Advertisment

অরুণাচল দত্ত চৌধুরীর এক গুচ্ছ কবিতা

পেশায় চিকিৎসক অরুণাচল দত্তচৌধুরী নতুন উদ্যমে লেখা শুরু করেছেন ২০০৪ সালে, পরবর্তী প্রজন্মের উৎসাহে লেখার নতুন ঠিকানা ইন্টারনেটের সন্ধান পেয়ে। এবার তাঁর কবিতাগুচ্ছ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- অরিত্র দে

সন্ধি প্রস্তাব

Advertisment

মিরিক মানে মনখারাপ এক লেকের ধারে

একটু ঝুঁকে দেখছ ছায়া কোন পাহাড়ের?

সেই সময়েই পাহাড়টাতে… নির্বাসনে

তোমার চেনা মেঘ গিয়েছে আপনমনে।

নজর করলে দেখতে পাচ্ছো তার ছায়া কি!

কেনই বা সে ডিউটিতে তার দিচ্ছে ফাঁকি?

তার কি এখন তোমার পাশে থাকতে মানা?

কিম্বা তুমিই ভুল করেছ তার ঠিকানা!

দরকার নেই এমনতর  বিষাদবেলা

মিটিয়ে ফ্যালো তার সঙ্গে ঝুটঝামেলা।

পরস্পরের মুখ দ্যাখো না। বাক্যহারা।

ঝগড়া আছে। থাকুক সে’টা। নেই তো তাড়া।

এগিয়ে এসো। চোখ গেলে দাও। পাকড়ে ঝুঁটি

মেঘকে ছেঁড়ো। গায় ঘসে দাও জলবিছুটি।

বৃষ্টি হয়ে ঝরুক সে মেঘ তোমার হাতে।

সঙ্গী বাছাই সমাপ্ত হোক বজ্রপাতে।

প্রীতিময়

প্রীতিময় মজুমদার স্যার আপনি কেমন আছেন?

আজ বহুদিন পরে আপনাকে মনে পড়ে গেল

কেমিস্ট্রি অনার্সের সুতপারা

আপনাকে বলত ভীতিময় স্যার,

খুব কড়াকড়ি ছিল আপনার ক্লাসে

সংক্ষেপে পি.এম বলে পোস্টমর্টেমও ডাকত ওরা কেউ কেউ

আমরা তো পাস কোর্স, সে’রকম ভয়ডর কিছুই ছিল না

বরঞ্চ প্রেম ছিল,

অসঙ্গত কিছু নয়, তেমনই বয়স

আপনিও রূপবান, টল ডার্ক হ্যান্ডসাম,

দোষের মধ্যে দোষ…কেমিস্ট্রির ফরমুলা শোভিত।

তার মধ্যে, বলতে নেই একমাত্র আমিই

কিঞ্চিৎ ডানপিটে আর রেজিস্টার্ড পাগলিনী বলে

ইকোয়েশনের ধাঁচে স্বকপোলকল্পিত এক প্রেমপত্র সে’টি,

সবাইকে চ্যালেঞ্জ করে লিখে ফেলা গেল।

কী ছিল সে’খানে লেখা?

আপনি কিম্বা আমি আজও কাউকে বলিনি।

মাত্র ছ’মাসের মধ্যে আপনি বিলেতে

বেশরম আমি গেছি যথাকালে ছাদনাতলায়

আজ স্যার মিথ্যে বলব না

নিরীহ বরের পাশে শুয়ে থেকে

আপনাকে ভেবেছি রোজ মধুচন্দ্রিমায়

আজ আমি একমাত্র কন্যার খাতায়

অবিকল যেন সেই আশ্চর্য ইকোয়েশন দেখলাম ফের

আপনি কি ফিরে এসেছেন?

আপনার মুখ ভেবে গর্ভে আসা

আমার এই মেয়েটা কি আপনারই মানস সন্তান?

আরও পড়ুন, Literature: তুষ্টি ভট্টাচার্যের কবিতা

.

আলো ছায়া

আমাদের ছায়াগুলো অপরাধীর চোখে

তাদের দ্বিতীয় মাত্রার পৃথিবী থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে

যেন  মাত্রাহীনতার সমস্ত দোষ তাদেরই

তাকায় কিনা তা’ও বোঝা যায় না ঠিক

চোখ মুখ অবয়ব তো স্পষ্ট করে দিইনি কিছুই

আসলে, দোষ আমাদেরই

কেউ কেউ পারে

একসাথে বন্যার তোড়ে সমস্ত কবিতাটা তারা লিখে ফেলে,

সমস্ত চিত্রকল্প বিরতিবিহীন

আমরা কিন্তু এক লাইন লিখে

পরের লাইনের জন্য ছিপ ফেলে বসে থাকি

জল স্থল, মাঠ ঘাট নর্দমা ও ঘর

আলো জ্বেলে তছনছ করে ফেলি শব্দের আশায়

আমরা ঠিক সময়ে আলো নিবিয়ে দিলে

নিজেরাই ছায়া হয়ে গিয়ে

অসহায় ছায়াদের হয়তো বাঁচাতে পারতাম

আরও পড়ুন, সুমন মান্নার দুটি কবিতা

মুদ্রারাক্ষস 

প্রাচীন মুদ্রার মত, প্রত্নরূপ ভালোবাসা,

বিনিময়ে মূল্যহীন কিন্তু জাদুঘরে অমূল্য স্মারক…

এই সংসার খুঁড়ে তোমাকে পেয়েছি

আমাদের ব্যাকরণে পুরোটাই দ্বন্দ্ব সমাস

আদতে যেটার কোনও ব্যাসবাক্য নেই

আশ্চর্য হবার মত বিলাসিতাময় শব্দ ছিলো না কখনও

আলো ক্রমে নিভে আসছে আমাদের সরাইখানায়

সুখদুঃখের পিয়ানোরিডের ওপর সময় দ্রুত আঙুল বোলায়

বিষাদ ভোলানো এক হাওয়া আসে কখনও ঝলকে

উড়ে যায় বিষাদের চিঠি

মূল্যহীন জেনে তবু

আমরা মুদ্রা সংগ্রহ করি অপার আগ্রহে

এই বিনিময়টুকু এ'টুকুই জীবন মরণ

মুদ্রাটির গায়ে লেগে থাকে

ধুলোমাটি… ইতিহাস… বিধিবদ্ধ বিস্মরণ সতর্কীকরণ।

Bengali Literature bengali poetry
Advertisment