলভাত হয়ে গেছে, সেই নেমিং-শেমিংও হয় না।
বইমেলার মাঠে দুই বই চোরের সঙ্গে দেখা হল। এঁদের একজন দলে মিশে চুরি করেন, অন্যজন নিজের উপরেই ভরসা রাখতে সক্ষম। এঁরা একে অপরকে চেনেন না বটে, কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনে দুজনের বক্তব্য প্রায় হরিহর আত্মার মতোই। দুজনেই চুরি করেন বড় প্রকাশনা থেকে। ছোট প্রকাশনা সংস্থা, অলাভজনক ছোট পত্রিকার বই কেনার সামর্থ্য যদি তাৎক্ষণিকভাবে না থাকে, তাহলে দুজনেই টাকা জমানোর পক্ষপাতী।
টাকা জমিয়ে পরে কেনার প্রকল্প বড় প্রকাশন সংস্থার দামি বইয়ের ক্ষেত্রে লাগু নয় কেন, এ প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য সুমন এবং কোয়েল (পরিবর্তিত নাম) ভিন্ন উত্তর দিলেন। সুমনের বক্তব্য অনেকাংশে রাজনৈতিক। তাঁর মতে, চুরি এবং বইচুরির ফারাক তাঁর কাছে বন্দি ও রাজনৈতিক বন্দির মধ্যেকার পার্থক্যের মত। বিষয় যখন বই, তখন তিনি বড়দের বৃহৎ লভ্যাংশে ভাগ বসাতে পিছপা নন। আর কোয়েল যা বললেন তার সারমর্ম হল, দামি প্রকাশন সংস্থার বইয়ের ক্ষেত্রে বহুলাংশেই আকাঙ্ক্ষাটা সামলানো যায় না, তর সয় না দেরি করার।
মানবাধিকার কর্মী কল্লোল বই চুরিকে অন্য সাধারণ চুরির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে নারাজ। বিজয় মালিয়ার ঘটনা টেনে তিনি তফাৎ করতে চান, সেই আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিতে। কেন চুরি করা হচ্ছে, সে প্রসঙ্গই বেশি জরুরি হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। মেলার মাঠে তিনিও বই বিক্রি করছেন। তাঁর বই চুরি হলে তিনি খুশিই হবেন, হাসিমুখে জানালেন কল্লোল। এমনকী চোর ধরা পড়লে তাকে মাফ করে দেওয়ার পক্ষেই সওয়ালও করবেন, একথাও বললেন হলফ করে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট গার্গী দত্ত মনে করেন, কিছু ক্ষেত্রে বই চুরির ঘটনায় যুক্ত থাকেন ক্লেপটোম্যানিয়াকরা। বাকি ক্ষেত্রগুলিতে, তিনি মনে করেন, বই চুরির ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে পাপবোধের অনুভূতি থাকে না। এবং সমাজও এ বিষয়ে যথেষ্ট সহনশীল বলে বোধ করেন তিনি। গার্গীর সওয়াল, বই পড়তে নিয়ে ফেরত না দেওয়া, আর মেলার মাঠে বই চুরি, অনেক সময়েই একই তাড়না থেকে উদ্ভূত।
মেলা কর্তারা অবশ্য প্রতিবারই বই চুরির ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়ে থাকেন। কয়েকবার পুলিশের হাতে বই চোর তুলেও দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণভাবে বই চোরদের ক্ষেত্রে কিছুটা নরম চোখেই তাকায় কলকাতা বইমেলা। বইয়ের দাম আদায় ছাড়া তেমন বড় কিছু ঘটে ওঠে না। পাহারাদাররা একটু বেশি সতর্ক হন, সন্দেহভাজনদের কাছে বিল দেখতে চান। এইটুকুই। কলকাতা বইমেলার স্পিরিট। বঙ্গসমাজেরও কি?