Advertisment

বেবী সাউয়ের কবিতা

এ যাবৎ প্রকাশিত চারটি বইয়ে বেবী সাউয়ের কবিতাদের নজরকাড়ার কথা মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন তাঁর সাধারণ পাঠক থেকে কবিপাঠকরাও। আজ তাঁর 'শত্রুর আলজিভ' সিরিজের দশটি কবিতা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- অরিত্র দে

এক 

Advertisment

শুকনো কাঠ

গাছের ডাল নিয়ে যেসব মানুষজন

হেঁটে আসছে যুগযুগান্তের

বনবাদাড় পেরিয়ে

বিপরীতে

তাদের ছায়া দীর্ঘ...

দুই 

শুধু এই অপরাহ্ন পেরোনো হাওয়া

ধীরে ধীরে কালবৈশাখীর রূপ নেবে

কে ভাবতে পেরেছিল!

অথচ, দশহাজার বছরের পুরনো

দীর্ঘশ্বাস এবং জমে থাকা ভূগর্ভস্থ ঘিলুর ছবি,

শুকনো পাতার ঢেকে যাওয়া পথসারি

বেয়ে

কখন যে লুপ্তকার ইতিহাসের মতো

মেতে উঠেছে খেলায়...

আর তার চারপাশে বয়ে আনা জলস্রোত দেখে তরুণীরা

গড়িয়ে পড়ছে খিলখিল হাসিতে

তিন

সবে মাত্র কৃষির কাজ শেষ করে

আমি বাড়ি ফিরছি

এখনও কোদাল এবং খুপরিতে লেগে আছে কেঁচোদের ঘ্রাণ,

আহত ঘাসের পাতা উপেক্ষা করছে  স্মৃতিবিজড়িত  হত্যাস্থল

মিইয়ে পড়া সমস্ত ন্যায় এবং নীতিবোধ

নিয়ে ভেসে যাওয়া নিরুদ্দিষ্ট

তিব্বতী লামার সেই ছেলে

কখনও যাদের সঙ্গে (সম্ভবত)

সাক্ষাৎ হবে না ভেবে

অপ্রস্তুত আমি

আজ অব্দি কোনও বিজ্ঞানসম্মত

জবাবদিহি প্রস্তুত করে উঠতে পারিনি

চার

সোনার খোঁজে পাথরবাটি

গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ল যখন

গ্রাম ডিঙিয়ে শহর ভেঙে

অসংখ্যক কালপুরুষ নক্ষত্রের ছায়া ফুটে উঠল রান্নাঘরে

পূর্বজ্ঞান সম্বল করে অপরিচিত অতিথিদের

এগিয়ে দিলাম

পা ধোয়ার জল

ফুল বাতাসা, তিলের নাড়ু

তারা অভিজ্ঞতা স্বরূপ তুলে দিল

সুদূর নক্ষত্রালোকের ছাই ভস্ম

ভবতারিণীর ক্ষয়ে যাওয়া মুখ নাকের ছবি

এরপরে যা যা ঘটল পরবর্তী

চিঠিতে জানাবো...

পাঁচ 

এসব কথা বহু পূর্বকাল থেকে

মুখে মুখে ফেরে...

অথচ সেভাবে কোনও স্পৃহা না থাকায়

বালিয়াড়ির খাদে কোনও অকালের জীবাশ্মকে সাক্ষী মেনে

আমাদের বিবাহকে সুদৃঢ় করা হল

হাততালি এবং গালগল্পে ভরে গেল

পেয়ালার শ্যাম্পেন

অসংখ্য ফ্ল্যাশ লাইটের তীব্রতা

ঘন নিশ্বাসে আমরা সেই বিছানাটির অপেক্ষা করলাম

একটা কঙ্কাল ব্যতীত ওখানে

কিছু অবশিষ্ট ছিল না

ছয় 

আমাদের পথটুকু বেঁকে গেছে

নিগ্রো বালকের উঠোনের দিকে

তোমার পলক এসে লাগে

ভিজে ওঠে ঘর আসবাব

সমস্ত জমানো নদী একদিন বানভাসি হবে ভেবে

ঢুকে পড়ে মৃতের গুহায়

নিশি তাকে হাহাকার মুখস্থ করায়

সাত

কাকে বলি মৃত- তারাদের কথা---

কীভাবে জমানো জল খাত ভেঙে নীচে নেমে গেছে

তারও তো অসুখ বড়

ঘুমের ওষুধে চোখ

যত বলি উঠে পড়

হাত-মুখ ধুয়ে খেয়ে নাও

ভাতের গরম

অথচ পথিক ভেবে নিজেকেই করে তোলে ভ্রমণ প্রবণ

আজ তবে তারও কী ডানাটি গজালো

কেটে ফেল... কেটে ফেল...

আট

শিশুরা হলুদ ফুল

ছক ছক কেটে এঁকে রাখে বাঘ আর ছাগলের গল্প

কুড়িটি ছাগল তার কয়েকটি বাঘ

যুদ্ধ করতে করতে

একে অপরের প্রতি যখন তীর্যক তীব্র দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়ায় আঁধারে,

শিশুরাও নিপুণ সমস্ত খেলা ফেলে দৌড়ে

মায়েদের কাছে বলে -'খেতে দাও'

এটাকেই লর্ড রিপন সন্ধিপত্রের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন

নয় 

আসলে একটি মাত্র কারণে

কোনও হত্যা

কখনও সফল নয়

অসংখ্য ছলনা এবং শত্রু-গন্ধ শুকতে শুকতে

ব্যাঙের ছাতার কথা

মৃত প্রজাপতি আর ডানাহীন শ্রীমতীকে

মনে পড়ে

ততক্ষণে একটা কাটা জিভ

আড়ালে সমস্ত কথা শুনে ফেলে আর

কোনও ব্যাখ্যা মজুত না থাকার ফলস্বরূপ

কালো রঙের সাহায্য নেয়

এই জন্ম নেওয়া অক্ষরের পিতা হিসেবে কবিকে চিহ্নিত করতে পারো

দশ 

দীর্ঘ অবসরের ক্লান্তি ভেঙে

মধ্যিখানে জ্বলতে থাকা আগুন

জড়িত অশ্বত্থ এবং

লতাগুল্মাদির নীচে

সভা বসেছে...

কলবরের অধিক সেই

পবিত্র স্থলে চিনে নেওয়া শত্রুর আলজিভ, জড়তা, ক্ষণভঙ্গুরতা ইত্যাদি

আমি সেই অদ্বিতীয় ভিক্ষুক

দীর্ঘদিন আর্তনাদে থাকার পর

আজ তার পুরস্কার স্বরূপ

মৃত্যু দণ্ড ঘোষিত হবে

bengali poetry Bengali Literature
Advertisment