Advertisment

বইমেলা, বিভ্রম

কিছু বছর আগে বইমেলা কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার অভিযোগ তুলে, বাংলা স্টলে ইংরেজি নাম লেখা হচ্ছে বলে যাঁরা মারমুখী হয়ে ঘুরে বেড়াতেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুমধুর সম্পর্কের সুবাদে তাঁরা মঞ্চালোকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Kolkata Book Fair 2019

পড়ন্ত আলোয় বইমেলার একটেরে গলি

অনুসন্ধিৎসুরা আগের দিনই জেনে গিয়েছিলেন কবি আসবেন না। কিন্তু মেলার মাঠে তাঁর উপস্থিত থাকার কথা ঘোষিত হয়েই চলেছিল, দুপুর বেলাতেও। বেলা পড়তে দেখা গেল, আগাম খবর ঠিকই ছিল। মেলার মাঠে এমত বিভ্রম নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে দেখা গেল না খুব বেশি মানুষজনকে।

Advertisment

আরও পড়ুন, বইমেলা অবিরত, পুরনো অভ্যাস

এমত বিভ্রম অবশ্য বইমেলায় নেহাৎ নতুন নয়। কিছু বছর আগে বইমেলা কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার অভিযোগ তুলে, বাংলা স্টলে ইংরেজি নাম লেখা হচ্ছে বলে যাঁরা মারমুখী হয়ে ঘুরে বেড়াতেন, বিভিন্ন স্টলে হানা দিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা মাস্তানি সহকারেই জানিয়ে ফেলতেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাই সে বেপরোয়াপনা ছেড়ে শান্ত সুবোধ হয়েছেন- কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুমধুর সম্পর্কের সুবাদে মঞ্চালোকে এসেছেন। সেই পুরনো ময়দানি বইমেলার অভিঘাতে এখনকার দিনটিকে দেখলে বিভ্রম লাগবে।

Kolkata Book Fair 2019 স্মৃতি নির্মাণ, বইমেলার মাঠে

আসলে মেলার মাঠে যাঁরা অনেক দিন ধরে যাচ্ছেন, তাঁদের অভ্যেস হয়ে যায়। মেলার অভ্যেস। চেনা মুখের, পরিচিত মুখের অভ্যেস। চেনা নামের স্টল-টেবিলের অভ্যেস। কেউ যান বা না-যান, এ মেলার মাঠে ভাষাবন্ধনের স্টলের বাইরে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যেত নবারুণ ভট্টাচার্যকে। নতুন কারও সঙ্গে দেখা হলে, না-আলাপিত কিন্তু পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হলে তাঁর অভ্যেস ছিল স্মিত হাস্যের। কিংবা রবিশংকর বল, তাঁর ছিল লিটল ম্যাগাজিনের পাশে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমানোর অভ্যেস। মেলায় যাঁরা যেতেন, যান, তাঁদের এসব চোখের অভ্যেস তৈরি হয়ে যায়। সে অভ্যেসগুলি বদলে বদলেও যায়। প্রথম প্রথম চোখে লাগে। টের পাওয়া যায় অনুপস্থিতি। তার পর অভ্যেস হয়ে যেতে থাকে। অনুপস্থিতির অভ্যস্ততা। তেমনই বদলে যায় উপস্থিতির ধরন, উপস্থিতির মালিকানা, বা মালিকানার উপস্থিতি।

Kolkata Book Fair, 2019 ইতিউতি ভিড় জমে উঠছে

চার পাঁচ বছর আগে যাঁর মারহাব্বা উপস্থিতি দেখা যেত যে স্টলের সামনে, তাঁকেই দেখা যাবে অন্যত্র, ম্রিয়মাণ। মালিকানা বদল। চার পাঁচ বছর অবশ্য সব সময়ে লাগে না। এক বইমেলা থেকে অন্য বইমেলার ফারাকেই নির্মিত হয়ে যায় শত্রু, স্থাপিত হয় নতুন মিত্রতার। বিশ্বাস থেকে চিন্তনপদ্ধতি, পেশাদারিত্ব থেকে ব্যবহারবিধি, সবই প্রশ্নের মুখে পড়ে ফালাফালা হতে থাকে। যাঁরা এসবের বিন্দুমাত্র জানেন না, তাঁরা দেখেন বহিরঙ্গ। দেখেন এক জায়গার অনুপস্থিতি, অন্যত্র নয়া উপস্থিতি। দেখেন পুরনোর জায়গায় নতুন মুখ, নতুন জায়গায় নতুনতর চেহারা। এ সবের সঙ্গে ক্রমশ অভ্যস্ততা ঘটে।  বিভ্রমের সঙ্গেও। স্টল বদলে যায়, বদলে যায় টেবিল, একটি অক্ষরের ব্যবহার হয়ে ওঠে মেধাস্বত্বের লড়াইয়ের প্রতীক। ইতিহাস, পুরনো অভিজ্ঞতা ও স্বেদ-রক্তের স্মৃতির সঙ্গে লেপটে থাকার আকাঙ্ক্ষায় শব্দ বা অক্ষরকে সাথী করে নিয়ে গিয়ে নতুন প্রকাশন তৈরি হয় বা নতুন পত্রিকা।

জীবনের কক্ষপথ জুড়ে এই যে সব বিভ্রম তৈরি হতে থাকে, তার কেন্দ্রে থাকে বই। অক্ষর। অক্ষরপৃথিবী। তরুণ-তরুণীরা যুবক-যুবতী হয়, যুবক-যুবতীরা প্রৌঢ়ত্বে উপনীত, অক্ষর মায়া ঘিরে অতিবাহিত হতে থাকে জীবন।

Kolkata Book Fair, 2019 বইমেলা অডিটোরিয়ামে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

শঙ্খ ঘোষের সন্ধের উপস্থিতি-অনুপস্থিতিজনিত বিভ্রান্তিকে অপনোদিত করে মেলাশেষের বেলায় এসবিআই অডিটোরিয়ম মঞ্চ থেকে অনুরণিত হতে থাকে, "জগতে আনন্দেযজ্ঞে তোমার নিমন্ত্রণ"। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বিভ্রম সৃষ্টি হয়। কোনও স্বপ্নে বাঁচা মানুষের মনে হতে থাকে, এ পৃথগন্নতা ঘোর মিছে, দুর্বিসহ।

Kolkata Book Fair
Advertisment