Advertisment

কলকাতা বইমেলা: মমতা ৮৭ নট আউট

বৃহস্পতিবার বইমেলার এসবিআই অডিটোরিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী নিজের সাতটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন। তার আগে বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ৮০টি বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kolkata Book Fair Inauguration

৪৩ তম কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সাংসদ পেনশন, বিধায়ক ভাতা, মুখ্যমন্ত্রীর বেতন, এসব কিছুই নেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দিনাতিপাত হয় রয়্যালটির টাকায়। বইয়ের রয়্যালটি আর গানের সুরের দেওয়ার রয়্যালটি। এ তথ্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দিলেন, বইমেলা উদ্বোধনে এসে। বৃহস্পতিবার বইমেলার এসবিআই অডিটোরিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী নিজের সাতটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন। তার আগে বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ৮০টি বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। মমতা যখন বই উদ্বোধন করলেন, তখন নিজেই খোঁজ নিয়ে জানলেন এবং জানালেন, এর আগে পর্যন্ত ঠিক ৮০টি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর, এদিনের ৭টি ধরলে, মোট ৮৭টি। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, "আর ১৩টা বাকি সেঞ্চুরির জন্য, পরের বইমেলায় করে দেব।"

Advertisment

Kolkata Book Fair Inauguration কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চ

এদিন বইমেলার মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি সম্বলিত একটি ক্যালেন্ডারও প্রকাশিত হল। মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনগণের দিকে মুখ করে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে উল্টে ছবি দেখালেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। তখনই মাইক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, "শুভাদা বলছে, এই ক্যালেন্ডারের ছবি নিয়ে যদি কোটি কোটি টাকার কথা বলে, তাহলে? আমি বলেছি, যা বলে বলুক। বেশি বললে একটা বই আর ক্যালেন্ডার পাঠিয়ে দেব।"

আরও পড়ুন, বইমেলা অবিরত, পুরনো অভ্যাস

এদিন বক্তব্যের শুরুর দিকেই এ রাজ্যে উৎসব সম্পর্কে মানুষের আগ্রহের কথা বলতে গিয়ে দুর্গোৎসব, সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মী পুজো, ক্রিসমাস এবং ঈদের কথা উল্লেখ করেন তৃণমূল নেত্রী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মেলার উদ্বোধনী মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য। ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ। ছিলেন সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের মত পুলিশকর্তারা, মায় সাংসদ দোলা সেন অবধি।

Kolkata Book Fair Theme Country Guatemala উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরেও অপ্রস্তুত থিম কান্ট্রির স্টল

এদিন বইমেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাতে লেখা, এবং ছাপা আকারের বইয়ের পক্ষেও সওয়াল করেন। মমতা বলেন, "অনেকে আজকাল কম্পিউটারে লেখেন, যুগসন্ধিক্ষণ, কিছু করার নেই, আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, কিন্তু মনের কথা, লেখনী দিয়ে যতটা লেখা যায়, কম্পিউটারে ততটা প্রকাশ করা যায় না। লেখা এবং টাইপ করার মধ্যে একটা পার্থক্য কিন্তু রয়েই যায়।"

থিম কান্ট্রি গুয়াতেমালার প্রতিনিধিরা এদিনের মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘণ্টা বাজিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন গুয়াতেমালার সাহিত্যিক ইউডা মোরালেজ।

Kolkata Book Fair ফাঁকা ফাঁকা মেলার রাস্তা

তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেও গুয়াতেমালার স্টল কিন্তু অপ্রস্তুতই দেখা গেল। কাজ তখনও ঢের বাকি। মেলার নিত্যযাত্রীদের অধিকাংশই এই প্রতিবছরের অপ্রস্তুত ছবির সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় সন্ধে নাগাদও ভিড়ভাট্টা দেখা গেল না। সেলফি উত্তোলনরতদের ভিড় চোখে পড়ল না মেলার গলিগুলিতে, বা বিভিন্ন স্টলের সামনে। স্টলগুলিও নিজেদের সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত। যারা ইতিমধ্যে বই সাজিয়ে বসে পড়েছে, তারাও উদ্বোধনদিনে বিক্রি বিষয়ে অপ্রত্যাশী।

Kolkata Book Fair Little Magazine Pavilion চেনা কলস্বর এখনও ভরিয়ে তোলেনি কলকাতা বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন

আরও পড়ুন, মেলা আছে, আছে লিটল ম্যাগাজিনও, কিন্তু…

আগের বারের মতই বইমেলা উপলক্ষে করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ডে চাঁদোয়া খাটিয়ে টেবিল পেতে বইমেলা থেকে বিশেষ বাসের বিষয়ে খোঁজখবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে লাউডস্পিকার, বাস বিষয়ে ঘোষণার জন্য। প্রতিদিন সেখানে বেলা দুটো থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে ঘোষণা। সেখানে কর্তব্যরত পরেশচন্দ্র মণ্ডল জানালেন, মোট আটজন দায়িত্বে থাকবেন। আটজনই পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের জুনিয়র ট্রাফিক সুপারভাইজর। তিনিই জানালেন, এরকমই একটি ব্যবস্থা থাকবে ময়ূখ ভবনের সামনেও। করুণাময়ী থেকে ছাড়বে শিয়ালদা, হাওড়া, পর্ণশ্রী, শকুন্তলা পার্ক, ঠাকুরপুকুর, গড়িয়া, যাদবপুর, কামালগাজি, হাবড়া, উল্টোডাঙা, চিড়িয়া মোড়, বারাসাত, বালি হল্ট, বারুইপুর, ব্যারাকপুর, টালিগঞ্জ মেট্রো, সাঁতরাগাছি গামী বাস। ময়ুখ ভবন থেকে ছাড়বে রথতলা, বেলগাছিয়া, ডানকুনি ও উল্টোডাঙা গামী বাস।

Kolkata Book Fair Special Bus বইমেলা উপলক্ষে বাস সম্পর্কিত বিশেষ ঘোষণার ব্যবস্থা করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডে

করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ডে এত আয়োজন হলেও বইমেলার সময়ে বিক্রিবাটা খুব বেশি বাড়ে না বলে জানালেন স্ট্যান্ড-লাগোয়া দোকানমালিক। তাঁর বক্তব্য, দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরা যা কেনাকাটা করেন, তার চেয়ে খুব বেশি হলে ২০-২৫ শতাংশ বিক্রি বাড়ে। "আজ মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলে অনেক দোকান বন্ধ, কাল থেকে সব খুলে যাবে, বিক্রি ভাগাভাগি হয়ে যাবে।"

অবশ্য এই ভাগাভাগি বিক্রির জন্যেই মুখিয়ে আছেন কলকাতা তথা বাংলার পুস্তক প্রকাশক ও বই ব্যবসায়ীরা। ঝাঁ চকচকে, সুবেশ তরুণ-তরুণী কিংবা ফ্যাশনের তোয়াক্কা না-করা উলোঝুলোরা সারা বছরের বই ব্যবসায়ের ভিত গড়ে দেবেন এখান থেকেই। নিজেদের সম্বৎসরের বইখোরাকিও জুটিয়ে নেবেন তাঁরা।

Kolkata Book Fair
Advertisment