Advertisment

দিব্যেন্দু পালিত: স্মরণ ও শরণ

সবসময়ে মনে হয়েছে দিব্যেন্দু পালিতের কবিতাগুলি, মূলত গল্পের বা উপন্যাসের প্রাথমিক খসড়া। একান্তই আমার ব্যক্তিগত ধারণা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দিব্যেন্দু পালিত (১৯৩৯-২০১৯)

অনেক চমকানো শিরোনাম হয়। গলা-বুজে-আসা। চোখের-জল-ফেলা। কিন্তু এই মানুষটি, দিব্যেন্দু পালিত, কবি, গদ্যকার এতকিছু শিরোপা নিয়ে বিজ্ঞাপনজগতে বসবাস করতেন। ফলে তাঁর লেখা ছিল বাহুল্যবর্জিত। সেজন্যই শুরুতে ফিরে গিয়ে এই নিবেদনটির বিজ্ঞাপনসম্মত 'টু দ্য পয়েন্ট' শিরোনাম আমিও দিলাম!
প্রথমে, দূর থেকে দেখতাম।আমি ক্ল্যারিয়নে বিজ্ঞাপনের কপি লিখি তখন। আমাদের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর আমি কবিতা লিখি বলে খুব শঙ্কায় থাকতেন। সারাক্ষণ কানের কাছে বলে যেতেন, 'আঁটোসাঁটো কপি লিখবে।' বিজ্ঞাপনী সুবাদে দিব্যেন্দুদাকে দেখলেও, তাঁর লেখা তো ঢের আগেই টেনে নিয়েছে আমাকে। কবি। ঔপন্যাসিক। গল্পকার। হ্যাঁ, মেদবর্জিত সে-সব লেখা।
স্মরণ একটু অগোছালো, এলোমেলো হয়। তাই আগের কথা পরে, পরের কথা আগে চলে আসছে। মনে পড়ে যাচ্ছে আমার বিয়ের পর কোনও এক অনুষ্ঠানে আমার স্বামী দিব্যেন্দুদা ও বৌদির সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিতে যাচ্ছেন, দিব্যেন্দুদা পেছন ফিরে ওঁর এক  বিশেষ ধরনের ঠোঁট-টেপা হাসি হেসে বললেন, 'ওকে আমি খুব চিনি। স্নেহও করি।' সেই স্নেহ থেকে গেছে বরাবর। আমার স্বভাববশত আমি এড়িয়ে চলেছি অনেকসময়ে, উনি নিজেই এগিয়ে এসে হাত চেপে ধরে জানতে চেয়েছেন, 'ব্যাপারটা কী?'
কত অসুবিধার সময় মেঘমল্লার গেছি দিব্যেন্দুদার কাছে। সে এক সমস্যা হয়, আমাকে খাওয়ানো নিয়ে! বৌদি প্লেট-উপচোনো খাবার ধরে দেবেন আর আমিও চেঁচাব, 'ডাক্তারের বারণ'! অংশত, আশ্রয় ছিলেন আমার।

Advertisment

আরও পড়ুন, তাড়াতাড়ি ফিরো, পিনাকীদা 

দিব্যেন্দু পালিতের একটা কবিতা। নাম, আত্মীয়।
কাল রাতে ঝড় এসে ঢুকেছিল পরিচিত ঘরে।/ লোকেন ছিল না। তার জার্নালের পাতা কটি উড়ছে হাওয়ায়;/ সেলফে যে সব বই ব্যবহৃত, ব্যবহার হবে বলে এসেছিল, সব,/ দেয়ালে যৌবন: তিনটি পেরেকের মাতন দেখেছে;/ চিবুকের কাছে এসে কম্পিত অধর যেন শঙ্কিত নীরব।/ লোকেন ছিল না।তার স্বরলিপিলেখা খাতাখানি/ রবীন্দ্রনাথের দিকে চোখ চেয়ে খাঁ -খাঁ শূন্যতাকে/ ঢাকবার ব্যর্থতায় একবার শুধু কেঁপেছিল।/ ধূর্ত টিকটিকি তার বান্ধবীর কাছাকাছি গিয়ে/ জ্যোৎস্নার আলোয় কিছু ভয় পেয়ে দূরত্বে পালাল।/ পর্দার কাঁপন দেখে মনে হয় যেন কেউ এইমাত্র আসবে এই ঘরে:/ মহাশ্বেতা কিংবা আরো অনায়াস, পরিচিত নাম।/ লোকেন ছিল না। তার একপাটি জুতো,/ কিংবা পাঞ্জাবির ঝুল একপাশে বেশি কাত হয়ে-/ স্থির থেকে স্থিরতর হয়ে-/ সময়ের কাছে গিয়ে অবশেষে নির্জনতা হল।/ গায়ের চাদর ফেলে পা টিপে পা টিপে/ মন্দিরের গদি থেকে একটি গভীর পাপ আস্তে উঠে এল।
জানি না কেন, আমার সবসময়ে মনে হয়েছে দিব্যেন্দু পালিতের কবিতাগুলি, মূলত গল্পের বা উপন্যাসের প্রাথমিক খসড়া। একান্তই আমার ব্যক্তিগত ধারণা। কিন্তু এই যে কবিতা, এর মধ্যে আমি এক রহস্য গল্পের সংকেত পাই। ওঁর কবিতায় এলিয়ে-পড়া শব্দ তো থাকেই না, যা থাকে সবই যেন অমোঘ! গদ্যপথগামী যেন এসব লেখা।তারপরই নেমে আসবে ভয়ঙ্কর হিমশীতল ও মেধাবি একের পর এক গল্প, উপন্যাস...। মনস্তাত্ত্বিক কাটাকুটি, প্রেম বেয়ে অপ্রেমের ক্ষয়, স্মার্ট বুনন, কী নেই সেখানে! 'ঢেউ' বড় মনে পড়ে। অ্যাডওয়ার্ল্ডের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা, ডিপ্রেশন, সাদাকালোতে ভরপুর সেই আপাত রঙিন জগৎ। দুর্দান্ত লেখাটি!

Bengali Literature
Advertisment