Advertisment

ভবানীপুরের স্ট্রীট লাইব্রেরী: যেখানে পথের ধারেই বইয়ের বাসা

বই চুরি দূরস্থান, বরং পাড়ার লোক পাঁজাকোলা করে তাঁদের বহুবার পড়া, অথবা বাড়িতে পড়ে থাকা পুরোনো বই এনে দান করে যাচ্ছেন ভালবেসে। এভাবেই বেড়েছে প্রাপ্তির ভাণ্ডার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
street library

নন্টে ফন্টে থেকে সিডনি সেলডমের সম্ভারের লাইব্রেরী

অরুণিমা কর্মকার

Advertisment

নেতাজী ভবন মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে রামমোহন দত্ত রোড দিয়ে নর্দার্ন পার্কের দিকে সোজা হেঁটে গেলেই চোখে পড়বে এক বিচিত্র দৃশ্য। নটা-ছটার ব্যস্ত অফিস যাত্রীরা ছুটছেন রাস্তার দুপাশ দিয়ে। পাড়ার সদা ব্যস্ত ফুটপাথ। আর এসবের মাঝে দিব্য জায়গা বানিয়ে নিয়েছে একরাশ পুরোনো বই, চারদিক আমোদিত করে রেখেছে সেই অতি পরিচিত পুরোনো ছাপার অক্ষরের গন্ধে। ফুটপাথের ওপর কয়েক হাত জায়গা জুড়ে বুক শেলফ-এ থাক থাক করে রাখা রয়েছে বই। এক ঝলকে মনে হতে পারে বইয়ের দোকান। কিন্তু দোকান নয়, লাইব্রেরী। নন্টে ফন্টে থেকে সিডনি শেলডনের সম্ভারের লাইব্রেরী। নামটা সাদামাটা -  'স্ট্রীট লাইব্রেরী'। বিষয়টা কিন্তু আদৌ সাদামাটা নয়।

publive-image

বই পাড়ায় যেসব বইপোকাদের নিত্য যাতায়াত, তাঁরা সময় করে একবার ঢুঁ মারতে পারেন এখানেও। আট থেকে আশি, সকলেই বই বের করে নিয়ে পড়তে পারেন এখানে দাঁড়িয়ে, বিনামূল্যেই। বা ইচ্ছা হলে অনুমতি ছাড়াই বাড়িও নিয়ে যেতে পারে যেকোন বই। অবাক হলেন নিশ্চয়ই। ভাবলেন, এ আবার কী, যে কেউ যখন তখন কী করে একটা লাইব্রেরী থেকে বই তুলে নিয়ে যেতে পারে?

উত্তর দিলেন লাইব্রেরীর অন্যতম উদ্যোক্তা, এলাকার তৃনমূল কংগ্রেস কাউন্সিলার অসীম বসু। তাঁর কথায়, "বই কেন চুরি করে মানুষ? পড়ার জন্যই তো? এতে তো জ্ঞানই বাড়বে সবার, সেটাই আমাদের প্রাপ্তি। আর তা না হলে বড়জোর ঠোঙা বানাবে, এর বেশি আর কী হবে?"

এই মনোভাবে কিন্তু লাভই হয়েছে আখেরে। বই চুরি দূরস্থান, বরং পাড়ার লোক পাঁজাকোলা করে তাঁদের বহুবার পড়া, অথবা বাড়িতে পড়ে থাকা পুরোনো বই এনে দান করে যাচ্ছেন ভালবেসে। এভাবেই বেড়েছে প্রাপ্তির ভাণ্ডার। এ ছাড়াও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন আরও অনেকেই। যেমন, দিনে বহুবার অগোছালো হয়ে যাওয়া বইয়ের তাকগুলি কাজের ফাঁকে এসে গুছিয়ে দিয়ে যান পাশের বিদ্যাঞ্জলি স্কুলের দিদিমণিরা।

অন্যন্য লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে পড়া মানেই তার মধ্যে হাজার রকম বিধিনিয়ম। এই স্ট্রীট লাইব্রেরীতে যার রেশমাত্র নেই। সবচেয়ে বড় কথা, নেই কোন মেম্বারশিপ ফি। টিনের ছাদের নিচের দেওয়ালে তাক করে রাখা রয়েছে বই। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে দেওয়া হয়েছে সামান্য প্লাস্টিকের আস্তরণ। সবাইকে বই পড়তে দাও, এই স্লোগান মাথায় রেখেই তালাবন্দী বা চোখ রাঙানোর বেড়াজাল নেই আদৌ। মোদ্দা কথা হলো, সকলে সহজেই বই বের করে পড়তে পারেন, ব্যস।

publive-image

এবছরের ৬ মে কলকাতা আইলিড সংস্থার প্রদীপ চোপড়া এবং অসীমবাবু ও বিদ্যাঞ্জলি স্কুলের মিলিত উদ্যোগে চালু করা হয় এই লাইব্রেরী। অসীমবাবুর মতে, বই পড়ার কোন বয়স নেই, বই পড়লে মানসিকতার পরিবর্তন হয়। এবং সাধারণভাবে, বাড়িতে অনেক বই থাকে যা আমাদের পড়া হয়ে যায়। সেগুলি আমাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠলেও পড়তে ইচ্ছুক থাকতে পারেন অনেকে। তাঁদের পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এই লাইব্রেরী।

পৃথিবীতে এমন অনেক শহর আছে যেখানে স্ট্রীট লাইব্রেরী ব্যাপারটা যথেষ্ট জনপ্রিয়। যদিও আজকের PDF ডাউনলোড এবং মোবাইলে বই পড়ার যুগে হয়ত ছাপা বইয়ের কদর কিছুটা ম্লান হয়েছে। তবুও, এই লাইব্রেরীতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বুঝবেন, নিজের হাতে নিয়ে ছাপার অক্ষরে বই পড়ার নেশা আজও কতটা প্রবল, এই প্রযুক্তি-অধ্যুষিত যুগেও।

আরও পড়ুন: সেবন্তী ঘোষের তিনটি কবিতা

উপন্যাস থেকে শুরু করে ছোট গল্প, কম্পিটিটিভ পরীক্ষার বই, সবই পাওয়া যায় স্ট্রীট লাইব্রেরীতে। একটাই কথা, ভারী বর্ষার মরসুমে সমস্যা হতে পারে তাই মুষলধারে বৃষ্টি হলে বিদ্যাঞ্জলি স্কুলে বইগুলি তুলে রাখা হবে, এই যা।

শুনলেন তো অন্য এক লাইব্রেরীর কথা? ফুরসতে একবার ঘুরে আসতেই পারেন, আর ইচ্ছে হলে আপনার বাড়ির বইয়ের তাকের ধুলোপড়া বইগুলো ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করে ব্যাগে ভরে নিয়ে যেতে পারেন এই লাইব্রেরীকে ভালবেসেই।

publive-imagepublive-image

kolkata street
Advertisment